আবরারের হলের শিক্ষকদেরও বিচার চায় সিপিবির নারী সেল

বুয়েটের শেরে বাংলা হলের শিক্ষকের দায়িত্বে অবহেলার কারণে আবরার ফাহাদকে প্রাণ দিতে হয়েছে অভিযোগ করে তাদেরও বিচারের দাবি জানিয়েছেন সিপিবি নারী সেল।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Oct 2019, 07:57 AM
Updated : 14 Oct 2019, 02:14 PM

আবরার হত্যাকাণ্ডের বিচার, ভারতের সাথে অসম চুক্তি বাতিল কর, যৌন নিপীড়ন ও নারী প্রতিহিংসা বন্ধের দাবিতে সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক সমাবেশে দাবি তোলা হয়।

সমাবেশে সেলের আহ্বায়ক লক্ষ্মী চক্রবর্তী বলেন, “আবরার শিখিয়ে গেল যে, ‘আমি মরেও মরি নাই।’ কারণ আমরা জানি বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো পরিচালনার জন্য যে শিক্ষক দায়িত্বে থাকেন তাদের দায়িত্ব কী? হলের ভেতরে প্রতিহিংসার যে কক্ষগুলো, সেখানে কী পাওয়া গেল? হকিস্টিক পাওয়া গেল, মদের বোতল পাওয়া গেল। উচ্চ বিদ্যাপিঠের হলগুলোতে এসব নানা জিনিসপত্র রাখা হয়েছে।

“আমার এখানে প্রশ্ন, হলগুলোর পরিচালনার দায়িত্বে থাকা শিক্ষকদের দায়িত্ব কী? এই জায়গাটি আমাদের বুঝতে হবে। শুধু আবরার হত্যাকাণ্ডের সাথে যারা সরাসরি জড়িত, যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কেবল তাদের বিচারই না, যারা হল পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন, সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেননি, তাদেরকেও ধরে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে, বিচার করতে হবে।”

সিপিবির এই নেতা বলেন, “এখন আমরা প্রতিদিন মর্মাহত হই। গ্রামের নিরীহ মানুষ তাদের সন্তানকে পাঠায় আরেক পিতা-মাতার (শিক্ষক) কাছে। সেই পিতা-মাতাদের দায়িত্ব কী? এই জায়গাগুলো আমাদের বুঝতে হবে।”

সিপিবি গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার বলেন, “ভারতের সাথে বাংলাদেশের অসম চুক্তির প্রতিবাদে আবরার যৌক্তিক একটা পোস্ট দিয়েছিল, যে কারণে ছাত্রলীগের পাণ্ডারা পিটিয়ে নির্মমভাবে তাকে হত্যা করেছে।”

এভাবে একের পর এক অসম চুক্তি করে বাংলাদেশের স্বার্থকে সরকার ‘বিকিয়ে’ আসছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “শেখ হাসিনা আপনাকে জিজ্ঞেস করতে চাই, এসব চুক্তি করার আগে আপনি দেশের জনগণের সাথে কোনো কথা বলেছেন? কারও সাথে কোনো কথা বলেননি। দেশের মানুষের স্বার্থবিরোধী চুক্তি করেছেন।”

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, “বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডের বিচার করলেন না, রাজু হত্যাকাণ্ডসহ প্রত্যাকটা ছাত্র হত্যাকাণ্ডের বিচার করা হয়নি। যে কারণে একের পর এক মানুষ হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছে।“

বুয়েটছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার বিচার, ভারতের সঙ্গে চুক্তি বাতিলসহ বিভিন্ন দাবিতে সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির মানববন্ধন।

নারী সেলের নেতা লুনা নূর বলেন, “আবরারকে হত্যা করার শক্তি তারা কোথা থেকে পেল? এই শক্তি হল দেশে গণতন্ত্র না থাকার কারণে। বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ড করে তারা পার পেয়ে গেছে। যে কারণে এসব ঘটনা একের পর এক ঘটে যাচ্ছে। এই শক্তির ওপর ভর করে ক্ষমতাসীনরা ক্ষমতায় ঠিকে আছে।”

সরকার নিজেদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য প্রতিবেশী ভারতের সাথে একের পর এক অসম চুক্তি করে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

নারী সেলের আরেক নেতা মাকসুদা আক্তার লাইলী বলেন, “ক্যাসিনো একটা ম্যাজিকের মত খেলা, যার মাধ্যমে সবার টাকা একজনের পকেটে চলে যায়। একইভাবে আমাদের সমাজেও ক্যাসিনো খেলার মত খেলা চলে। এখানে জনগণের টাকা মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের পকেটে চলে যাচ্ছে। এই ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে হবে।

“শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমে বিভিন্ন লোভ-প্রলোভন দেখিয়ে ক্যাডার বাহিনী, পেটোয়া বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হয়। কেউ যদি রাষ্ট্রের স্বার্থে কথা বলে তাহলে ওই পেটোয়া বাহিনী হামলে পড়ে। আবরারকে একইভাবে নিষ্ঠুরভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে ক্ষমতাসীনদের পেটোয়া বাহিনী।”

এই পরিস্থিতে দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন দরকার এবং এজন্য বাম সংগঠনগুলোকে শক্তিশালী করে লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান মাকসুদা।