বিএনপিকে বাদ দিয়ে নির্বাচন এবার করা যাবে না: খালেদা

সরকার চাইলেও বিএনপিকে বাদ দিয়ে একাদশ জাতীয় নির্বাচন করা যাবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন খালেদা জিয়া।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Jan 2018, 02:55 PM
Updated : 2 Jan 2018, 05:23 PM

মঙ্গলবার রাতে ছাত্র দলের সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, “আমরা নির্বাচনী দল, আমরা নির্বাচন করব। বাইরে রাখতে চাইলেই রাখা যাবে না। নির্বাচন করব আমরা।”

নির্দলীয় সরকারের অধীনে ওই নির্বাচনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “আপনারা (সরকার) যদি মনে করেন, আমাদের লোকজন ধরে নিয়ে যাবেন। তারপর নির্বাচন ঘোষণা করবেন, সেটা আর হবে না। ২০১৪ সালের মতো নির্বাচন আর হবে না। এই দেশে নির্বাচন হবে সকল দলের অংশগ্রহণে।

“বিএনপি সবচেয়ে বড় দল, তাকে (বিএনপি) বাদ দিয়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে পারে না। কারণ সারা পৃথিবী বুঝে গেছে যে, হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি, হবে না।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ভোট বর্জন করে প্রায় আড়াই দশক পর সংসদের বাইরে চলে আসে বিএনপি।

তারা এবারও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি করলেও তাতে গা করছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা। বরং গত নির্বাচনের আগে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সব দলের মতৈক্যের সরকার গঠনে বিএনপিকে অংশ নেওয়ার প্রস্তাব করা হলেও এবার আর তা হচ্ছে না বলে ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী-নেতারা বলে আসছেন।

তবে খালেদা জিয়া বলছেন, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার ‘জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার নয়’।

“ভোটে নির্বাচিত নয় বলেই তাদের অধীনে নির্বাচন হতে পারে না। আজকে সংসদ বলে কিছু নাই। হাসিনারা ক্ষমতায় থাকার জন্য সংসদ রেখে নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছিল। ২০১৪ সালে নির্বাচনে এরা তো ভোটই পায় নাই, এরা সংসদে থাকার যোগ্য নয়। কাজেই সংসদ ভেঙে দিয়েই নির্বাচন দিতে হবে। এই সংসদ রেখে নির্বাচন হবে না।”

এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যা বলেন সেই অনুযায়ী সব কিছু হয় মন্তব্য করেন বিএনপি নেত্রী বলেন, “আসলে কিছু চলছে না। দেশ পিছিয়ে যাচ্ছে। সব কিছু অচল হয়ে যাচ্ছে।

“আমরা বলতে চাই, এক ব্যক্তির শাসনে তো এদেশে চলতে পারে না। এজন্য দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেনি, সংসদীয় গণতন্ত্রের জন্য যুদ্ধ করেছিল। যে অত্যাচারী পাকিস্তানিরা করেছে, তার চেয়ে বেশি গুণ অত্যাচার করছে হাসিনার সরকার।”

বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে ‘অস্ত্রের মুখে’ প্রধান বিচারপতির পদ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন খালেদা জিয়া।

এখনও নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ না হওয়ায় সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “এখন পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয় না। কাজেই এখনও মতলবটা তাদের ভালো নয়। মওদুদ সাহেব (মওদুদ আহমদ) বলেছেন, একদিনও নাকি ওই পদ খালি রাখা যায় না।

“কাজেই আমরা বলতে চাই, হাসিনা যা চাইবে সেটা না করলে তাকে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হবে, তার নামে মামলা হবে, তাকে জেলে যেতে হবে, অত্যাচারিত হতে হবে।”

পদ্মাসেতু নিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, “এখন তারা পদ্মাসেতুর স্বপ্ন দেখাচ্ছে। আওয়ামী লীগের আমলে এই সেতু হবে না। কোন একটা যদি জোড়াতালি বানায় সেই সেতুতে কেউ উঠতে যাবেন না, অনেক রিস্ক আছে।”

ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের সুশৃঙ্খল ও ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, “ঐক্য, ঈমান ও শৃঙ্খলা-এই তিনটি জিনিস তোমাদের মধ্যে থাকতে হবে। তোমাদের আরও সুশৃঙ্খল হতে হবে। তাহলে সব কিছু জয় করা সম্ভব হবে। শুধু শ্লোগান দিলে চলবে না।”

রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে রাতে এই সমাবেশ হয়। জাতীয়তাবাদী ছাত্র দলের ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দুপুর ২টায় এই মিলনায়তনে অনুষ্ঠানটি হওয়ার কথা থাকলেও কর্তৃপক্ষ সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় রাষ্ট্রপতির অনুষ্ঠানের কথা বলে মিলনায়তনে তালা ঝুলিয়ে দেয়।

এদিকে দুপুর ২টা থেকে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গনে জড়ো হতে থাকেন। হাজার হাজার নেতা-কর্মীর উপস্থিতিতে বিকাল সাড়ে ৪টায় সেখানে পৌঁছান খালেদা জিয়া। মিলনায়তন তালাবন্ধ থাকায় গাড়িতে বসে অপেক্ষায় থাকেন তিনি।

বিকাল ৫টা ২০মিনিটে ইনস্টিটিউশন কর্তৃপক্ষ মিলনায়তনের তালা খুলে দেওয়ার পর মঞ্চা সজ্জা হলে সাড়ে ৫টার দিকে সেখানে যান বিএনপি প্রধান।

অনুমতি দিয়েও নির্ধারিত সময়ে অনুষ্ঠান করতে না দেওয়ায় ইনস্টিটিউশন কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করেন খালেদা জিয়া।

ছাত্র দলের সভাপতি রাজীব আহসানের সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদের পরিচালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিব উন নবী খান সোহেল, ফজলুল হক মিলন, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কামরুজ্জামান রতন, এবিএম মোশাররফ হোসেন, হাবিবুর রশীদ হাবিব, শফিউল বারী বাবু, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, নাজিমউদ্দিন আলম, শিরিন সুলতানা, রেহানা আখতার রানু, শাম্মী আখতারসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।