নিরাপত্তায়ই বেশি ব্যয় প্রাণঘাতী ভোটে

অনিয়ম-সংঘাতের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৫০০ কোটি টাকার বেশি ব্যয় হতে যাচ্ছে। এর মধ্যে পরিচালনা খাতে ৪০ শতাংশ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ৬০ শতাংশ।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 June 2016, 05:31 PM
Updated : 6 June 2016, 06:44 PM

নবম ইউপি নির্বাচনে ইতোমধ্যে প্রায় ৪১০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়ে গেছে।

গত ফেব্রুয়ারিতে তফসিল ঘোষণার পর চার মাস ধরে ছয় ধাপে চার হাজারেরও বেশি ইউপির ভোট শেষে ব্যয়ের এমন চিত্র পাওয়া গেছে।

দলভিত্তিক প্রথমবারের এই ইউপি ভোটে অনিয়মের অভিযোগ ছিল ব্যাপক। নির্বাচনী সহিংসতায় প্রাণ গেছে শতাধিক মানুষের।

সোমবার নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচন পরিচালনা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা খাতে ইতোমধ্যে ৪১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। শেষ দিকে ভোটের জন্য নির্বাচনী সামগ্রীসহ অন্যান্য ব্যয় বাদ প্রায় ৩৫ কোটি টাকা ও নিরাপত্তা খাতে ৫৫ কোটি টাকার নতুন চাহিদা আসতে পারে।

বিদায়ী অর্থবছরের বাজেট থেকে বাকি অর্থের সংস্থান করে সংশোধিত বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

ইসির উপ সচিব রকিবউদ্দিন মণ্ডল বলেন, “ভোট শেষ হওয়ায় সার্বিক ব্যয় পর্যালোচনা চলছে। সব মিলিয়ে ৫০০ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। এরমধ্যে সিংহভাগই যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায়।”

এবারের ইউপি নির্বাচনের ব্যয় সর্বশেষ ২০১১ সালের ব্যয়ের তিন গুণের বেশি এবং ২০০৩ সালের আট গুণ।

ছয় ধাপের ভোট শেষে বরাদ্দ পাওয়া ৪১০ কোটি টাকার হিসাবে দেখা গেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ, আনসার-ভিডিপি, বিজিবি ও কোস্টগার্ডের জন্য রয়েছে প্রায় ২৩৭ কোটি টাকা। ব্যালট পেপার মুদ্রণ, নির্বাচন সামগ্রী কেনা, পরিবহন, নির্বাচনী কর্মকর্তাদের ভাতাসহ নির্বাচন পরিচালনায় ব্যয় রয়েছে প্রায় ১৭৩ কোটি টাকা।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ বাহিনী প্রায় ৮৩ কোটি টাকা, আনসার-ভিডিপি প্রায় ১২৫ কোটি টাকা, বিজিবি প্রায় ২৯ কোটি টাকা এবং কোস্টগার্ড ৪২ লাখ টাকার বেশি বরাদ্দ পেয়েছে।

“এখন পর্যন্ত নিরাপত্তা খাতে ৫৮ শতাংশ ও পরিচালনা খাতে ৪২ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ পেয়েছে। বাকি অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার পর আইনশৃঙ্খলায় ৬০ শতাংশ ব্যয় দাঁড়াবে,” বলেন একজন কর্মকর্তা।

মোট ব্যয়ের হিসাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ১৯৯২ সালে ৬১.৬৮ শতাংশ, ১৯৯৭ সালে ৫৯.০৯ শতাংশ, ২০০৩ সালে ৫৪.৮২ শতাংশ এবং ২০১১ সালে প্রায় ৫৭ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়েছে।

২০১১ সালে ইউপি ভোট পরিচালনা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ১৪৭ কেটি টাকার বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়; যার অর্ধেকেরও বেশি যায় নিরাপত্তা খাতে।

২০০৩ সালে ব্যয় হয় ৫৯ কোটি ৩৩ লাখ ৬১ হাজার ১৫২ টাকা। এরমধ্যে নির্বাচন পরিচালনায় ২৭ কোটি ৩৩ লাখ ৬১ হাজার ১৫২ টাকা এবং পুলিশ, আনসার ও তৎকালীন বিডিআরকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ৩২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।

এর আগে ১৯৯২ সালে ১১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা মোট ব্যয়ের মধ্যে সাত কোটি ৩১ লাখ টাকা এবং ১৯৯৭ সালে ৪৪ কোটি টাকার মধ্যে ২৬ কোটি টাকা নিরাপত্তা খাতে ব্যয় হয়।

গত দশম সংসদ নির্বাচনে মোট ব্যয় হয় ২৬৪ কোটি ৬৭ লাখ ৪৯ হাজার ৪৬৯ টাকা। এর মধ্যে নির্বাচন পরিচালনায় ৮১ কোটি ৫৫ লাখ ৪১ হাজার ৩৪১ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পেছনে ১৮৩ কোটি ১২ লাখ ৮ হাজার ১২৮ টাকা।

এবার ইউপিতে শতাধিক লোকের প্রাণহানি ঘটেছে। এর আগে ১৯৮৮ সালে অন্তত ৮০ জন, ২০০৩ সালে অন্তত ৮৩ জন এবং সর্বশেষ ২০১১ সালে অন্তত ১০ জন নির্বাচনী সহিংসতায় মারা যান বলে তথ্য রয়েছে ইসিতে।