সরকার পতনের লক্ষ্যে ‘আন্দোলন কর্মসূচি’ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ‘মারামারি-পিটাপিটি’ না করার কৌশল বেছে নিতে পরামর্শ দিয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান।
Published : 22 Dec 2021, 04:27 PM
বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনাসভায় তিনি বলেন, “বাস্তবতার নিরিখে আপনি যদি সরকার পতনের আন্দোলনের কর্মসূচি দেন, সেখান থেকে মুক্তিযুদ্ধের সময়কালীন যে বক্তব্য ভেসে আসছিল, সেই শক্তি ভেসে আসবে।
“কিন্তু কর্মসূচি দিতে হবে এবং কর্মসূচিটা কিসের? সরকার পতনের আন্দোলনের কর্মসূচি। কর্মসূচি মানে আমি এটা বলব না যে, আমরা পতনের আন্দোলনে যাব সেটা মারামারি-পিটাপপিটি, এটা-ওটা করব সেটা…।”
আন্দোলনের কৌশল কী হবে, সেই ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, “কান টানলে মাথা আসবে। কানটা টানব মাথাটা আসবে। এই প্রক্রিয়ায় যদি যেতে পারি, তাহলে আমরা সফল হব।”
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি আবারও তুলে ধরে আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, “অনেক পার্থক্য আছে বাংলাদেশের সাথে ইউরোপ-আমেরিকার চিকিৎসা ব্যবস্থার। আমি নিজে অসুস্থ হয়ে দেশের বাইরে চিকিৎসা করিয়ে এসেছি। আমি এটা ফিল করেছি। আমার সাংবিধানিক অধিকার হচ্ছে বেঁচে থাকার অধিকার। এটা সরকারের দায়িত্ব, অথচ তারা সেটা গ্রহণ করছে না।
“সরকার অবশ্যই গ্রহণ করবে, যদি আমরা আামাদের শক্তিকে আরও জোরদার করতে পারি, একতাবদ্ধ হতে পারি। আমাদের প্রয়োজনে, দেশমাতৃকার প্রয়োজনে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।”
এ লক্ষ্যে আন্দোলন গড়ে তুলতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান এই বিএনপি নেতা।
রাজশাহী ইউনিভার্সিটি এক্স স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের (রুনেসা) উদ্যোগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দোয়া মাহফিল এবং ‘অগ্নিঝরা মতিহার ও রিজভী আহমেদ’ শিরোনামে এই আলোচনা অনুষ্ঠান হয়।
আলোচনাসভায় বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, “আমাদের প্রিয় নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া শুধু বন্দি নন, তিনি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে লড়াই করছেন।
“তার মুক্তি ও বিদেশে সুচিকিৎসার দাবিতে আমাদের এই মুহূর্তে রাস্তায় নেমে পড়া উচিত। আমরা প্রায়ই বলে থাকি, তার যদি কিছু হয় তাহলে সরকারকে জবাব দিতে হবে। তার কিছু হওয়া পর্যন্ত আমরা সময় দেব কেন? তার কিছু হবে কেন?”
‘এই মুহূর্তেই রাস্তায় নামা উচিত’ মন্তুব্য করে রিজভী বলেন, “যার ঘোষণা ও আন্দোলনে সেই আওয়াজ তরঙ্গায়িত হত সারাদেশে, বিদ্যুৎস্পৃষ্ঠের মতো আমাদেরকে উদ্বুদ্ধ করত, সচকিত করত আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য।
“আজকে গণতন্ত্রের মা ও জাতীয়তাবাদী রাজনীতির প্রতীক যিনি, দেশের স্বার্থকে কোনো দিন বিসর্জন দেননি, সেই নেত্রীকে আজ একটা হিংসা, প্রতিহিংসা, ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যে বন্দি করে রেখেছে।”
দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ড নিয়ে খালেদা জিয়া এখন সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্ত। দেড় বছর আগে তার সাময়িক মুক্তির শর্তে বলা হয়, ঢাকায় নিজের বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে এবং তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না।
৭৬ বছর বয়সী খালেদা বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যা নিয়ে গত ১৩ নভেম্বর ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে তার ‘পরিপাকতন্ত্রে’ রক্তক্ষরণ এবং লিভার সিরোসিসের কথা জানান চিকিৎসকরা।
এর মধ্যে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করানোর আবেদন করা হয় খালেদা জিয়ার পরিবার-স্বজনদের পক্ষ থেকে। একই দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচিতে বিএনপি ‘কঠোর আন্দোলনের’ হুমকি দিলেও সরকার তাতে সায় দেয়নি।
আলোচনাসভায় সরকারের বিরুদ্ধে ‘দুর্নীতি’ ও ‘গুম-খুনের’ অভিযোগ তুলে একদিন তার ‘বিচার হবে’ বলে সতর্ক করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু।
তিনি বলেন, “আমার কাছে যেটা মনে হয়- এই দিন শেষ দিন না, আরও দিন আছে। বিচার দেখেন নাই এখনো। এখন যে দুর্নীতি-লুটপাট, হত্যা-গুম, আমেরিকায় কার কী ভিসা বাতিল করেছে এই নিয়ে আমি খুব উদ্বিগ্ন না, এটা নিয়ে আমি চিন্তিত না।
“আরে ভাই, আপনারা প্রস্তুত হন, বিচারের কাঠগড়ায় আপনাদের দাঁড়াতে হবে। হ্যাঁ, কত দেখলাম ১৯৭১ সালের পর থেকে এই ৫০ বছরে কত দেখলাম। শেষ আছে। আমি যেটা দেখতে না পারি, আমার উত্তরসূরীরা দেখবেই।”
সংগঠনের সভাপতি অধ্যক্ষ বাহাউদ্দিন বাহারের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মল্লিক মো. মোকাম্মেল কবীরের সঞ্চালনায় আলোচনাসভায় ডেমোক্রেটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন মনি, বিএনপির শামীমুর রহমান শামীম, তাইফুল ইসলাম টিপু, রমেশ দত্ত, আমিনুল ইসলাম, নুরুজ্জামান তপন বক্তব্য দেন।
আরও পড়ুন