প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশনীতি ও অভ্যন্তরীণ নীতিতে এতসব উথাল-পাতাল পরিবর্তন আনছেন, যার সবগুলোর হিসেবে রাখা যুক্তরাষ্ট্রের তীক্ষ্ণ রাজনৈতিক পণ্ডিতদের জন্যও কঠিন হয়ে উঠেছে।
Published : 05 Feb 2025, 08:16 PM
‘আবার ট্রাম্প— পরবর্তী চার বছর হবে উথাল-পাতাল’– যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের রাতে ফলাফল দেখতে দেখতেই বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জন্য লেখা কলামের শিরোনাম ছিল এটি, যা ২০২৪ সালের ৬ ডিসেম্বর প্রকাশিত হয়েছিল।
আমি তখন যা অনুমান করেছিলাম, তা ট্রাম্পের কার্যভার গ্রহণের মাস না পেরোতেই তা সুস্পষ্ট হয়ে উঠছে । প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড জে. ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশনীতি ও অভ্যন্তরীণ নীতিতে এতসব উথাল-পাতাল পরিবর্তন আনছেন, এগুলোর সব কয়টার হিসেব রাখা যুক্তরাষ্ট্রের খুব তীক্ষ্ণ রাজনৈতিক পণ্ডিতদের জন্যও কঠিনা হয়ে উঠেছে । কারা যে এইসব পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এবং কি পরিমাণে, সেটা বুঝে উঠতে কিছুটা সময় লাগবে।
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে তার মূল বুলি ছিল— ‘আমেরিকাকে আবার মহান করো’, যাকে সংক্ষেপে বলা হতো ‘মাগা’। প্রথম মেয়াদে আমেরিকাকে আরও মহান করার প্রয়াসে ট্রাম্প তৃতীয় বিশ্বের একনায়ক নেতাদের মতো নিজের কর্তৃত্বকে আরও জোরালো করার জন্য যেসব কর্মকাণ্ড করেছিলেন তা যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের ওপর সরাসরি আঘাত হিসেবে ধরে নেয়া যায়। একটা উদহারণ দিচ্ছি, ২০২০-এর নির্বাচনে হেরে তিনি তার সমর্থকদের দিয়ে কংগ্রেস ভবনের অভ্যন্তরে আক্রমণ করালেন, যাতে করে কংগ্রেস সদস্যরা নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা না দিতে পারেন। ২০২৫ সালে নির্বাচিত হয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ‘আমেরিকাকে আবার মহান করো’-এর সঙ্গে নতুন বুলি যোগ করলেন ‘যুক্তরাষ্ট্রের জন্য স্বর্ণযুগ’। স্বর্ণযুগের সূচনাতেই কত মানুষের স্বপ্ন যে চুরমার হয়ে গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের কত মিত্রদেশের স্বার্থে যে আঘাত লেগেছে, তার পরিধি ও ধকল শুধু বাড়ছেই।
মানবিক অনুদান: হৃদয়হীন কাট
শপথ নেওয়ার প্রথম দিনই ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশ জারি করেন যাতে নতুন কোনো অনুদান অনুমোদন না করার সিদ্ধান্ত জানানো হয়। তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বা সেক্রেটারি অব স্টেট ২৪ জানুয়ারি ঘোষণা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সাহায্য কর্মসূচি সংস্থা ইউএসএইড-এর যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ করে দেন। ইউএসএইড-এর ৫৬ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বলে দেয়া হয়, আপাতত কাজে আসার প্রযোজন নেই। ইউএসএইড-এর কাজকর্ম বন্ধ করে দেওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত কি শুধু এই ৫৬ জন কর্মকর্তা?
