সিটি ভোট: সিলেটে বিএনপি জোটের বিভেদে স্বস্তিতে আ. লীগ

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২০ দলীয় জোটে বিভেদের খবরে প্রচারের শুরু থেকেই ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে মেয়র পদে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের প্রচার বাহিনী।

সিলেট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 July 2018, 01:14 PM
Updated : 12 July 2018, 01:14 PM

আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বলছেন, দলের ভেতরের মতানৈক্য অনেকটাই দূর করা গেছে; সিলেটের রাজনৈতিক পরিস্থিতিও আর আগের মত নেই। ফলে সাবেক মেয়র কামরান এবার নগর ভবনের কর্তৃত্ব ফিরে পাবেন বলে তারা আশাবাদী।  

অন্যদিকে বিএনপি নেতারা বলছেন, বিদ্রোহী প্রার্থী থাকলেও ভোট সুষ্ঠু হলে আরিফুল হক চৌধুরীই মেয়র থাকবেন বলে তাদের বিশ্বাস।   

স্থানীয় সরকারের বিগত নির্বাচনগুলোতে ২০ দলীয় জোটের পক্ষে বিএনপির একক প্রার্থী থাকলেও এবার সিলেটে বেঁকে বসেছে তাদের প্রধান শরিক জামায়াতে ইসলামী।   

আদালতের আদেশে নিবন্ধন হারানো জামায়াতের দলীয়ভাবে প্রার্থী দেওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু মহানগর জামায়াতের আমির এহসানুল মাহবুব জুবায়ের স্বতন্ত্র হিসেবে ভোটের লড়াইয়ে নেমে বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের আত্মবিশ্বাসে বড় ধাক্কা দিয়েছেন।

ধানের শীষের প্রার্থী আরিফুলের বিপদ বাড়িয়েছেন নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম। দলের মতের বাইরে গিয়ে তিনিও প্রার্থী হয়েছেন স্বতন্ত্র হিসেবে।

ভোটের প্রচারে প্রতীক হাতে নৌকার মাঝি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান

অন্যদিকে নৌকার প্রার্থী কামরানকে জয়ী করে আনতে মহাজোট এবার একাট্টা। তাই দুই বারের মেয়র সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি কামরান এবার ভোটের সমীকরণে বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন বলে তার সমর্থকরা মনে করছেন।

আগামী ৩০ জুলাই একই দিনে সিলেট, রাজশাহী ও বরিশাল সিটি করপোরেশনে নির্বাচন হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে এই তিন সিটির নির্বাচনকে সবপক্ষই গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। 

২০১৩ সালের নির্বাচনে ২০ দলীয় জোটের সমর্থন নিয়ে আরিফুল ৩৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছিলেন আওয়ামী লীগের কামরানকে।

নির্দলীয় ওই নির্বাচনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আরিফুল পান ১ লাখ ৭ হাজার ৩৩০ ভোট। আর কামরান পেয়েছিলেন ৭২ হাজার ২৩০ ভোট।

তবে শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলার আসামি আরিফুলের জন্য মেয়রের দায়িত্ব পালনের পথটি মসৃণ ছিল না। মামলার কারণে কয়েক দফা তাকে বরখাস্ত হতে হয়েছে, আদালতের আদেশ নিয়ে আবার তিনি পদে ফিরেছেন।

অন্যদিকে দল ক্ষমতায় থাকায় আগের পরাজয়ের ক্ষত সারিয়ে নিজেকে গুছিয়ে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা কামরান।   

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত নির্বাচনে দলে কিছুটা অনৈক্য ছিল। তার ওপর হেফাজত ইস্যু নিয়ে মিথ্যা প্রচারণায় আমাদের প্রার্থী হেরেছিলেন। কিন্তু এবার আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ। সবাই একযোগে কাজ করছে। তার ভাল ফল অবশ্যই আসবে।’’

অন্যদিকে ২০ দলীয় জোটে বিভাজন আর বিদ্রোহী প্রার্থীর জটিলতাকে খুব বড় করে দেখতে রাজি নন সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন।

