এক সময় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে থাকা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের নেতৃত্বে ‘ইসলামী মূল্যবোধের’ নতুন এক জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘সম্মিলিত জাতীয় জোট’, সংক্ষেপে ইউএনএ।
Published : 07 May 2017, 01:00 PM
রোবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে নতুন এই জোটের ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এরশাদ বলেন, “স্বাধীনতার চেতনা এবং ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলগুলো এই জোটের অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে। কোনো স্বাধীনতাবিরোধী রাজনৈতিক দলের স্থান এই জোটে হবে না।
# প্রাথমিকভাবে জাতীয় পার্টি ছাড়াও নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত দল ইসলামিক ফ্রন্ট, মাসখানেক আগে ৩৪টি ইসলামপন্থি সংগঠনকে নিয়ে আত্মপ্রকাশ করা ‘জাতীয় ইসলামী মহাজোট’ এবং ২০১৫ সালে ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার নেতৃত্বে যাত্রা শুরু করে পরে তাকেই অব্যাহতি দেওয়া ৩১ সংগঠনের ‘বাংলাদেশ জাতীয় জোট’ রয়েছে এরশাদের এই নতুন জোটে।
# এরশাদ বলেছেন, ইউনাইটেড ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স তিনটি ‘মৌলিক আদর্শের’ ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। ১. ইসলামী মূল্যবোধ তথা সকল ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি সমান মর্যাদা প্রদর্শন। ২. স্বাধীনতার চেতনা। ৩. বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক জীবনবোধ নিশ্চিত করা।
# জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ এই জোটের প্রধান। প্রতিটি দলের মহাসচিবরা থাকবেন মুখপাত্র হিসেবে। আর জাতীয় পার্টির রুহুল আমিন হাওলাদার হবেন জোটের প্রধান মুখপাত্র।
# জোটগতভাবে জাতীয় ও সব পর্যায়ের নির্বাচনে অংশগ্রহণ, সরকার গঠন এবং দেশের উন্নয়নে কাজ করা এ জোটের উদ্দেশ্য বলে সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের ভাষ্য।
# জোটের অন্তর্ভূক্ত দলের ক্ষেত্রে যে কোনো নির্বাচনে নিবন্ধিত দলের প্রতীক ব্যবহারের বিষয়টি উন্মুক্ত থাকবে।
# ঘোষণাপত্রে বলা হয়, এই জোট নির্বাচনী ফলাফল মেনে নেবে। ফল যা-ই হোক না কেন, জোট বহাল থাকবে। জোটের স্থায়ীত্বের জন্য রাজনৈতিক বিপদে-আপদে, সুদিনে-দুর্দিনে শরিকরা একে-অপরের পাশে থাকবে। স্বার্থের কারণে কোনো দল জোট ছেড়ে যাবে না- এই অঙ্গীকার থাকবে।
গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সামরিক শাসক এরশাদ ২০০১ সালের নির্বাচনে ইসলামী ঐক্য ফ্রন্ট গড়ে ভোটে অংশ নিয়েছিলেন।
২০০৭ সালে বাতিল হওয়া সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে যোগ দিয়েছিলেন তিনি।বিএনপির বর্জনের মধ্যে ২০১৪ সালের নির্বাচনে আলাদাভাবে অংশ নিলেও জাতীয় পার্টি পরে সরকারে যোগ দেয়।
সংবাদ সম্মেলনে এরশাদ বলেন, “দেশ ও জাতির প্রয়োজনে এবং আধুনিক বাংলাদেশ গড়তে আজ একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট গঠনের ঘোষণা দিচ্ছি। অনেকে আমার আহ্বানে সাড়া দিয়ে ইতোমধ্যে এগিয়ে এসেছেন। জোট গঠনের পর আরও কেউ অন্তর্ভূক্ত হতে চাইলে বিবেচনা করা হবে।”
জোটে যোগ দেওয়ার বিষয়ে আরও দুটি নিবন্ধিত দলের সঙ্গে ‘কয়েক দফা’ বৈঠক করার কথা বললেও দলগুলোর নাম জানাননি এরশাদ।
“তারা জোটে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। দলীয় ফোরামে আলোচনা করে আমাদের জানালে সুবিধামত সময়ে জোটে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে বলে আশা করছি।”
ঘোষণাপত্রে এরশাদ বলেন, “মহান আল্লাহপাকের উপর সর্বোচ্চ বিশ্বাস, আস্থা ও ভরসা রেখে আমরা নিজ নিজ দল ও জোটের পক্ষে নিম্ন স্বাক্ষরকারীরা দেশ ও জাতির স্বার্থে জাতীয় পর্যায়ে একটি জোট গঠনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করছি। আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হবে- জোটগতভাবে জাতীয় নির্বাচনসহ সকল পর্যায়ের নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং জোটগতভাবে সরকার গঠন করে দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা, সমাজে ন্যায় বিচার ও সু-শাসন নিশ্চিত করা এবং উন্নয়নের ধারা প্রবর্তন করে সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা।”
নতুন জোট গঠনের যৌক্তিকতা তুলে ধরে তিনি বলেন, বর্তমানে সংসদীয় গণতান্ত্রিক বিশ্বে জোটগত রাজনৈতিক প্রবণতা বিরাজ করছে। বাংলাদেশেও এই ধারা অব্যাহত আছে। জোটের রাজনীতির মাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে সৌহার্দ স্থাপনের সুযোগ থাকে, যা সংঘাতের রাজনীতির বিপরীতে সম্প্রীতির রাজনীতি প্রবর্তন করতে পারে।
“জোট গঠনের জন্য আমরা দুইভাবে জোটের শরিক নির্বাচনের নীতি গ্রহণ করেছি। যে সকল দল নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত আছে- সেই দল সরাসরি জোটের শরিক হিসেবে থাকবে এবং যেসকল দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে কিংবা নিবন্ধিত হওয়ার অপেক্ষায় আছে, তাদের সমন্বয়ে মোর্চা বা জোট গঠন করে সেই জোটকে আমরা শরিক হিসেবে বৃহত্তর জোটে অন্তর্ভুক্ত করেছি।”
অন্যদের মধ্যে জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার এবং প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।