নামে আছে ভোটে নেই

নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন পেতে বেশ কাঠখড় পোড়াতে হলেও ভোটের দৌড়ে নেই অন্তত দেড় ডজন রাজনৈতিক দল।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 April 2016, 12:12 PM
Updated : 13 April 2016, 01:26 PM

এ অবস্থায় গত সাত বছরে দলগুলোর নিবন্ধন শর্ত বহাল রয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখেনি ইসি।

সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে আত্মপ্রকাশ হয়েছিল প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল-পিডিপি’র। ওই সময় ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন নামে আরেকটি দলকেও দেখা গেছে মাঠে।

কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের বাইরে দেশের এক তৃতীয়াংশ জেলায় দলীয় কার্যালয় ও দুইশ’ উপজেলা কমিটি দিয়ে দুটো দলই নিবন্ধন পেয়েছিল।

বেশ তোড়জোড় করে ভোটের দৌড়ে আসা দল দুটির দশম সংসদে অর্জন ছিল সাড়ে তিন হাজার থেকে ১৪ হাজার ভোট।

সাত বছর পর নিবন্ধিত দল দুটি সংসদ নির্বাচন ছেড়ে দলীয় স্থানীয় নির্বাচনে লড়তে প্রার্থীও দিতে পারছে না।

পৌর নির্বাচনে পিডিপি মাত্র একজন প্রার্থী দিয়েছিল; তবে পৌরসভা ও ইউপিতে প্রার্থী দেখা যায়নি ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলনের।

সাংগঠনিক দুর্বলতাকেই স্থানীয় নির্বাচনে না থাকার প্রধান কারণ বলছে দল দুটি। শুধু এই দুটি দল নয়, ৮-১০টি দলের বাইরে কেউই প্রতি ধাপে দশটির বেশি প্রার্থী দিতে পারেনি।

নিবন্ধিত ৪০টি দলের মধ্যে ইউপিতে এ পর্যন্ত চার ধাপে ২২টি দল প্রার্থী দেবে বলে ইসিকে চিঠি দিয়েছে। প্রার্থী বাছাইয়ের পর প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছে ১৭টি দল।

সব মিলিয়ে দেড় ডজন দল ইউপি ভোটে নেই বলে জানিয়েছেন ইসি কর্মকর্তারা।

ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ পিন্টু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম খুব খারাপ অবস্থায়। অনেক জেলায় অফিস নেই। নিষ্ক্রিয় সংগঠনকে কার্যকর করার চেষ্টায় রয়েছি কাউন্সিলের মাধ্যমে।”

বিদ্যমান ‘বাস্তবতায়’ প্রার্থী পাওয়াও দুষ্কর বলে স্বীকার করেন তিনি।

২০১২ সালে সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছে এই দলটির। এবছর কাউন্সিল করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান কাজী ফারুক আহমেদ নেতৃত্বাধীন ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন।

ফেরদৌস আহমদ কোরেশীর পিডিপি’র অবস্থা আরও খারাপ। দলটির সভাপতি অসুস্থ থাকায় সাংগঠনিক কার্যক্রম চোখে পড়েনি বিগত সময়ে। পিডিপি’র ঢাকা মহানগর শাখার নেতা মাসুদুর রহমানই এখন মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছেন।

মাসুদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটবকমকে বলেন, “ভোটে প্রার্থী দেওয়া যাচ্ছে না। একদিকে সাংগঠনিক দুর্বলতা, অন্যদিকে টাকার অভাব। প্রধান দুই দলের বাইরে প্রার্থী হলে অনেক টাকা লাগে, এ অবস্থায় প্রার্থীরা তা খরচ করতেও চাইছে না।”

২০১১ সালে কাউন্সিলের পর আর সম্মেলন করতে পারেনি সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ‘হঠাৎ করে রাজনীতির মাঠ গরম করা’ এই দলটি।

মাসুদ বলেন, “জেলা অফিস ও উপজেলা কমিটির অনেক বন্ধ করে দিয়েছে; সাইনবোর্ডও নেই। এসবের খোঁজও নেওয়া যাচ্ছে না। নিবন্ধিত দল হিসেবে ইসির সঙ্গে যোগাযোগ চলছে, আশা করি সেপ্টেম্বরে পরবর্তী কাউন্সিল করা সম্ভব হবে।”

অন্যদিকে বাংলাদেশ মুসলিম লীগের দুইটি অংশ নিবন্ধিত হলেও কোনো নির্বাচনেই অংশ নেয়নি বিএমএল নামে আলাদা হওয়া অংশটি। দলীয় পৌর ও ইউপি নির্বাচনেও প্রার্থী দিতে পারছে না তারা।

জানতে চাইলে মুসলিম লীগ-বিএমএল সভাপতি এ এইচ এম কামরুজ্জামান খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “২০ দলকে আমরা সমর্থন করছি, একাধিক প্রার্থী দিতে চাইনি আমরা। তবে সত্য কথা হচ্ছে-সাংগঠনিক দুর্বলতায় প্রার্থী দেওয়া যাচ্ছে না। আমাদের কমিটিগুলো খুব বেশি কার্যকর নয়।”

ইসি কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচন কশিমনও জানে-অধিকাংশ দল জোটে আছে, ভোটে নেই তারা। শুধু জোট ভারি করার জন্যই নিবন্ধন নেয়। নিবন্ধনের আগে কমিটি ও অফিস গড়লেও পরে তা ঠিক থাকে না।

নির্বাচন কমিশন সময়ে সময়ে মাঠ পর্যায়ের কার্যালয় ও কমিটি বহাল রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা দরকার বলে মনে করেন তারা।

নির্বাচন কমিশনের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দলীয় কার্যক্রম, কাউন্সিল, জেলা-উপজেলা কমিটির তথ্য চাওয়ার বিষয়ে একবার এগিয়েও শেষ পর্যন্ত চিঠি পাঠায়নি ইসি। পরে দলগুলো ঠিকানার হালনাগাদ তথ্য চেয়েছে, তা নিয়েও কোনো অগ্রগতি নেই।”

আর এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ইসির সহকারী সচির রৌশন আরা বলেন, “নির্বাচন কমিশন কোনো সিদ্ধান্ত নিলেই আমরা দলগুলোর কাছে তথ্য চাইতে পারি। মাঠপর্যায়ের অফিসের তথ্য খতিয়ে দেখতে পারি। এখনো এ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি, সিদ্ধান্তও নেই।”