“আমার স্বামী যদি ভোটারদের মাঝে টাকা বিলি করা অবস্থায় ধরা পড়ত তাহলে একটা কথা ছিল। প্রতিপক্ষকে বিশেষ সুবিধা দিতে এটা করা হয়েছে।”
Published : 07 May 2024, 11:28 AM
পাবনার সুজানগর উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান এবং চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী শাহিনুজ্জামান শাহিনসহ ১১ জনকে ২২ লাখ ৮২ হাজার ৭০০ টাকাসহ আটকের খবর জানিয়েছে র্যাব।
পাশাপাশি শাহিনের ব্যবহৃত একটি গাড়িও জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনার পর পরই শাহিনের সমর্থকরা সুজানগর বাজারে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিল করে তার মুক্তির দাবি জানায়।
র্যাবের দাবি, উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোটারদের মাঝে টাকা বিতরণ করছিলেন আনারস প্রতীকের এ প্রার্থী।
তবে চেয়ারম্যানের স্ত্রী ও তার সমর্থকদের অভিযোগ, প্রতিপক্ষ প্রার্থীকে ‘সুবিধা দিতে’ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে শাহিনকে আটক করা হয়েছে।
র্যাব-১২ কোম্পানি কমান্ডার মেজর মো. এহতেশামুল হক খান জানান, সোমবার রাত ১২টার দিকে সুজানগর পৌর এলাকার চর সুজানগর থেকে শাহিনুজ্জামান শাহিনসহ ১১ জনকে আটক করেন তারা।
আটক শাহিনুজ্জামানের বাড়ি ওই এলাকায়। তিনি সুজানগর উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন।
এবারের উপজেলা নির্বাচনে আনারস প্রতীক নিয়ে আবারও চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন তিনি। ভোটে তার একমাত্র প্রতীদ্বন্দ্বী প্রাথী আব্দুল ওহাব উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।
আটক বাকিদের বিস্তারিত নাম-পরিচয় তাৎক্ষাণিকভাবে জানা যায়নি।
মেজর মো. এহতেশামুল হক বলেন, “২২ লাখ ৮২ হাজার ৭০০ টাকাসহ একটি মাইক্রোবাস থেকে সুজানগর উপজেলার চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী শাহিনুজ্জামান শাহীনসহ ১১ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের র্যাবের পাবনা অফিসে নেওয়া হয়েছে।
“আগামী ৮ মে সুজানগর উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোটারদের মাঝে টাকা বিতরণের অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।”
এখন তাদের নির্বাচন কমিশনের কাছে হস্তান্তকর করা হবে। তারা নির্বাচনি আইনবিধি অনুয়ায়ী বিয়য়টি দেখবেন বলে জানান র্যাবের এ কর্মকর্তা।
সুজানগর পৌরসভার মেয়র রেজাউল হক রেজা বলেন, “উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিনুজ্জামান শাহিন পেশায় একজন ব্যবসায়ী। তার কাছে ব্যাবসায়িক টাকা থাকতেই পারে।
“আমি যতটুকু জানি, বাড়িতে যাওয়ার পথে র্যাব সদস্যরা তার গতিরোধ করে গাড়িতে টাকা পেয়েছে। সে একজন ক্লিন ইমেজের নেতা। আমরা নিশ্চিত এটি তার বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র।”
শাহিনের স্ত্রী সানজিদা আক্তার টুম্পা বলেন, “আমার স্বামী যেহেতেু ব্যব্সা করেন। বিভিন্নজনের কাছ থেকে পাওনা টাকা নিয়ে তিনি বাসায় ফিরছিলেন। এ সময় র্যাবের দল তার গাড়ির থামিয়ে ষড়যন্ত্রমূলক তাকে আটক করে।”
তিনি বলেন, “আমার স্বামী চেয়ারম্যানের পাশাপাশি একজন ব্যবসায়ী; ফলে তার কাছে এত টাকা থাকতেই পারে। আমার স্বামী যদি ভোটারদের মাঝে টাকা বিলি করা অবস্থায় ধরা পড়ত তাহলে একটা কথা ছিল, কিন্তু সেরকম তো কিছু হয়নি। প্রতিপক্ষকে বিশেষ সুবিধা দিতে এটা করা হয়েছে বলে আমার মনে হয়।”
এদিকে শাহিনকে আটকের পর থেকে তার কর্মী-সমর্থকরা সুজানগর বাজারে মেইন রোডে থানার সামনে অবস্থান নিয়ে তার মুক্তির দাবি জানাচ্ছে বলে পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম জানান।
সেখানে কথা হয় রতন নামে শাহিনের একজন সমর্থকের সঙ্গে। তিনি বলেন, “এটা প্রতিপক্ষকে সুবিধা দিতে করা হয়েছে, বোঝাই যাচ্ছে। আমরা এ ঘটনার সুষ্টু তদন্ত করে বিচারের দাবি জানাই।”
এদিকে এ ঘটনার পর স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আব্দুল ওহাবের সঙ্গে শাহিনের দীর্ঘদিন ধরে অধিপত্য বিস্তার, রাজনৈতিক প্রভার, পদ্মা নদীর বালুমহাল দলখসহ বিভিন্ন কারণে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে দুপক্ষের মধ্যে মারামারিও হয়েছে।
শাহিনের আটকের বিষয়ে তার প্রতীদ্বন্দ্বী প্রাথী আব্দুল ওহাবের সঙ্গে কথা হলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঘটনাটা শুনেছি। শাহিন নাকি ভোটারদের মধ্যে টাকা বিলি করার জন্য নিয়ে যাচ্ছিল।”