হাসিনার আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান, বিএনপির হরতাল থাকছে

দেশজুড়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে বহুল আলোচিত টেলিফোন আলোচনায় দেয়া প্রধানমন্ত্রীর সোমবারের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Oct 2013, 01:46 PM
Updated : 26 Oct 2013, 03:47 PM

শনিবারের মধ্যে সংলাপের উদ্যোগ নেয়া না হলে আগামী তিন দিনের হরতালের ঘোষণা দেয়া হলেও এখন এই কর্মসূচির পর আলোচনায় বসতে চেয়েছে তারা।

তবে সরকারের পক্ষ থেকে নির্দলীয় সরকারের দাবি নীতিগতভাবে মানার ঘোষণা দেয়া হলে সব কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হবে, বলেছেন বিরোধীদলীয় নেতার প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান।

শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার টেলিফোন আলোচনার পর সাংবাদিকদের একথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর টেলিফোন পেয়ে ৩৭ মিনিট কথা বলার সময় বিএনপি চেয়ারপারসনের পাশে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে মারুফ কামালও ছিলেন।

নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলন বিএনপিকে নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারের প্রস্তাব দেন প্রধানমন্ত্রী।

এক সপ্তাহের বেশি সময় আগে দেয়া ওই প্রস্তাব গ্রহণ না করে বিএনপি চেয়ারপারসন নির্দলীয় সরকারের রূপরেখা দিয়ে তা নিয়ে আলোচনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।   

আলোচনার জন্য চিঠি পাঠানোর পর দশম সংসদ নির্বাচনের দিন গণনার শুরুতে শুক্রবার জনসভায় বক্তব্যে সরকারকে শনিবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন বিরোধী নেত্রী। এর একদিন বাদেই প্রধানমন্ত্রীর ফোন পান তিনি।

হরতাল প্রত্যাহারে প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধের জবাবে তাকে বিরোধীদলীয় নেতা বলেছেন, এটা ১৮ দলীয় জোটের কর্মসূচি বলে এই মুহূর্তে সিদ্ধান্ত বদলানো সহজ নয়।

মারুফ কামাল বলেন, “বিরোধীদলীয় নেতা প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন, হরতালের কর্মসূচি ১৮ দলীয় জোটের সিদ্ধান্ত। জোট নেতারা পুলিশের তাড়া খেয়ে বর্তমানে বিচ্ছিন্নভাবে অবস্থান করছেন। এই সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে তাদের একসঙ্গে করে সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব নয়।

“বিরোধীদলীয় নেতা এটাও বলেন, আপনি (প্রধানমন্ত্রী) যদি এই টেলিফোনটি গতকাল (শুক্রবার) করতেন, তাহলে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেয়া যেত। এখন আমার একার পক্ষে হরতাল কর্মসূচি প্রত্যাহার সম্ভব নয়।”

“নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন হবে- এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নীতিগতভাবে সম্মত হলে তাহলে ঘোষিত হরতাল কর্মসূচি স্থগিত করা হবে বলে জানিয়েছেন বিরোধী নেত্রী,”  বলেন প্রেসসচিব।

২৮ অক্টোবর গণভবনে যাওয়ার প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণ পেয়ে বিরোধীদলীয় নেতা আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকে বলেছেন, “ওই দিন হরতাল কর্মসূচি থাকবে। ২৯ অক্টোবর সন্ধ্যার পর যে কোনো সময়ে আলোচনার জন্য আপনি ডাকলে তাতে আমি সাড়া দেব।”

সমঝোতার বিষয়ে তিনি খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন, “আপনি সর্বদলীয় সরকারের প্রস্তাব দিয়েছেন। আমি নির্দলীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একটি প্রস্তাব দিয়েছি। এই দুটি প্রস্তাব সমন্বয় করে সমঝোতা হতে পারে বলে আমি মনে করি।”

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোন আসার সম্ভাবনায় সন্ধ্যায় গুলশানের বাড়িতে অপেক্ষায় ছিলেন বিরোধী নেত্রী। কথা বলার পর রাত ৯টার দিকে তিনি গুলশানের কার্যালয়ে যান।

পরস্পরবিরোধী অভিযোগ না করে সংলাপের মধ্যদিয়ে জাতির জীবনে সঙ্কট দূর করতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন খালেদা জিয়া। 

“আমরা অতীতকে ভুলে নতুন ধারার রাজনীতিতে যেতে চাই। আমরা এই ধারার ফ্রেশ স্টার্ট করতে চাই।”

প্রধানমন্ত্রীর দেয়া সর্বদলীয় প্রস্তাব সম্পর্কে বিরোধীদলীয় নেতা কী বলেছেন- জানতে চাইলে প্রেসসচিব বলেন, “প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আপনারা সর্বদলীয় প্রস্তাব মেনে নিন। জবাবে বিরোধীদলীয় নেতা বলেছেন, আপনি যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তা জাতির কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।”

বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে টেলিফোনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিএমও

দুপুরে প্রধানমন্ত্রী টেলিফোন করলেও বিরোধীদলীয় নেতাকে না পাওয়ার কথা জানান। পরে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, টেলিফোনটি বিকল।

বিরোধীদলীয় নেতা বলেছেন, “এই লাল টেলিফোনটি দীর্ঘদিন ধরে বিকল পড়ে আছে। বারবার অভিযোগ করলেও তা সচল করা হয়নি। আজ  সংবাদকর্মীদের ডেকে তা দেখানো হয়েছে। এই টেলিফোনটি মৃত, কোনো সাড়া শব্দ নেই।

“আপনি যদি আন্তরিকভাবে আমার সঙ্গে দিনে বা গতকাল রাতে কথা বলতে চাইতেন, তাহলে আজকের যুগে অনেক মাধ্যম আছে, তা দিয়ে করতে পারতেন। যে মাধ্যম দিয়ে আপনার স্টাফরা আমার স্টাফদের সঙ্গে কথা বলেছেন। আপনি সারা দিন এক লাল টেলিফোনে চেষ্টা করেছেন, তা ঠিক হয়নি।”

“টেলিফোন বিভাগের একজন কর্মচারী আমার লাল টেলিফোন সচল আছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়ে এক ধরনের রাজনৈতিক প্রচারণার চেষ্টা করেছেন। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন,তা আমি দেখতে চাই।”

বিরোধীদলীয় নেতার বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের মোবাইল টেলিফোনে প্রধানমন্ত্রীর এডিসির মোবাইল ফোন থেকে কল  করা হয়। তার পর  দুটি ফোনে কথা বলেন দুই নেত্রী।

টেলিফোনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন,“ফোন ডেড, না কি ডেড করে রাখা হয়েছে, বলতে পারছি না। আগামীকাল আমি দেখব।”

বিরোধীদলীয় নেতা আলোচনায় জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন, “গণতান্ত্রিক বিভিন্ন আন্দোলনে আমরা অতীতে একসঙ্গে কাজ করেছি। আপনার (শেখ হাসিনা) বাসায় গেছি। আজ  জাতির সঙ্কট মুহূর্তে জাতীয় ইস্যুতে আমরা এক সঙ্গে কাজ করতে চাই।”

বিরোধীদলীয় নেতার প্রেসসচিব দুই নেত্রীর সঙ্গে টেলিফোনের আলাপকে শুভ সূচনা অভিহিত করে বলেন, “আমরা প্রত্যাশা করি, আলোচনার যে সূচনা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী সংলাপ করে তাকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।”

বৈঠকের পর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “আজকের দিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আজ বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে যুগান্তকারী ঘটনা ঘটেছে।”