পৃথিবীর সব উন্নয়নশীল দেশেই ইউএসএইড-এর কার্যক্রম রয়েছে। বিশ্বের অনেক বড় বড় ত্রাণ সংস্থা যুক্তরাষ্ট্রের অনুদান নিয়ে গরিব দেশগুলোর শিশুদের জন্য খাদ্য, পুষ্টি ও স্বাস্থসেবা দিয়ে চলেছে।
যুক্তরাষ্ট্র প্রতি বছর ৪০ বিলিয়ন ডলার মানবিক সাহায্য দিয়ে থাকে। তাদের থেকে অনুদান নিয়ে সাহায্য সংস্থাগুলো পৃথিবীর দরিদ্র দেশগুলোতে নারী, পুরুষ ও শিশুদেরকে বিভিন্নভাবে সহায়তা দিয়ে থাকে। এখন হাইতির দরিদ্র গর্ভবতী মায়েদের প্রসূতিদানের জন্য প্রতিষ্ঠিত ক্লিনিকগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। নাইজেরিয়ার কৃষকদেরকে যে সহযোগিতা দেয়া হতো তা বন্ধ হয়ে যাবে। সাব-সাহারান আফ্রিকার দেশগুলো মার্কিন সাহায্যের একটা বড় অংশ পেয়ে থাকে, যা দিয়ে দারিদ্র ও ক্ষুধা নিবারণের কাজ করা হয়। নাইজেরিয়া, মোজাম্বিক, তানজানিয়া, উগান্ডা, কেনিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকার দরিদ্র জনগণ প্রত্যক্ষভাবে উপকৃত হয় যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য থেকে। আফ্রিকার দেশগুলোতে এইচআইভি এইডস একটা বড় সমস্যা। যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য ছাড়া আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের এইডস ক্লিনিকগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। এছাড়াও রয়েছে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ প্রোগ্রাম, স্বল্পমূল্যে গরিবদের জন্য বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার জন্য ‘পাওয়ার আফ্রিকা’-এর প্রোগ্রাম, শিশুদের জন্য পুষ্টি এবং বিভিন্ন দেশে শরণার্থীদের জন্য সাহায্য। এই তালিকা অনেক দীর্ঘ, আর প্রতিটি ক্ষেত্রেই এক্ষুণি বিপর্যয় শুরু হবে, বাড়বে দুর্ভিক্ষ ও লোকক্ষয়। পরিণামে শুরু হবে রাজনৈতিক অস্থিরতা।
সামরিক সাহায্য: কমে যাবে ইউএস ডলার
যুক্তরাষ্ট্রের অনুদানের আর একটা বড় অংশ সামরিক সাহায্য ও ইউরোপের নিরাপত্তা বলয় রক্ষার্থে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া ইসরায়েল ও মিশর তাদের থেকে বিপুল পরিমাণ সামরিক ও অসামরিক সাহায্য পেয়ে থাকে। ইসরায়েলের জন্য সাহায্য যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কোনোভাবেই কমাবে না, তা সহজেই আন্দাজ করা যায়।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইউক্রেইন পেয়েছে সবচেয়ে বড় মার্কিন সাহায্য— যার পরিমাণ গত বছর ছিল সাড়ে ষোলো বিলিয়ন ডলার। ট্রাম্প ক্রমান্বয়ে ইউক্রেইনে সামরিক সাহায্য বন্ধ করে দেবেন। ইউক্রেইনকে বাদ দিয়েই ট্রাম্প কথা বলছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে। একটা ভালো দিক হলো ইউক্রেইনে মার্কিন সাহায্য বন্ধ হলে এই উন্মাদনার যুদ্ধ বন্ধ হয়ে যাবে। প্রাণ বাঁচবে হাজার হাজার মানুষের। কিন্তু সমস্যা বাড়তে পারে ইউরোপীয় দেশগুলোর। পুতিন যদি তার যুদ্ধাংদেহি মনোভাব না বদলান, তাহলে ইউরোপীয় দেশগুলো বিশেষ করে পোল্যান্ড দারুণ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে। ইউরোপীয় দেশগুলোর নিরাপত্তায় ট্রাম্পের মনোভাব বেশ শিথিল। একটা দিক দিয়ে ট্রাম্প সম্ভবত সঠিক— ইউরোপের দেশগুলো বছরের পর বছর যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের ট্যাক্সের অর্থে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে। ট্রাম্প একেবারে বন্ধ না করলেও, এই অর্থের যোগান অনেক কমিয়ে দেবেন এবং ইউরোপিয়ানদের বাধ্য করবেন নিজেদের নিরাপত্তায় আরও বেশি অর্থ খরচ করতে।
