নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়োগে সার্চ কমিটি গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতির সংলাপে গেলেও সার্চ কমিটি গঠন নিয়ে কোনো কথাই হয়নি বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) নেতারা।
Published : 26 Dec 2021, 06:33 PM
সংলাপ শেষে রোববার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনের সামনে দলটির কার্যকরী সভাপতি আইভি আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, “সার্চ কমিটি গঠনে আমাদের কাছে কোনো নামও চায়নি। তাই আমরাও কোনো নাম প্রস্তাব করিনি। সার্চ কমিটি নিয়ে আমাদের সঙ্গে কোনো কথা হয়নি।”
ন্যাপের ভারপ্রাপ্ত সাধরণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বলেন, “আমাদের সঙ্গে সার্চ কমিটি গঠন নিয়ে কথা বললে তো নাম দেব, নাম চাইলে তো নাম দেব। আমাদের সঙ্গে এ নিয়ে কোনো কথা হয়নি, নামও চায়নি।”
কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসির বিদায়ের সময় ঘনিয়ে আসায় নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। গত ২০ এই সংলাপ শুরু হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে এখনও কোনো আইন না হওয়ার মধ্যে গত দুই বারের মতো এবারও সার্চ কমিটি করে ইসি নিয়োগ হচ্ছে।
আগের দুই বার রাষ্ট্রপতি দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে নামের প্রস্তাব নিয়ে তাদের মধ্য থেকে কয়েকজনকে নিয়ে সার্চ কমিটি গঠন করেন। সেই সার্চ কমিটি পরে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে নামের প্রস্তাব রাষ্ট্রপতিকে দেন। সেই নামগুলো থেকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেন। এবার ১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে রাষ্ট্রপতিকে এই নিয়োগ সম্পন্ন করতে হবে।
সার্চ কমিটি নিয়ে আলোচনা না হলে কী নিয়ে কথা হয়েছে- জানতে চাইলে ন্যাপের কার্যকরী সভাপতি আইভি বলেন, “নির্বাচন কমিশন গঠনে আমরা আইন করার প্রস্তাব দিয়েছি রাষ্ট্রপতিকে। সরকার থেকেই উদ্যোগ নিতে হবে। আইন প্রণয়ন করতে হবে। ভোটধিকার প্রয়োগের জন্য আমরা সবাই যেন ভোট কেন্দ্রে যেতে পারি। সেখানে যেন কোনও মন্ত্রী-এমপি প্রভাব খাটাতে না পারে। এই ধরনের প্রস্তাবগুলো আমরা দিয়েছি।”
আইন ছাড়া নির্বাচন কমিশন গঠন হলে ন্যাপ সেটা মেনে নেবে কি না, প্রশ্ন রাখা হয় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট শরিক ন্যাপের নেতাকে।
জবাবে আইভি বলেন, “এটা যখন কমিশন গঠন হবে, তখনকার বিষয়। তখন ইসি কী ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে, জনগণ ভোট দিতে যেতে পারছে কি না, ভোট কেন্দ্রের পরিবেশ ঠিক রাখতে পারছে কি না, সেটার ওপর নির্ভর করছে।”
ন্যাপ নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে যে লিখিত প্রস্তাব দিয়েছে, সেখানে সার্চ কমিটি গঠনের বিরোধিতা করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতির কাছে দেওয়া লিখিত প্রস্তাবে ন্যাপ বলেছে, ২০১৩ সালে গঠিত কাজী রকিব উদ্দিন আহমদের নির্বাচন কমিশন, ২০১৮ সালে গঠিত কে এম নুরুল হুদা নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনগুলোর ‘অভিজ্ঞতা সুখকর নয়’।
“প্রায় প্রতিটি নির্বাচনে যথেচ্ছ টাকার ব্যবহার, অস্ত্রের মহড়া, ভোট কেন্দ্রের বুথ দখল ও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচন কমিশন এসব অঘটনের প্রতিকারের বিষয়ে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। তবুও সরকারের পক্ষ থেকে সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে আবারো ইসি গঠনের কথা বলা হয়েছে। সার্চ কমিটির মাধ্যমে ইতোপূর্বে যে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছিল,এমন নির্বাচন কমিশন আমরা চাই না।”
আপনার কি তাহলে সার্চ কমিটির বিপক্ষে- জানতে চাইলে আইভি বলেন, “আমরা বলছি, আইন করতে হবে। সার্চ কমিটির পক্ষে না, বিপক্ষেও না।”
ন্যাপের প্রস্তাবের বিষয়ে রাষ্ট্রপতি কী বলেছেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “তিনি বলেছেন, আপনারা আমার ক্ষমতা সম্পর্কে জানেন। ফলে, আমি আমার ক্ষমতার মধ্যে থেকে জনগণের যে দাবি, আপনাদের যে দাবি তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এখন উনি কতটুকু করবেন, সেটা আমরা ভবিষ্যতে দেখব, বুঝব। এর আগে তো কিছু বলব না।”
ন্যাপের ভারপ্রাপ্ত সাধরণ সম্পাদক ইসমাইল বলেন, “আজকে সংলাপের বিষয় ছিলো নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে। সার্চ কমিটি গঠন নিয়ে সংলাপ ছিল না। নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে যে বির্তক, তা নিরসন করতে আইন প্রণয়ন করতে হবে। আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়ে সময় পাচ্ছি না, এই এক ধরনের কথা। আর আইনের উদ্যোগ না নিয়ে সময় পাচ্ছি না, এটা আরেক ধরনের কথা। আমরা মনে করি, আইন প্রণয়নে এখনি উদ্যোগ নেওয়া উচিৎ।”
রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের জানান, “বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির দায়িত্বপ্রাপ্ত কার্যকরী সভাপতি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনে ৭ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রস্তাবনাসমূহ হলো, সংবিধানের ১১৮(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়ন। দক্ষ, সৎ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন এবং নির্বাচন কমিশনকে একটি জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা।
“রাষ্ট্রপতি বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠন একটি সাংবিধানিক দায়িত্ব। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনই এ আলোচনার মূল উদ্দেশ্য। রাষ্ট্রপতি আশা করেন, পর্যায়ক্রমে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনার ভিত্তিতে একটি গ্রহণযোগ্য, স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন সম্ভব হবে।”
আইভি আহমেদ ৭ সদস্যের প্রতিনিধি দল নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে বসেন। দলের অন্য সদস্যরা হলেন- ন্যাপের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান, কাজী সিদ্দিকুর রহমান, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিক আহমেদ খান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক পার্থসারথি চক্রবর্তী, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অনিল চক্রবর্তী।
এছাড়া রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া, সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহ উদ্দিন ইসলাম, রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন এবং সচিব (সংযুক্ত) মো. ওয়াহিদুল ইসলাম খান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।