তিনি বলেন, “২০ দলীয় জোটের একক প্রার্থী আরিফুল। সব শরিক দলেরই সমর্থন রয়েছে আরিফুলের ওপর। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে তিনি বিপুল ভোটে জিতবেন।’’

অবশ্য স্বতন্ত্র হিসেবে ভোটের লড়াইয়ে নামা জামায়াত নেতা এহসানুল মাহবুবু জুবায়েরও ‘উল্লেখযোগ্য’ ভোট পাওয়ার আশা করছেন। তার দাবি, সিলেটে তিনি এবং তার দলের ‘জনপ্রিয়তা’ রয়েছে।

আর বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী বদরুজ্জামান সেলিমও ভোটের মাঠে নিজেকে ‘শক্ত প্রতিপক্ষ’ বলে ভাবছেন। ফলে আরিফুলের ভোটে সেলিম ও জুবায়ের দুজনেই ভাগ বসাবেন বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা। 

দলীয় প্রতীক ধানের শীষ হাতে বিএনপির আরিফুল হক চৌধুরী

দলীয় প্রতীকে এবারই প্রথম সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন হওয়ায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তাপ অনেক বেশি। তবে গত নির্বাচনের হেফাজতে ইসলাম প্রসঙ্গ এবারও ভোটের হিসাবে ঘুরে ফিরে আসছে। প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির দায়িত্বে থাকা নেতারাও সিলেট হেফাজতের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াচ্ছেন।

২০১৩ সালের মে মাসে ঢাকার শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশ থেকে তাণ্ডব এবং রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে তাদের সরিয়ে দেওয়ার ঘটনার দেড় মাসের মাথায় ১৫ জুন সিলেটের তৃতীয় সিটি নির্বাচন হয়। সেই ভোটে কামরানের পরাজয়ে হেফাজতের ‘মিথ্যা প্রচারের’ একটি ভূমিকা ছিল বলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অভিযোগ। তাদের ভাষ্য, হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা সেবার কোমর বেঁধে বিএনপির আরিফুলের পক্ষে কাজ করেন।

এবারের নির্বাচনের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে হেফাজতে ইসলামের সিলেট মহানগরের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মোস্তাক আহমদ খান বলেন, “হেফাজতে ইসলাম একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। এই সংগঠনটি কোনো দলের পক্ষে কাজ করে না। সিলেটের বিভিন্ন মাদ্রাসায় আমাদের অনুগত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা রয়েছেন- এটা ঠিক। তবে আমরা কারও পক্ষে প্রকাশ্যে প্রচারে নামব না।”

হেফাজতের কেউ যদি কোনো প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে যায় কিংবা ভোট দেয়- সেটা তার ব্যক্তিগতভাবে বিষয় বলে মন্তব্য করেন মোস্তাক আহমদ খান।

আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী ছাড়াও ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের মো. মোয়াজ্জেম হোসেন খান, সিপিবি-বাসদের মো. আবু জাফর এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী এহসানুল হক তাহের এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন। তবে ভোটের হিসাব-নিকাশ আবর্তিত হচ্ছে নৌকা আর ধানের শীষকে ঘিরেই।

ধানের শীষের প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সিলেটের উন্নয়নের স্বার্থে গত নির্বাচনের মত এবারও ভোটাররা আমাকে বিশাল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী করবেন বলে আমার বিশ্বাস। দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে আমি সিলেট নগরের জন্য কাজ করেছি। আমি বিএনপি থেকে নির্বাচনে অংশ নিলেও ইসলামী দলগুলোতে আমার ভোট ব্যাংক রয়েছে।’’

অন্যদিকে নৌকার প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে সিলেটের মানুষের সেবা করে আসছি। এই সিলেটের মানুষের জন্যই আমি আজকের কামরান। এই নগরের মানুষের দুর্দিনে আমি সবসময় পাশে থেকেছি। আমি যখন মেয়র ছিলাম, সব দলের মানুষই আমার কাছে আসত। কারণ আমাকে তারা অনেক ভালোবাসে।”