ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ
দারুণ এক মাইলফলক স্পর্শ করলেন সাকিব, ৮ উইকেট নিয়ে রেকর্ড গড়লেন রাজা, আরেকটি সেঞ্চুরিতে তামিম ইকবালের রেকর্ডের আরও কাছে এনামুল, টানা ১৬ জয় আবাহনীর।
Published : 06 May 2024, 07:11 PM
দুই ম্যাচ বাকি থাকতেই শিরোপা নিশ্চিত করে ফেলেছিল আবাহনী লিমিটেড। তবে বাকি ছিল ট্রফি উঁচিয়ে উদযাপন। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের শেষ দিনে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানসহ বোর্ডের অন্যান্য পরিচালকদের উপস্থিতিতে উৎসবমুখর পরিস্থিতিতে সোমবার শিরোপা তুলে দেওয়া হলো চ্যাম্পিয়নদের হাতে।
ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটের শীর্ষ টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ ২৩ বারের চ্যাম্পিয়নদের সমর্থকদের মধ্যেও ছিল অন্যরকম উন্মাদনা। ম্যাচের শুরু থেকে ব্যান্ড পার্টির বাজনায় মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের গ্র্যান্ড স্ট্যান্ড মাতিয়ে রাখেন তারা। সমর্থকদের স্লোগানে স্লোগানে শেষ ম্যাচে শাইনপুকুরকে হারিয়ে অপরাজিত থেকেই লিগ শেষ করে চ্যাম্পিয়নরা। শেষ ম্যাচটি সেঞ্চুরিতে রাঙান এনামুল হক।
লিগের শেষ দিনের অন্য ম্যাচে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবকে গুঁড়িয়ে দারুণ এক কীর্তি গড়েন রেজাউর রহমান রাজা। ৮ উইকেট নিয়ে তিনি নাম লেখার রেকর্ড বইয়ে। একই ম্যাচে লিস্ট 'এ' ক্রিকেটে ৪০০ উইকেটের মাইলফলক পূর্ণ করেন সাকিব আল হাসান। তবে ব্যাটিং ব্যর্থতায় পরাজিত দলে থাকতে হয় তাকে।
অজেয় আবাহনী, তামিমের আরও কাছে এনামুল
লিগের শেষ ম্যাচে শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাবকে ৪ উইকেটে হারায় আবাহনী লিমিটেড। ২৩৫ রানের লক্ষ্য ২৩ বল বাকি থাকতে ছুঁয়ে ফেলে তারা।
প্রিমিয়ার লিগের লিস্ট 'এ' স্বীকৃতি পাওয়ার পর প্রথম দল হিসেবে লিগের ১৬ ম্যাচের সবকটি ম্যাচ জেতার নজির গড়ল আবাহনী। গত আসরের শেষ ম্যাচে জয়সহ লিগে টানা ১৭ ম্যাচ অপরাজিত তারা।
অপরাজিত সেঞ্চুরিতে আবাহনীর জয় সহজ করেন এনামুল। ৭ চার ও ৪ ছক্কায় ১২০ বলে তিনি করেন ১১০ রান। এবারের লিগে এটি তার দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। ৫৬৩ রান করে রানের তালিকায় চার নম্বরে থেকে লিগ শেষ করলেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান।
সব মিলিয়ে লিস্ট 'এ' ক্রিকেটে এনামুলের ২০তম সেঞ্চুরি এটি। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে এই সংস্করণে তার চেয়ে বেশি শতরান শুধু তামিম ইকবালের (২২টি)।
এর আগে শাইনপুকুরকে দুইশ পার করান অমিত হাসান ও খালিদ হাসান। আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করা অমিত এদিন খেলেন ১১৬ বলে ৭৭ রানের ইনিংস। বাঁহাতি ওপেনার খালিদ করেন ৫৮ বলে ৫৮ রান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব: ৫০ ওভারে ২৩৪/৮ (খালিদ ৫৮, জিসান ৮, অমিত ৭৭, শাহরিয়ার ৭, ইরফান ৩৩ আহত অবসর, আকবর ৮, ইলিয়াস ২, মুকিদুল ২, এনামুল ১৪, নাঈম ৮*, তুষার ৪*; ফাহাদ ৭-১-৩২-০, রওশন ৮-০-৫৬-২, নাহিদুল ১০-০-৩৪-১, মোসাদ্দেক ১০-০-৩৮-২, জারিফ ৩-০-২৫-০, রাকিবুল ১০-০-২৯-৩, সাব্বির ২-০-১৭-০)
