নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়োগে সার্চ কমিটি গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে কারও নাম জমা দেয়নি জাসদ।
Published : 22 Dec 2021, 06:58 PM
দলটি সার্চ কমিটিকে আইনি ভিত্তি দিতে ইসি নিয়োগে সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়নের সুপারিশ জানিয়ে এসেছে সংলাপে।
কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন ইসির মেয়াদ ফুরিয়ে আসায় নতুন ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করেছেন।
এই সংলাপে দ্বিতীয় দল হিসেবে বুধবার বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনা করতে যান জাসদের নেতারা।
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনায় বসা প্রথম দল জাতীয় পার্টি সার্চ কমিটিতে রাখার জন্য ‘৪-৫’ জনের নাম প্রস্তাব করে এসেছিল।
কিন্তু জাসদের পক্ষ থেকে কোনো ব্যক্তির নাম দেওয়া হয়নি বলে সংলাপ থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের জানান দলটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু।
এর কারণ দেখিয়ে তিনি বলেন, “জাসদ মনে করে যে সার্চ কমিটি গঠনে ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করা সমীচীন নয়। এজন্য আমরা কোনো নাম প্রস্তাব করিনি।
“তবে একজন নারী ও একজন শিক্ষক-অধ্যাপক থাকার বিষয়ে আমি বলেছি। তবে এক্ষেত্রেও আমরা কোনো নাম প্রস্তাব করিনি। নাম প্রস্তাব করে সার্চ কমিটি করার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতিকে ভারাক্রান্ত করতে চাইনি।”
ইনু বলেন, “বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতিগণ, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান, মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকসহ সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিদের মধ্য থেকেই সার্চ কমিটির সদস্য মনোনয়ন দেওয়া সমীচীন।”
এর আগে দেখা গিয়েছিল, রাষ্ট্রপতি দলগুলোর কাছ থেকে নামের প্রস্তাব নিয়ে সার্চ কমিটি গঠন করেন। সেই সার্চ কমিটি নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে কয়েকজন ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করবে। সেই নামগুলো থেকে রাষ্ট্রপতি অনধিক পাঁচজনের ইসি গঠন করবেন।
ইসি নিয়োগের এখতিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানের; তবে একটি আইনের অধীনে তা হওয়ার কথা। সেই আইন না হওয়ায় গত দুবার এভাবে সার্চ কমিটি গঠন করে সাংবিধানিক এই সংস্থায় নিয়োগ দেওয়া হয়।
ইনু বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে যে ‘বিব্রতকর অবস্থা’ পাঁচ বছর পরপর হয়, তার স্থায়ী সমাধান করার জন্য রাষ্ট্রপতিতে ভূমিকা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে এসেছেন তারা।
“ভবিষ্যতে একটি আইনি কাঠামো তৈরি করা জন্য উনি যেন সরকারকে উপযুক্ত পরামর্শ ও দিক-নির্দেশনা দেন।”
এখনও আইন না হওয়ায় ‘তুলনামূলকভাবে যথোপযুক্ত দক্ষ ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে’ সার্চ কমিটি গঠন একটি ‘গ্রহণযোগ্য প্রক্রিয়া’ বলে মনে করে জাসদ।
বর্তমান প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশন গঠন ঠিকভাবে হবে কি মনে করেন-সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে ইনু বলেন, “গত কয়েকটি নির্বাচন কমিশন অনুসন্ধান কমিটির মাধ্যমেই হয়েছে। কখনও বিতর্ক দেখা দিয়েছে, কখনও বিতর্ক দেখা দেয়নি।
“সুতরাং আমরা সংলাপের মধ্যে দিয়ে অংশগ্রহণের মধ্যদিয়ে যতদূর সম্ভব একটা বিতর্কের ঊর্ধ্বে দক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির উদ্যোগকে সহযোগিতা করা বাঞ্ছনীয় বলে মনে করেছি।”
সংলাপে রাষ্ট্রপতি কী বলেছেন- জানতে চাইলে জাসদ সভাপতি বলেন, “উনি সার্চ কমিটি অবিলম্বে গঠন করবেন। সার্চ কমিটি যে নাম দেবে, তার থেকে উনি চূড়ান্ত করবেন।
“আমরা শুধু অনুরোধ করেছি, আপনি যে দক্ষতার মানুষই দেন না কেন তিনি যেন ম্যান অব ইন্ট্রিগ্রিটি হয়।”
প্রেসসচিব বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠনে এখনও আইন না থাকায় রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত গ্রহণ এ কমিশন গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রাষ্ট্রপতি এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা কামনা করেছেন।
সংলাপকে বিএনপি নাটক বলছে- এনিয়ে জাসদের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ইনু বলেন, “যারা নাটক বলছেন বা প্রহসন বলছেন, তাদের উদ্দেশে বলব, সংলাপে আসলেই না বলবেন প্রহসন না ভালো জিনিস। সুতরাং সংলাপে না গিয়ে প্রহসন বা নাটক বলা বাঞ্ছনীয় না। সংলাপে আসেন, তারপর নাটক না কি অন্য কিছু তা বুঝবেন।
“রাষ্ট্রপতির এই উদ্যোগকে স্বাগত না জানিয়ে যারা নাকচ করে দিচ্ছেন তারা কিন্তু সংলাপ প্রক্রিয়াকে বানচাল করতে চাচ্ছেন। বিএনপি ২০১৪ ও ২০১৮ সালে নির্বাচন বানচাল করার চক্রান্ত করেছিল, সুতরাং তারা আগামী নির্বাচনে বানচাল করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সংলাপ বানচাল করতে চাচ্ছেন।”
বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে বঙ্গভবনে ঢোকেন জাসদের ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দল। ইনুর নেতৃত্বে এই দলে ছিলেন সাধারণ সম্পাদক শিরীন আক্তার, কার্যকরী সভাপতি রবিউল আলম, স্থায়ী কমিটির সদস্য মীর হোসাইন আখতার, মোশাররফ হোসেন ও রেজাউল করিম তানসেন।
রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া, সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহ উদ্দিন ইসলাম, রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন এবং সচিব (সংযুক্ত) মো. ওয়াহিদুল ইসলাম খান সংলাপে উপস্থিত ছিলেন।