দলভিত্তিক ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৩০টি দল অংশ নিলেও মাত্র নয়টি দল জয় পেয়েছে।
Published : 08 Jun 2016, 09:31 PM
এর মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ৬৫ শতাংশ ইউপিতে জয় পেয়েছে। বিএনপি ৯ শতাংশ, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ২২ শতাংশ ও জাতীয় পার্টি ১ শতাংশ ইউপি পেয়েছে।
বাকি অংশের ২১টি ইউপিতে জয় পেয়েছেন জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় পার্টি-জেপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ও জাকের পার্টি।
গত ফেব্রুয়ারিতে তফসিল ঘোষণার পর ছয় ধাপের ভোট শেষে বুধবার এসব তথ্য একীভূত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
তৃণমূলের সবচেয়ে জনপ্রিয় হিসেবে পরিচিত এই নির্বাচনে এবারই প্রথম চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে ভোট হয়েছে।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী সপ্তাহে আনুষ্ঠানিকভাবে ভোটের ফলের পূর্ণাঙ্গ চিত্র জানা যাবে।
ইসির কাছে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ছয় ধাপে ৭৭ শতাংশ ভোট পড়েছে। এর মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ পেয়েছে প্রদত্ত ভোটের ৪৭ শতাংশ, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পেয়েছেন ৩০ শতাংশ ভোট এবং বিএনপি পেয়েছে ১৯ শতাংশ। বাকি ৪ শতাংশ ভোট পেয়েছে ২৮টি দল।
ভোটের হিসাবে জাতীয় পার্টি, জাসদ, ইসলামী আন্দোলনসহ ২৮ দল পেয়েছে ২২ লাখের বেশি ভোট। এরমধ্যে পিডিপি সর্বনিম্ন ৬৬টি ভোট পেয়েছে।
ভোটের চিত্র
দেশের চার হাজার ১০৪ ইউপিতে ভোট হয়েছে ছয় ধাপে। ২২০ ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন একক প্রার্থীরা। বাকি ইউপিতে ভোট হয়েছে।
৬ কোটি ৫৯ লাখ ৫১ হাজার ৩৮৮ ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ৫ কোটি ৫ লাখ ৬০ হাজার ২৫৯ জন, যা মোট ভোটারের ৭৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
দলীয় ভোট
আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে পড়েছে ২ কোটি ৩৮ ১৬ হাজার ৪৯৪ ভোট, যা প্রদত্ত ভোটের ৪৭ দশমিক ১০ শতাংশ।
ক্ষমতাসীন দলের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১ কোটি ৫০ লাখ ৬১ হাজার ১৪৭ ভোট পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা, যা প্রদত্ত ভোটের ২৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
বিএনপির ধানের শীষে পড়েছে ৯৪ লাখ ৭৭ হাজার ৬১২ ভোট, যা গৃহীত ভোটের ১৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ।
জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি পেয়েছে ১০ লাখ ১২ হাজার ৯৭১ ভোট।
এছাড়া এলডিপি ৮ হাজার ৭৮৭ ভোট, জাতীয় পার্টি-জেপি ১ লাখ ৩৯ হাজার ৪০২ ভোট, সাম্যবাদী দল ২ হাজার ৯৯১ ভোট, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ২৭ হাজার ২২০ ভোট, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি ১০ হাজার ৬৮৩ ভোট, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ৮২৭ ভোট, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ৭২ হাজার ৬৪১ ভোট, বিকল্পধারা বাংলাদেশ ৮৮০ ভোট, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ ১ লাখ ২৪ হাজার ৪৫৩ ভোট, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি ৭ হাজার ৩৪৭ ভোট, জাকের পার্টি ১৭ হাজার ৮৭৭ ভোট, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল ৪ হাজার ২৬৬ ভোট, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন ৬ হাজার ৩৪৫ ভোট, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি ১ হাজার ২৬০ ভোট, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি ১ হাজার ৬৮৮ ভোট, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি ৩ হাজার ৯৫২ ভোট, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ২৮ হাজার ৮০ ভোট, বাংলাদেশ ন্যাপ ১ হাজার ৪৬৬ ভোট, ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ ১ হাজার ৫৫৪ ভোট, ইসলামী ঐক্যজোট ৯ হাজার ৭১৫ ভোট, খেলাফত মজলিস ৩ হাজার ৬৫৮ ভোট, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ২৬১ ভোট, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ৫ লাখ ১৭ হাজার ৫৫৫ ভোট, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ১৮ হাজার ৯৩৫ ভোট, বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ২১০ ভোট, বিএনএফ ৭ হাজার ২৫৯ ভোট এবং প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক পার্টি (পিডিপি) ৬৬ ভোট।
ভোটের আগে ‘ছোট’ দলগুলো তৃণমূলে বেশি প্রার্থী দেওয়ার কথা বললেও ক্ষমতাসীন দল ও তাদের বিদ্রোহীদের একচ্ছত্র আধিপত্যে দুয়েকটি ধাপে অংশ নেয় তারা।
জয় পেল যে নয় দল
ইসির একীভূত ফলের তথ্যে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ ২ হাজার ৬৬৭ ইউপিতে, বিএনপি ৩৬৭ ইউপিতে, জাতীয় পার্টি ৫৭ ইউপিতে, জাসদ ৮ ইউপিতে, ওয়ার্কার্স পার্টি ৩ ইউপিতে, জাতীয় পার্টি-জেপি ৫ ইউপিতে, ইসলামী আন্দোলন বাংরাদেশ ৩ ইউপিতে এবং জমিয়তে ইলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ও জাকের পার্টি ১টি করে ইউপিতে জিতেছে।
স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন ৮৮৮ ইউপিতে। বাকি ১০৪ ইউপির স্থগিত কেন্দ্রে পুনরায় ভোট হবে।
ইসির জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব ফরহাদ হোসেন বলেন, “কয়েকটি ইউপিতে স্বতন্ত্র ও দলীয় প্রার্থীর তথ্যে গরমিল রয়েছে কি না- তাও যাচাই করা হচ্ছে।
“পার্বত্য এলাকার ফল পেলেই আনুষ্ঠানিকভাবে একীভূত ফল জানাতে পারব আমরা। সব ধাপের ফল পর্যালোচনা করে কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে আগামী সপ্তাহে চূড়ান্ত তথ্য পাওয়া যেতে পারে “
নির্বাচনী সহিংসতায় শতাধিক মানুষের প্রাণহানি হলেও প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেছেন, আগের চেয়ে এবার ভালো ভোট হয়েছে। অনিয়ম-সহিংতামুক্ত ভোট করতে মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে।
তাৎক্ষণিক ব্যবস্থার কারণে কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সার্বিকভাবে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে বলেও দাবি তার।