মুরাদের কানাডায় ঢুকতে না পারা নিয়ে দিনভর খবরের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের দুটি সূত্র বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তেমনই ইংগিত দিয়েছেন।
বিমানবন্দরে দায়িত্বরত একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে শনিবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ডা. মুরাদ হাসান এমপি কূটনৈতিক পাসপোর্ট নিয়ে কানাডায় রওনা হয়েছিলেন। কিন্তু যেতে পারেননি। আমাদের কাছে খবর আছে তিনি দুবাইয়ে আছেন। কাল দুবাই থেকে দেশে ফিরে আসার কথা।”
মন্ত্রিসভার একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, “তার দুবাইয়ের ভিসাও নাই, সে কারণে সেখানে থাকতে পারছে না। আমি শুনেছি সে চলে আসতেছে।”
এ বিষয়ে মুরাদ হাসানের পরিবারের কারো বক্তব্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানতে পারেনি।
এ ঘটনায় তুমুল আলোচনার মধ্যে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে কূটনৈতিক পাসপোর্ট নিয়ে কানাডার উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়েন মুরাদ, যেখানে তিনি গত সেপ্টেম্বরেও সরকারি সফরে গিয়েছিলেন।
কিন্তু এবার বিমানবন্দরে মুরাদকে ‘আটকে দেওয়া হয়’ বলে কানাডা প্রবাসী সাংবাদিক শওগাত আলী সাগর খবর দেন।
কানাডা থেকে প্রকাশিত বাংলা ভাষার নিউজ পোর্টাল নতুন দেশের সম্পাদক সাগর এক প্রতিবেদনে লিখেছেন, “সংসদ সদস্য ডা. মুরাদ হাসানকে কানাডায় ঢুকতে দেয়নি দেশটির বর্ডার সার্ভিসেস এজেন্সি। টরন্টোর পিয়ারসন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় বলে জানা গেছে।
“কানাডায় বসবাসরত তার ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। তবে কানাডার সরকারি সূত্র থেকে এই ব্যাপারে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।”
কানাডায় যাতে মুরাদকে ঢুকতে দেওয়া না হয়, সেজন্য প্রবাসীদের একটি অংশ সক্রিয় ছিল বলে জানালেন ‘লুটেরা বিরোধী মঞ্চ’ কানাডার সংগঠক ও ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডির গবেষক মঞ্জুরে খোদা টরিক।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "কানাডায় খুব নিয়মতান্ত্রিকভাবে সব হয়। আমরা এখানে কানাডার বর্ডার সার্ভিসেস এজেন্সির ওয়েবসাইটে গিয়ে ইমেইল করেছি। মেইলে লিখেছি মুরাদ হাসানের অপকীর্তির কথা, আর সঙ্গে সংবাদ ও ভিডিও ক্লিপ জুড়ে দিয়েছি।
“১৭১টি ইমেইল নাকি গিয়েছে, আমাদেরকে জানিয়েছেন এখানে কর্মরত দুই বাংলাদেশি সাংবাদিক।... তাকে কানাডায় ঢুকতে না দেওয়ার ব্যাপারে আমার বিশ্বাস এটি কাজে দিয়েছে।”
অবশ্য ঢাকায় কানাডীয় হাই কমিশনের একটি সূত্রের বরাত দিয়ে চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে যেসব কাগজপত্র থাকা প্রয়োজন ছিল, তা না থাকায় মুরাদ হাসানকে বিমানবন্দরে আটকে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে কানাডায় বাংলাদেশের হাই কমিশনার খলীলুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমককে বলেছেন, মুরাদ হাসান এবার সেখানে যাওয়ার বিষয়ে তাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেননি। আর মুরাদের বিষয়ে কানাডার বর্ডার এজেন্সির তরফ থেকেও হাই কমিশনের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি।
“মন্ত্রী হিসাবে আগে (গত সেপ্টেম্বরে) উনি এসেছিলেন, আমাদের সাথে দেখাও হয়েছিল। এখনতো মন্ত্রী নাই। এখনতো সংসদ সদস্য। সংসদ সদস্য হিসাবেও অনেক প্রাপ্যতা থাকে। তারপরও উনি কিন্তু নিজে থেকে আমাদের জানাননি যে উনি এখানে আসছেন বা আসবেন।
“সাধারণত এমপিরা সরকারি কাজে না এলে জানানো হয় না। যেহেতু তিনি কোনো সরকারি কাজে আসেননি, সে হিসাবে কোনো মন্ত্রণালয় থেকেও আমাদের জানায়নি যে উনি যাবেন।”
কানাডার বর্ডার সার্ভিসেস এজেন্সির সাথে হাই কমিশনের ‘নিয়মিত যোগাযোগ’ থাকে জানিয়ে হাই কমিশনার বলেন, “যদি কাউকে বাধা দেয়, বাংলাদেশের কোনো নাগরিক, উনি এমপি হোক বা সাধারণ নাগরিক হোক, কোনো ব্যাপারে কোনো ঝামেলা হলে জানায়। উনারাও কিন্তু আমাদের কিছু জানাননি।”