আবাহনী লিমিটেড: ৪৬.১ ওভারে ২৩৫/৬ (নাঈম ৭, সাব্বির ১৪, এনামুল ১১০*, মাজহারুল ২৩, মোসাদ্দেক ২৯, নাহিদুল ২১, রকিবুল ১, জারিফ ১১*; মুকিদুল ৮-০-৪৭-২, এনামুল ৫.১-০-৩৮-০, ইলিয়াস ১০-০-৪১-২, নাঈম ১০-১-৩৬-২, তুষার ১০-০-৫০-০, জিসান ৩-০-১৭-০)
ফল: আবাহনী লিমিটেড ৪ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: এনামুল হক
বিধ্বংসী রাজায় তছনছ শেখ জামালের ব্যাটিং
ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলি স্টেডিয়ামে ৬.৩ ওভারে ২৩ রানে ৮ উইকেট নেন রেজাউর রহমান রাজা। লিস্ট 'এ' ক্রিকেটে বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে এটিই সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড।
এত দিন রেকর্ডটি ছিল ইয়াসিন আরাফাতের। ২০১৮ সালের লিগে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের হয়ে ৪০ রানে ৮ উইকেট নিয়েছিলেন তরুণ পেসার।
বিশ্ব ক্রিকেটে রেকর্ডটি শাহবাজ নাদিমের। ২০১৮ সালে ১০ রানে ৮ উইকেট নেন বাঁহাতি স্পিনার।
রাজার রেকর্ডের ম্যাচটি ১৯৯ রানে জেতে প্রাইম ব্যাংক। ২৭০ রানের পুঁজি নিয়ে শেখ জামালকে স্রেফ ৭১ রানে গুটিয়ে দেয় তারা।
চোটের কারণে লিগের শুরুর অংশ খেলতে পারেননি রাজা। শেষ দিকে যোগ দিয়ে ৬ ম্যাচে তার শিকার ১৩ উইকেট।
আগের ম্যাচে ঝড়ো সেঞ্চুরি করা সাকিব আল হাসান এই ম্যাচে আউট হন প্রথম বলে। ব্যাট হাতে ব্যর্থ হলেও বোলিংয়ে ২ উইকেট নেন অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার। তাতে লিস্ট 'এ' ক্রিকেটে ৪০০ উইকেট পূর্ণ হয় তার।
এই সংস্করণে ৪০০ উইকেট শিকারি বাংলাদেশের তৃতীয় বোলার সাকিব। তার আগের দুজন আব্দুর রাজ্জাক (৪১২) ও মাশরাফি বিন মুর্তজা (৪৬৮)।
প্রাইম ব্যাংককে আড়াইশ পার করানোর কারিগর জাকির হাসান ও মুশফিকুর রহিম। আগের ম্যাচে ১২ ছক্কায় দেড়শছোঁয়া ইনিংস খেলা জাকির এদিন করেন ৯ চার ও ২ ছক্কায় ৯৫ বলে ৮৫ রান।
দারুণ ছন্দে থাকা মুশফিক খেলেন ৭ চার ও ২ ছক্কায় ৯৫ বলে ৭৮ রানের ইনিংস। জাকিরের সঙ্গে তৃতীয় উইকেট জুটিতে ১৩৩ রান যোগ করেন তিনি।
শেষ ম্যাচে ব্যর্থ হলেও সব মিলিয়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ ৬১৮ রান ও বল হাতে ১২ উইকেট নিয়ে এবারের লিগের সেরা ক্রিকেটার নির্বাচিত হন শেখ জামালের সাইফ হাসান।
১৬ ম্যাচে ১০ জয় নিয়ে ৩ নম্বরে থেকে লিগ এবারের শেষ করল প্রাইম ব্যাংক। একটি কম জয়ে পাঁচে শেখ জামাল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব: ৫০ ওভারে ২৭০ (তামিম ২২, শাহাদাত ১২, জাকির ৮৫, মুশফিক ৭৮, মিঠুন ১, সাব্বির ২, সানজামুল ৩, এনামুল ১৭, হাসান ২২, নাজমুল ১৫*, রাজা ১; শফিকুল ৭-০-৩৯-২, রিপন ৭-০-৪৪-০, আবেদুর ১০-০-৪২-২, সাইফ ৮-১-৪৩-১, আরিফ ১০-১-৪০-২, তাইবুর ৬-০-৪৬-২)
শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব: ২১.৩ ওভারে ৭১ (সাইফ ৫, সৈকত ১২, ফজলে মাহমুদ ২, সাকিব ০, সোহান ২, ইয়াসির ১৬, তাইবুর ২, রিপন ৪, আবেদুর ৪, আরিফ ৯*, শফিকুল ৮; হাসান ৭-২-২৪-২, নাজমুল ৬-১-১৩-০, রাজা ৬.৩-০-২৩-৮, সানজামুল ২-০-১০-০)
ফল: প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব ১৯৯ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: রেজাউর রহমান
ছোট পুঁজিতে বড় জয় মোহামেডানের
বিকেএসপির ৩ নম্বর মাঠে স্রেফ ১৭৬ রানের পুঁজি নিয়েও ৫৩ রানে জয় পায় মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। রান তাড়ায় ১২৩ রানে গুটিয়ে যায় গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স।
১৬ ম্যাচে ১২ জয়ে রানার্স-আপ হয়ে লিগ শেষ করল মোহামেডান। ২০১০-১১ মৌসুমের পর আবার লিগে দ্বিতীয় হলো ঐতিহ্যবাহী দলটি। সেবারও চ্যাম্পিয়ন হয় আবাহনী।
শেষ ম্যাচে মোহামেডানের জয়ের নায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার এক ম্যাচে দুই দল মিলিয়েই সর্বোচ্চ ৪৪ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। পরে বল হাতে নেন ২টি উইকেট।
মোহামেডানকে অল্প রানে আটকে রাখার কারিগর গাজী গ্রুপের লেগ স্পিনার ওয়াসি সিদ্দিকি। ৪২ রানে ৪ উইকেট নেন এই বছরই অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলা তরুণ বোলার। গত ওয়ানডে বিশ্বকাপে জাতীয় দলের সঙ্গে ছিলেন তিনি নেট বোলার হিসেবে। এছাড়া বাঁহাতি স্পিনে ৩ উইকেট নেন হুসনা হাবিব।
এ দিন ৬ রানে আউট হন মাহিদুল ইসলাম। শেষটা ভালো না হলেও সব মিলিয়ে ১৬ ম্যাচে ৭ ফিফটির সঙ্গে ১ সেঞ্চুরিতে ৬৪৭ রান করে তিনিই লিগের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক।
লিগের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারিও মোহামেডানের। শেষ ম্যাচে কোনো উইকেট না পেলেও সব মিলিয়ে ৩১ উইকেট নিয়ে সবার ওপরে বাঁহাতি পেসার আবু হায়দার।
অল্প পুঁজিতেও গাজী গ্রুপকে আটকে রাখেন মূলত তিন স্পিনার মিরাজ, নাসুম আহমেদ ও নাঈম হাসান। ২৭ রানে ৩ উইকেট নেন নাঈম। নাসুম ৯ ওভারে স্রেফ ১৬ রান নেন ২ উইকেট। এছাড়া তরুণ পেসার মুশফিক হাসান ধরেন ২ শিকার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব: ৪৭.৩ ওভারে ১৭৬ (হাবিবুর ০, রনি ৩৯, ইমরুল ৯, মাহিদুল ৬, মিরাজ ৪৪, রুবেল ১৮, আরিফুল ১৬, আবু হায়দার ৪, নাসুম ১৫, নাঈম ২২, মুশফিক ০*; রুয়েল ৭-০-৪৪-১, মাসুম ৩-০-১৬-০, পারভেজ ১০-১-২৮-১, হুসনা হাবিব ৯.৩-২-২৪-৩, মাহফুজুর ৮-১-২১-০, ওয়াসি ১০-০-৪২-৪)
গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স: ৩২.১ ওভারে ১২৩ (মেহেদি ২৩, হাবিবুর ১২, প্রিতম ২৩, সাব্বির ৪, আল আমিন ১, মাহফুজুর ৬, পারভেজ ৭, মাসুম ২৯, ওয়াসি ১৩, রুয়েল ০, হুসনা হাবিব ০*; আবু হায়দার ৪-০-৩৫-০, নাসুম ৯-১-১৬-২, মিরাজ ৬.১-০-২৪-২, মুশফিক ৪-১-২১-২, নাঈম ৯-০-২৭-৩)
ফল: মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ৫৩ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: মেহেদী হাসান মিরাজ