বিদেশি পণ্যে শুল্ক: বাণিজ্যিক যুদ্ধ
ট্রাম্প ক্ষমতা নিয়েই বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে একটা নতুন যুদ্ধ শুরু করেছেন। শত্রু-মিত্র কোনো বাছবিচার না করেই তিনি বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর শুল্ক বসাবার ঘোষণা দিয়েছেন। এতে প্ৰভাব পড়বে কানাডা, মেক্সিকো এবং চীনের অর্থনীতিতে। এইসব নতুন শুল্কের কারণ বিভিন্ন দেশের জন্য বিভিন্ন। চীনের জন্য বাণিজ্যে ঘাটতি এবং অসম বাণিজ্যিক নীতি অনুসরণের শাস্তি। যদিও আসল মূল্য দিতে হবে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাসাধারণকে। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাবে, মুদ্রাস্ফীতি কেন্দ্রীয় সুদের হার বাড়াবে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে এসব বাড়তি ভার বইতে হবে। প্রত্যেক মার্কিন নাগরিককে বছরে এক লক্ষ ৩০ হাজার টাকা বেশি খরচ করতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি চীনের সঙ্গে দিন দিন বাড়ছে। প্রথমে ট্রাম্প চীন থেকে আমদানির ওপর ৫০ থেকে ১০০ ভাগ পর্যন্ত শুল্ক বসাবার হুমকি দিয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ চীনের ব্যাপারে তাকে আর তেমন আগ্রাসী মনে হচ্ছে না। শপথ গ্রহণ করার পর তার শুল্ক খড়গ নেমে এসেছে মূলত মেক্সিকো ও কানাডার ওপর। চীন থেকে আমদানির ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক বসালেও, ট্রাম্প কানাডা ও মেক্সিকো থেকে আমদানির ওপর শুল্ক বসিয়েছেন ২৫ শতাংশ।
ট্রাম্পের ধারণা, এই দুই দেশ বিপুল পরিমাণ অবৈধ অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়ে তাদের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। অবৈধ অভিবাসীরা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে কি অবদান রাখছে বা কতটুকু ক্ষতি করছে, তা অবশ্য ভিন্ন প্রসঙ্গ। কিন্তু মেক্সিকো থেকে অবৈধ অভিবাসী আসলেও, কানাডাকে এই দলে ফেলা হাস্যকর। এটা কানাডাকে ৫১তম রাজ্য করার একটা ফন্দিও হতে পারে। কানাডার আর্থিনীতি এমনিতেই বেশ দুর্বল, শুল্ক বসিয়ে তাদেরকে আরও দুর্বল করাটাই উদ্দেশ্য— ট্রাম্পের ধারণা তাহলে কানাডিয়ানরা আমেরিকাতে ভিড়ে যাবে। অপরদিকে শুল্কের জন্য মেক্সিকোর অর্থনীতিতে টানাপোড়ন হলে, আরও বেশি অবৈধ অভিবাসী মেক্সিকো থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকবে। কিন্তু কে বোঝাবে ট্রাম্পকে এইসব?
কানাডাও বসে নেই। কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোও যুক্তরাষ্ট্রথেকে আমদানিকৃত্য পণ্যের ওপর ২৫% শুল্ক বসিয়েছেন। চীন আর মেক্সিকোও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে শুল্ক বসাবার ঘোষণা দিয়েছে। চারিদিকে কি যে উথাল-পাতাল!
