ভারতের সঙ্গে দেওয়া-নেওয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য ‘জাতির জন্য অপমানজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ।
Published : 01 Jun 2018, 07:49 PM
শুক্রবার এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য রেখেছেন যে, আমি ভারতকে যা দিয়েছি তা তারা সব সময় মনে রাখবে। এর চাইতে নির্লজ্জ অপমানজনক কোনো বক্তব্য আমাদের জাতির জন্য হতে পারে না।”
এই বক্তব্যের ব্যাখ্যায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ বলেন, “বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ, সেই দেশের আপনি অনেক কিছু দিয়ে দিয়েছেন। কী দিয়েছেন আমরা সবই জানি।
“আপনি অকাতরে যত রকমের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া যায় আপনি তা করছেন। আপনি তাদের করিডোর দিয়েছেন, আপনি তাদের ট্রানজিট, ট্রান্সশিপমেন্ট দিয়ে দিয়েছেন, আপনি তাদের নিরাপত্তার ব্যাপারে সব কিছু করেছেন সেই উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোর ব্যাপারে। আপনি বন্দর ব্যবহার করার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। সবই দিয়েছেন যেটা আপনি আজকে স্বীকার করেছেন।”
এই দেওয়ার বিনিময়ে সরকার ভারতের কাছ থেকে ‘বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ উদ্ধারের কিছুই করতে পারেনি’ বলে অভিযোগ করেন মওদুদ আহমদ।
“একটা বিষয় যদি বলতে পারতেন যে, আমরা অর্জন করেছি। আমাদের তিস্তার পানি বণ্টন এবারও কিছু হয়নি। উনি (প্রধানমন্ত্রী) যাওয়ার আগে বলছিলাম, উনি যদি তিস্তা পানির বিষয়ে সুরাহা করে না আসতে পারেন তাহলে বুঝব আপনার সফর ব্যর্থ হয়েছে। সেই ব্যর্থ সফরকে তিনি সফল করার চেষ্টা করেছেন এই কথা বলে যে, আমরা অনেক কিছু দিয়ে দিয়েছি যা ভারত কোনোদিন ভুলতে পারবে না।”
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে মওদুদ আহমদ বলেন, “ আপনি কে? আপনি তো একা সেটা করতে পারেন না। এদেশের ১৬ কোটি মানুষের সমস্ত সম্পদ, ১৬ কোটি মানুষের ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষা আজকে আপনি একথা বলে তাদের মনে আঘাত দিয়েছেন।
“এই আঘাতের প্রতিদান আপনাদের দিতে হবে। আগামী নির্বাচন যদি সুষ্ঠু হয় তার জবাব দেশের মানুষ আপনাদের দেবে।”
ভারত সফর নিয়ে বুধবার বিকালে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ভারতে স্থিতিশীলতার জন্য বাংলাদেশ যা দিয়েছে তা তারা সারা জীবন মনে রাখবে, তবে এর জন্য কোনো প্রতিদান তিনি চান না।
‘সংকট থেকে দৃষ্টি সরাতে মাদকবিরোধী অভিযান’
দেশের বর্তমান সংকট থেকে জনদৃষ্টি ভিন্ন দিকে নিতে সরকার মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করছে বলে মন্তব্য করেছেন মওদুদ আহমদ।
তিনি বলেন, “দেশের সত্যিকারের যে সংকট, সেই সংকটকে অন্য দিকে ধাবিত করার জন্য আজকে মানুষ হত্যার অভিযানে আপনি আপনারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োগ করেছেন।”
“আজকে মাদক নিয়ন্ত্রণের নামে মানুষ হত্যার লাইসেন্স দিয়ে দিয়েছে। ১৩৮ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছে বিনা বিচারে। আপনারা শেষ বেলা এসে এই অভিযান চালিয়ে মানুষ হত্যা করছেন। আসল যারা ব্যবসায়ী যাদের আপনারা চিহ্নিত করেছেন তাদের একজনকেও এখন পর্যন্ত ধরতে পারেন নাই। এমপি বদির কথা সারা দেশের মানুষ জানে। আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন, তার ব্যাপারে তথ্য আছে কিন্তু প্রমাণ নেই। চমৎকার কথা।”
এই সরকারের সময়ে মাদক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে না বলে মনে করেন সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ।
কারণ ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “তাদের নিজেদের মানুষরা, তাদের নিজেদের নেতারা, কর্মীরা এবং তাদের প্রভাবশালী মানুষরা এর সঙ্গে জড়িত। তারা অনেক অনেক কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন এই ব্যবসার মাধ্যমে।
“আমরা মাদক নিয়ন্ত্রণের সম্পূর্ণ পক্ষে। আমরা চাই, দেশের কোটি কোটি যুবক মাদকাশক্ত হল- এই অপরাধে একদিন আপনাদেরও বিচার হওয়া উচিৎ এবং হবে। ”
‘রাজপথেই খালেদা জিয়ার মুক্তি’
রাজপথে আন্দোলন ছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির কোনো উপায় নেই বলে মনে করছেন মওদুদ আহমদ।
তিনি বলেন, “আমরা সম্পূর্ণভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি আইনি প্রক্রিয়ায়, কিন্তু পেরে উঠছি না। তার কারণ নিম্ন আদালত সম্পূর্ণভাবে সরকারের নিয়ন্ত্রণে। নানা রকম কৌশল অবলম্বনে জামিন বিলম্বিত করার চেষ্টা করছেন।
“দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির একমাত্র পথ হচ্ছে রাজপথ। আমরা বুঝতে পারছি এখন। আমরা আইনি লড়াই চালিয়ে যাব কিন্তু তার মাধ্যমে বেগম জিয়ার মুক্তি আসবে না। তার মুক্তি আসবে একমাত্র রাস্তায়। এজন্য আমাদের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।”
‘সবুজ বাংলা টোয়েন্টিফোর ডটকম’র প্রধান সম্পাদক আবদুল্লাহহিল মাসুদের সভাপতিত্বে ও সম্পাদক মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসানের পরিচালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, দৈনিক ইনকিলাবের সহযোগী সম্পাদক মোবায়েদুর রহমান, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, বিএনপির শামীমুর রহমান শামীম, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, জাগপার আসাদুর রহমান খান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।