মুরাদ ছাত্রদল থেকে এসেছিলেন ছাত্রলীগে, জানালেন সাবেক ছাত্রনেতারা

অডিও কেলেঙ্কারিতে মন্ত্রিত্ব হারাতে বসা তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় ছাত্রদলে যুক্ত ছিলেন বলে তৎকালীন ছাত্রনেতারা নিশ্চিত করেছেন।

ময়মনসিংহ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Dec 2021, 03:16 AM
Updated : 7 Dec 2021, 06:30 AM

খালেদা জিয়ার নাতনিকে নিয়ে বর্ণ ও নারীবিদ্বেষী বক্তব্যের পর এক চিত্রনায়িকার সঙ্গে অশালীন ফোনালাপের অডিও সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে সোমবার আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, মুরাদকে পদত্যাগ করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সেদিনই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেন, মুরাদ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় ছাত্রদলে যুক্ত ছিলেন।

মুরাদ বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল থেকে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগে যুক্ত হয়েছিলেন বলে তৎকালীন ছাত্রনেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

১৯৯৬ সালের জুন মাসে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পরপরই ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রদলের ৭১ সদস্যের যে কমিটি গঠন করা হয়েছিল, তাতে সভাপতি ছিলেন মাহবুব-উল কাদির ও মো. ইসাহাক।

ডা. ইসাহাক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তাদের কমিটিতে প্রচার সম্পাদক ছিলেন মুরাদ।

তিনি বলেন, “১৯৯৩ সালে এম-৩০ ব্যাচে মুরাদ হাসান এমবিবিএস প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়ে ছাত্রদলের রাজনীতিতে সক্রিয় হোন। পরে মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে ছাত্রদলের কমিটির নেতারা সবাই ক্যাম্পাসের বাইরে চলে যান।

“কিন্তু মুরাদ হাসান ক্যাম্পাসে থেকে যান এবং ১৯৯৬ সালের ডিসেম্বরের শেষের দিকে ছাত্রলীগে যোগদান করেন।” 

ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও তৎকালীন জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মোতাহার হোসেন তালুকদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মুরাদ হাসান ১৯৯৬ সালের ডিসেম্বরে ছাত্রদল থেকে পদত্যাগ করার সময় মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রদলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন।

ওই সময়ে ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক বর্তমানে মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম রিপনও এই খবরটি নিশ্চিত করেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ডা. মুরাদ হাসান ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ছাত্রদলের কমিটিতে প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। পরে তিনি ছাত্রলীগে যোগদান করেন। ২০০০ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি।”

এ বিষয়ে মুরাদ হাসানের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। ছাত্রদল থেকে ছাত্রলীগে আসার এই তথ্য প্রকাশের আগে রোববার থেকে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা চালিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।  সোমবার এক অনুষ্ঠানে তার অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও তিনি সেখানে যাননি।

তথ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মুরাদ হাসান ঢাকার নটর ডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর ২০০১ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। ২০১১ সালে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) থেকে এম ফিল ডিগ্রি নেন।  

তথ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া জীবনীতে দাবি করা হয়েছে, ১৯৭৪ সালে জন্ম নেওয়া মুরাদ ১৯৯৪ সালে ছাত্রলীগের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ শাখার ‘কার্যকরী সদস্য’ ১৯৯৭ সালে ‘সাংগঠনিক সম্পাদক’ এবং ২০০০ সালে ‘সভাপতি’  নির্বাচিত হন।

২০০৩ সালে আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ‘কার্যকরী সদস্য’ নির্বাচিত হন মুরাদ। পাশাপাশি জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের ‘কার্যকরী সদস্য’, সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের ‘কার্যকরী সদস্য’, জামালপুর জেলা কমিটির ‘স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক’র দায়িত্বও তিনি পালন করেন।

জামালপুরের আওয়ামী লীগ নেতা মতিউর রহমান তালুকদারের ছেলে মুরাদ ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকেটে জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী, মেস্টা ও তিতপল্যা) সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৮ সালে তিনি দ্বিতীয়বার সংসদ সদস্য হন।

২০১৯ সালে শেখ হাসিনা টানা তৃতীয়বার সরকার গঠন করলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান মুরাদ। ২০১৯ সালে তাকে স্বাস্থ্য থেকে সরিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়।