জনশূন্য গাজা: অত সোজা নয়
ট্রাম্প যখন গাজায় যুদ্ধ বিরতি করার জন্য ইসরায়েল ও হামাসকে চাপ দিচ্ছিলেন, তখন ধারণা করা হয়েছিল এটা ঘটছে মানবিক কারণে। কিন্তু মানবিক কারণে যে ট্রাম্প কিছু করেন না, তা সকলের আগেই জানা উচিত ছিল। সম্প্রতি কারণটা ট্রাম্প তার কোটের পকেট থেকে বের করে দিয়েছেন। তিনি চান সব গাজাবাসীকে জর্ডান ও মিশরে পাঠিয়ে দিতে, তারপর সম্ভবত গাজায় গড়ে তুলবেন ট্রাম্প রিয়েল এস্টেটের বিরাট রাজত্ব।
ভূমধ্যসাগরের সৈকতে গাজার অবস্থান ভূমিদূস্যুদের জন্য স্বর্গভূমিই বটে। গাজার ওপর ট্রাম্প এবং তার বড় জামাতা জাওয়েদ কুশনারের লোভ অনেকদিন থেকেই। দুজনেই জাত রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী। তাদের কাজই হলো বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ভূমি দখল ও মেগা রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা করা— কোথাও বাসস্থান, কোথাও হোটেল আবার কোথাও গলফ মাঠ। বাংলাদেশিদের কাছে খুব পরিচিত মনে হবে ট্রাম্পের এই স্কিমটা। মিশর গাজার কোনো অধিবাসীকে তাদের দেশে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তাছাড়া জাতিসংঘের চার্টারে স্পষ্ট লেখা রয়েছে কোনো জনবসতিকে জোরপূর্বক তাদের ভূমি থেকে তাড়ানো যাবে না এবং তা যুদ্ধাপরাধের সামিল হবে।
গাজাবাসী ঘৃণাভরে ট্রাম্পের এই আগ্রাসনমূলক স্কিমকে প্রত্যাখান করেছে। তারা বলে দিয়েছে, নিজ ভূমি থেকে তারা একচুলও নড়বে না। এতে কারও সন্দেহ থাকার কথা নয়। ১৫ মাসে ধরে আধুনিক বিমান ও ভারি অস্ত্র দিয়ে অনবরত হামলা করেও ইসরায়েল গাজাবাসীদেরকে আত্মসমর্পণ করাতে পারেনি। তারা নিজেদের প্রাণ দিয়েছে, কিন্তু দেশ দেয়নি। যুদ্ধবিরতীর মাধ্যমে ইসরায়েলি বন্দীদেরকে ফিরিয়ে দিয়ে তারা প্রমাণ করেছে, তুমি চুক্তি করতে পারবে, কিন্তু গাজাবাসীদেরকে নিশ্চিহ্ন করতে পারবে না। ট্রাম্পও তা পারবে না।
গ্রিনল্যান্ড: হয়ে যাবে ট্রাম্পের
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন গ্রিনল্যান্ডকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একীভূত করতে। পৃথিবীর সর্ব উত্তরে আর্কটিক এলাকায় গ্রিনল্যান্ডের অবস্থান, ডেনমার্কের অধীনে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল। বিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, “আমার মনে হয়, গ্রিনল্যান্ড পেয়ে যাবো। গ্রিনল্যান্ড-এর ৫৭ হাজার অধিবাসী আমাদের সঙ্গে আসতে চায়।” ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী ট্রাম্পকে ফোন করে তীব্র ভাষায় বলে দিয়েছেন, গ্রিনল্যান্ড বিক্রির জন্য নয়। আপাতত ট্রাম্প এ ব্যাপারে চুপ, তবে তিনি হাল ছেড়ে দেবেন তা ভাবার কারণ নেই। আমাদের দেশের গ্রামের বখাটে ছেলেরা প্রথমে সুন্দরী মেয়েদেরকে বিয়ে করার জন্য অভিভাবকের কাছে প্রস্তাব পাঠায়, প্রত্যাখ্যাত হলে দলবল নিয়ে মেয়েটাকে জোর করে তুলে নেয়। ট্রাম্পও জোর করে গ্রিনল্যান্ড দখল করলে চমকাবার কিছু নেই।
কানাডার ওপরেও ট্রাম্পের চোখ রয়েছে। অনেকদিন ধরে, কখনো ঠাট্টার ছলে আবার কখনোবা গুরুত্ব দিয়ে তিনি ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম রাষ্ট্র বানাবেন। যদিও অনেক কানাডাবাসীর থেকে তিনি সমর্থন পাবেন, কিন্তু কানাডার আকার ও অঞ্চলগুলোর স্বকীয় স্বত্রন্ত্র তার ইচ্ছায় বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
অভিবাসীর দেশ: হটাও বেআইনি অভিবাসী
বেআইনি অভিবাসীদেরকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তাড়ানো ট্রাম্পের অনেক পুরনো কর্মসূচি। তার প্রথম মেয়াদে বেশ চেষ্টা করা হয়েছিল বিচ্ছিন্নভাবে, তেমন কোনো ফল হয়নি। এবার তিনি উঠেপড়ে লেগেছেন। এর মধ্যে ধর-পাকড় শুরু হয়ে গেছে এবং অবৈধ অভিবাসীদের ধরে সামরিক বাহিনীর বিমানে করে নিজ নিজ দেশে পাঠানো হচ্ছে। মেক্সিকো তাদেরকে গ্রহণ করেনি, আবার গুয়েতেমালা গ্রহণ করেছে। নিউ ইয়র্কে বেশকিছু বাংলাদেশি অবৈধ অধিবাসীকে শনাক্ত করে হাজতে নেয়া হয়েছে। সবেমাত্র শুরু, ট্রাম্পের এই কার্যক্রম যে ক্রমাগত বাড়বে তার পূর্বাভাস তিনি বহু আগেই দিয়েছেন।
আমরা ট্রাম্পের উথাল-পাতাল কর্মসূচির কিছু কিছু এখানে তুলে ধরেছি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে প্রত্যাহার, কেনেডি পরিবারের একজন বিজ্ঞানবিরোধী ব্যক্তিত্বকে স্বাস্থ্য সেক্রেটারি বানানো— যিনি টিকা দেওয়ায় বিশ্বাস করেন না, পাশাপাশি আরও কিছু অবিবেচক কাজ ট্রাম্পের মধ্যেই সেরে ফেলেছেন।
মাত্র কয়েকদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের মাঝ আকাশে মার্কিন সেনা হেলিকপ্টারের সঙ্গে সংঘর্ষের পর ওয়াশিংটন ডিসির পটোম্যাক নদীতে ভেঙ্গে পড়ে আমেরিকান এয়ারলাইন্সের একটি যাত্রীবাহী বিমান, যাতে ৬৭ জন আরোহীর মৃত্যু হয়। উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছাবার আগেই ট্রাম্প এই দুর্ঘটনার জন্য ওবামা ও বাইডেনকে দায়ী করে বিবৃতি দিলেন। তার মতে ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্টদের ‘সম-সুযোগসুবিধা’ নীতি অনুসরণ করে বিভিন্ন সংস্থায় অযোগ্য ও বিকলাঙ্গ লোকদেরকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে এবং তার জন্যই এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা। ট্রাম্পের দলের লোকেরাও এর প্রতিবাদ করেছে। সমগ্র মার্কিন জনগণ স্তম্ভিত হয়ে গেল, অসময়ে তার অরুচিকর কথাবার্তায়। কিন্তু কি আর করার আছে? তারাই তো দলবেঁধে ভোট দিয়ে এই ভারসাম্যহীন লোকটাকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেছে!