ছাত্রদলের কাউন্সিল আয়োজনে বেআইনি কিছু হয়নি দাবি করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকারের হস্তক্ষেপে কাউন্সিল অনুষ্ঠানে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে।
Published : 13 Sep 2019, 10:06 PM
শুক্রবার রাতে দলের দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের বৈঠকের পর সাংবাদিকদের তিনি এ অভিযোগ করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ছাত্রদলের বিষয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কাউন্সিল নিয়ে এখন পর্যন্ত যা হয়েছে, কোনোটাই বেআইনি হয়নি। সব কিছুই আইনসম্মত হয়েছে।
স্থগিতাদেশের প্রক্রিয়াকে ‘মিস্টিরিয়াস’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “গতকাল রাতে সকলের অগোচরেই আদালতের এই স্থগিতাদেশ এসেছে। এখানে সরাসরি সরকারের হস্তক্ষেপ আছে।”
শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিএনপির সহযোগী সংগঠনটির কাউন্সিলে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে ভোট হওয়ার কথা ছিল। প্রস্তুতির শেষ পর্যায়ে বৃহস্পতিবার সংগঠনের বিদায়ী ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আমান উল্লাহর আবেদনে ঢাকার জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ নুসরাত জাহান কাউন্সিলে স্থগিতাদেশ দেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বর্তমান সরকার এমন একটা রাজনৈতিক সংস্কৃতি তৈরি করছে, যেটা অত্যন্ত ভয়াবহ। সেটা হলো- আদালতকে দিয়ে রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করা।
“ছাত্রদল একটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে পরবর্তী নেতৃত্ব নির্ধারণ করতে যাচ্ছে কাউন্সিলের মাধ্যমে। এটাকে আপসেট করা জন্য আজকে কাউন্সিল স্থগিত করার মানে কি? আপনি পলিটিক্যাল পার্টির কাজ বন্ধ করে দিচ্ছেন- এটা নজিরবিহীন।”
সেনানিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিএনপি মহাসচিবের পদ নিয়ে বিবাদ আদালতে গড়ানোর প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, “কোর্ট ওই সময় পরিষ্কার বলে দিয়েছিল যে, কোনো রাজনৈতিক দলের ব্যাপারে আদালতের হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়। আমরা দেখিনি যে, পলিটিক্যাল পার্টির কার্য্ক্রমে আদালত যুক্ত হচ্ছে।”
আদালতকে ব্যবহার করে সরকারের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণের উদাহরণ দিতে গিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা রহিত করা, জাতীয় সংসদ, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে নির্বাচনে প্রার্থিতা বাতিল করায় আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল।
“এই যে আদালতকে প্রশ্নবিদ্ধ করা, আদালতকে দলীয়করণের দিকে নিয়ে যাওয়া- এটা দেশ ও জাতির জন্য শুভ কোনো কিছু বয়ে আনতে পারে না।”
গত ৩ জুন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এক বিজ্ঞপ্তিতে রাজীব আহসান ও আকরামুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ছাত্রদলের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে দেওয়ার কথা জানান। পাশাপাশি ৪৫ দিনের মধ্যে কাউন্সিল করে নতুন কমিটি গঠনের কথা বলা হয়।
“আদালত আবেদন গ্রহণ করে কাউন্সিলের উপর স্থগিতাদেশ দিয়েছেন।”
পাশাপাশি বিএনপি মহাসচিব, রুহুল কবির রিজভী ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক খায়রুল কবির খোকনসহ ১০ বিবাদীকে ১০ দিনের কারণ দর্শাতে নোটিস দিয়েছে।
নোটিসের জবাবের বিষয়ে ফখরুল বলেন, “আমরা আমাদের উত্তরগুলো আদালতের কাছে যথাসময়ে দেব। তবে ছাত্রদলের সিদ্ধান্ত ছাত্রদলই নেবে, এখন যারা দায়িত্বে আছে তারাই বলবে।”
গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব ছাড়াও স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম আলমগীর ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
দলের আইনজীবীদের মধ্যে ছিলেন- জয়নাল আবেদীন, এজে মোহাম্মদ আলী, নিতাই রায় চৌধুরী, মাহবুবউদ্দিন খোকন, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, কায়সার কামাল, আসাদুজ্জামান আসাদ, ওমর ফারুক ফারুকী, জয়নাল আবেদীন মেজবাহ।
সাবেক ছাত্র নেতাদের মধ্যে শামসুজ্জামান দুদু, আসাদুজ্জামান রিপন, ফজলুল হক মিলন, খায়রুল কবির খোকন, শহিদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কামরুজ্জামান রতন, আজিজুল বারী হেলাল, শফিউল বারী বাবু, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, রাজিব আহসান ও আকরামুল হাসান ছিলেন।