প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভারতে স্থিতিশীলতার জন্য বাংলাদেশ যা দিয়েছে তা তারা সারা জীবন মনে রাখবে, তবে এর জন্য কোনো প্রতিদান তিনি চান না।
Published : 30 May 2018, 07:40 PM
ভারত সফর নিয়ে বুধবার বিকালে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন তিনি।
‘দিল্লির পাশে থাকছে ঢাকা, মোদীর কাছে ‘প্রতিদান’ চান হাসিনা’ শিরোনামে ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকার একটি সংবাদের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে এ প্রসঙ্গে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “আমি কোনো প্রতিদান চাই না। প্রতিদানের কী আছে এখানে? চাওয়ার অভ্যাস আমার একটু কম। দেওয়ার অভ্যাস বেশি।
“আমরা ভারতে যা দিয়েছি সেটা ভারত সারা জীবন মনে রাখবে। প্রতিদিনের বোমাবাজি, গুলি; আমরা কিন্তু ওদের শান্তি ফেরত দিয়েছি। এটা তাদের মনে রাখতে হবে। কাজেই আমরা ওগুলোর প্রতিদান চাই না।”
নবম সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার বাংলাদেশে অবস্থান নেওয়া ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান চালানো হয়।
সে সময় বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বেশ কয়েকজন শীর্ষ বিচ্ছিন্নতাবাদীকে ভারতের কাছে ফেরত দেয় বলে ওই দেশের সংবাদমাধ্যমে খবর আসে।
সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে ভারতের সহযোগিতার বিষয়টিও তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে তারা যে আমাদের সমর্থন দিয়েছে, শরণার্থীদের তারা সাহায্য করেছে, লাখ লাখ মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং দিয়েছে। যুদ্ধের ময়দানে একসাথে রক্ত দিয়েছে, আমরা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে সেটা স্মরণ করি।”
“প্রতিবেশীদের মধ্যে তিক্ততা থাকতেই পারে। কিন্তু আমার কোনো বক্তব্যে এই তিক্ততা যেন না হয়।”
তিস্তা চুক্তির বিষয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ নদী কমিশনের আলোচনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে আলোচনায় বাংলাদেশের মধ্যে তিস্তা ব্যারেজ নির্মাণের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “আপনি তিস্তা ব্যারেজ করলেন কেন? আমরা তো ডাউনস্ট্রিমে। আমরা তিস্তা ব্যারেজ করে এখন পানি পানি বলে চিৎকার করছি কেন?”
সাবেক সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদের শাসনামলে লালমনিরহাটে তিস্তা ব্যারেজ নির্মাণ করা হয়।
আরেক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামীতে ক্ষমতায় আসতে পারলে ঢাকার পান্থপথের এবং মতিঝিলের বক্স কালভার্ট ভেঙে নৌযান চলাচলের ব্যবস্থা করা হবে।
তিনি বলেন, “আগামীতে আসতে পারলে সব খুলে দেব। উপরে রাস্তা যাবে, নিচে নৌকা যাবে।”
তার এবারের ভারত সফরে দুই দেশের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ও ভারত দুই নিকটতম প্রতিবেশী দেশ। আমি মনে করি, এই সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান সুসম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হয়েছে। শান্তিনিকেতনে স্থাপিত বাংলাদেশ ভবন উভয় দেশের মধ্যে বিদ্যমান সাংস্কৃতিক বন্ধনকে আরও এগিয়ে নেবে।”
পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন ও বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধন এবং আসানসোলের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ সমাবর্তনে যোগ দিতে শুক্রবার সকালে দুই দিনের সফরে কলকাতা যান শেখ হাসিনা।
বিকালে কলকাতায় ফিরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মস্থান জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি পরিদর্শন করেন শেখ হাসিনা। পরে হোটেল তাজ বেঙ্গলে কলকাতার ব্যবসায়ী সমিতির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
পরদিন আসানসোলের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ সমাবর্তনে যোগ দেন শেখ হাসিনা, সেখানে তাকে ডি-লিট ডিগ্রি দেওয়া হয়। আসানসোল থেকে কলকাতায় ফিরে নেতাজী জাদুঘর পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী।
বিকালে হোটেল তাজ বেঙ্গলে শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর স্থানীয় সাংসদদের একটি প্রতিনিধি দল তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে একান্ত বৈঠকের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বৃদ্ধি, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনসহ স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করি।”
তিস্তার পানি নিয়ে কী আলোচনা হয়েছে-এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “দ্বিপক্ষীয় সব বিষয়েই আলোচনা হয়েছে। যৌথ নদী কমিশন হয়েছে, সেখানে আলোচনা চলছে।”
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ‘পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট’ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে তার ছোট বোন শেখ রেহানাসহ মন্ত্রিপরিষদের কয়েকজন সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টারা এবং বেশ কয়েকজন অধ্যাপক, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন।