হবু প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা ‘আওয়ামী চেতনায়’ বিদায়ী সিইসির এর চেয়ে কয়েক ধাপ এগিয়ে আছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
Published : 10 Feb 2017, 03:19 PM
এই সিইসির অধীনে সুষ্ঠু সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার সম্ভবানা নিয়ে বিএনপির সংশয়ের কথা আবারও তিনি তুলে ধরেছেন।
শুক্রবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, ‘‘এবার যিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনার হলেন, তিনি আওয়ামী চেতনায় কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের চেয়েও কয়েক ধাপ অগ্রবর্তী। একজন জনতার মঞ্চের মানুষ। উনার বক্তব্য, আচার-আচরণ দলের একজন একনিষ্ঠ কর্মীর মতে।
২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার পর যুগ্ম সচিব নূরুল হুদাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছিল, যা অবৈধ বলে পরে আদালতের রায় হয়। এরপর ভূতাপেক্ষ কার্যকারিতায় সচিব হয়ে অবসর নেন তিনি; তখন ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের আন্দোলনের সময় ঢাকায় গঠিত জনতার মঞ্চে যোগ দেওয়া প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মধ্যে নূরুল হুদাও ছিলেন বলে দাবি করছেন বিএনপি নেতারা।
তবে নূরুল হুদা জনতার মঞ্চে ছিলেন না দাবি করে বলেছেন, বিএনপির ওই বক্তব্য তাদের ‘রাজনৈতিক কৌশল’।
তবে নূরুল হুদার প্রতি অনাস্থার কথা জানিয়ে শুক্রবারের সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, “তার (নতুন সিইসি) অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ার ব্যাপারে দেশের মানুষের মধ্যে আস্থার সৃষ্টি হয়নি। তার অধীনে নির্বাচন হলে সেটি ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচনই হবে।”
নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, নূরুল হুদা যে ‘কমিটেড আওয়ামী লীগার’ সেটি সিইসি হিসেবে নাম ঘোষণার পর ‘তার বিভিন্ন বক্তব্যেই’ তিনি বুঝতে পেরেছেন।
“কাল আমি ফেইসবুকে দেখলাম, তার এলাকায় উপজেলা চেয়ারম্যানের একটা কী ভোটাভুটিতে জেতার কারণে মিষ্টি খাওয়া-খায়ি করছেন। এর আগেও তো আমরা সিইসি দেখিছি, তাদের ব্যক্তিত্ব, তাদের মর্যাদা... এলাকায় কে জিতল, না জিতল- এসব অনুষ্ঠানে তারা অংশগ্রহণ করতেন না। তারা একটা স্বাধীন স্বত্ত্বা নিয়ে থাকতেন।”
ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য দ্বৈত্যকুলে প্রলাপ
রিজভী বলেন, “গতকাল ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন, বিএনপি গত নির্বাচনে অংশ না নিয়ে যে ভুল করেছে, এর পরিনাম তাদের যতটা দুর্বল, সংকুচিত করেছে, এলোমেলো করেছে, সেখানে তাদের ভবিষ্যতে রাজনৈতিক অঙ্গনে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাওয়ার একটা ঝুঁকি রয়েছে। আমি যখন ছাত্র রাজনীতি করি, উনি সিনিয়র ছাত্র নেতা ছিলেন। সামাজিক জীবনে শ্রদ্ধেয় মানুষ। কিন্তু একটি প্রবাদ আছে, দ্বৈত্যকুলে প্রলাপ। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে তাই মনে হচ্ছে।
“তিনিও একই সুর, আওয়ামী লীগে যে ধরণ, নির্জলা মিথ্যাচার করা, অপরের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করা যা নৈরাজ্যজনক যা কুৎসিত গণতন্ত্রের জন্য সেটার পক্ষে সাফাই গাওয়া সেটাই তিনি করছেন। আমি বিএনপির পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেবকে বলতে চাই, একবার আপনার প্রধানমন্ত্রীকে বলুন, গদি ছেড়ে দিয়ে একটি অন্তর্বতীকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করে সেই সরকারের মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে। তাহলেই বুঝা যাবে, কোন দল রাজনৈতিক প্রাঙ্গণে অপ্রসাঙ্গিক হয়েছে। কার ভুল হয়েছে- বিএনপি না আওয়ামী লীগের সেটি জনগণই বিচার করবে।”
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড
সাংবাদিক দম্পত্তি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন না হওয়ার সমালোচনা করে রিজভী বলেন, “পাঁচ বছরেও এই হত্যা মামলার রহস্যের উদ্ঘাটিত হয়নি। সরকারের অবহেলায় ধামাচাপা দেওয়ার চক্রান্তের আবর্তে পড়ে আছে এই মামলাটি। ৫ বছরে ৪৬ বার সময় নিয়েও আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
“কেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডটি এড়িয়ে যাচ্ছে, তা নিয়ে মানুষের মনে এক দীর্ঘ প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে। নিশ্চয়ই এর পেছনে রাঘববোয়ালরা জড়িত। ”
অবিলম্বে সাগর-রুনির প্রকৃত খুনিদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান রিজভী।
অন্যদের মধ্যে সভায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস দুলু, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, মুনির হোসেন, রফিকুল ইসলাম মাহতাব, আবদুস সাত্তার পাটোয়ারি সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।