“আমরা আশা করি যে, তারা যথা শিগগিরই সম্ভব স্বল্প সময়ের মধ্যে এই কাজ(সংস্কার) গুলো শেষ করে নির্বাচনের দিকে যাবেন”, বলেন তিনি।
Published : 12 Sep 2024, 05:19 PM
অন্তর্বর্তী সরকার যেসব সংস্কারের কথা বলেছে, সেগুলো দ্রুত শেষ হবে এবং জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি দিয়ে গঠিত সংসদ দেশ চালাবে বলে আশা করছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে ভাষণের প্রতিক্রিয়ায় বৃহস্পতিবার বিএনপির পক্ষ থেকে দলটির বক্তব্য তুলে ধরেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে বেশ কিছু বিষয়ে সংস্কারের জন্য কমিশন গঠন ও সেই কমিশনে কারা দায়িত্ব পালন করবেন, সেই নামগুলোও তুলে ধরেছেন।
ফখরুল বলেন, “সংস্কারের কথা আমরা সবাই বলেছি, সংস্কার প্রয়োজন। গণতান্ত্রিক অধিকার একেবারে ‘ধ্বংস’ করে ফেলেছিল। সেক্ষেত্রে অতি দ্রুত যেন এই সংস্কারের কাজগুলো শেষ করা হয়।
“মূল যে বিষয়টা রয়েছে গণতন্ত্রের জন্য… জনগণের প্রতিনিধিদের শাসন, জনগণের পরিচালনায় তাদের নির্বাচিত পার্লামেন্ট দিয়ে দেশ চলবে, সেই বিষয়টা যেন অবশ্যই খুব দ্রুততার সঙ্গে সমাপ্ত হয়, সেটাই আমাদের প্রত্যাশা থাকবে।”
অন্তবর্তীকালীন সরকারের সাফল্য কামনা করে বিএনপি নেতা বলেন, “আমরা মনে করি যে, অন্তবর্তীকালীন সরকার কাজ করছে, এই কাজ করার জন্য তাদেরকে সময়-সুযোগ সবই দেওয়ার জন্য আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
“আমরা আশা করি যে, তারা যথা শিগগিরই সম্ভব স্বল্প সময়ের মধ্যে এই কাজ(সংস্কার) গুলো শেষ করে নির্বাচনের দিকে যাবেন।”
তুমুল গণ-আন্দোলনের মধ্যে গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটলে তিন দিন পর সংবিধান মেনে চলার অঙ্গীকার করে শপথ নেয় ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার।
সংবিধান অনুযায়ী সংসদ ভেঙে দেওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হতে হবে, দৈব দুর্বিপাকে সেটা করা না গেলে আরও ৯০ দিন সময় বাড়ানো যাবে।
তবে অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের কোনো সময়সীমা ঘোষণা করেনি। অগাস্টের শেষে মির্জা ফখরুল একাধিক আয়োজনে নির্বাচনের রোডম্যাপ দাবি করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, কয়েকজন ব্যক্তির সংস্কারে তাদের বিশ্বাস নেই।
ফখরুল বলেন, “এই সরকার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এসেছে। আমরা আশা করব, তারা জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাবে। একটি কথা স্পষ্টভাবে বলা প্রয়োজন, গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নাই। গণতন্ত্র হচ্ছে একমাত্র ব্যবস্থা যা জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারে।
“সেজন্যই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তৈরি করা হচ্ছে আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কিন্তু সেই কাজটাতে জনগণের সম্পৃক্ততা থাকতে হবে, জনগণ কী চায়, জনগণ কীভাবে জিনিসটা দেখতে চায়, সেই বিষয়টা থাকতে হবে।”
আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর ‘আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস’ পালনে বিএনপি ঘোষিত দুইদিনের কর্মসূচির প্রস্তুতি পর্যালোচনা করতে দুপুরে নয়া পল্টনে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাদের নিয়ে সমন্বয় সভা হয়। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন মির্জা ফখরুল। এরপর ব্রিফিংয়ে আসেন তিনি।
বিএনপি নেতা জানান, তারা দুই দিনের কর্মসূচি নিয়েছেন। ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিকাল সাড়ে ৩টায় সমাবেশ হবে। বিএনপির আন্দোলনে শহীদদের স্বজন, অঙ্গ হারানো ও নির্যাতিতদের নিয়ে পালিত হবে এই কর্মসূচিটি।
সমাবেশে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নাটক, আবৃত্তি, কবিতা পাঠ করা হবে।
পরের দিন বিকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে হবে সমাবেশ।
ফখরুল বলেন, “আমরা যে একটা ট্রানজিশনাল পিরিয়ডের মধ্যে আছি, এখন গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোকে আরও ঐক্যবদ্ধ করার জন্য আমরা এই সমাবেশটি গুরুত্বের সাথে করতে চাই।”
সেদিন ঢাকার বাইরে বিভাগীয় শহরের মহানগরেও সমাবেশ হবে বলেও জানান তিনি।
প্রশাসনে অস্থিরতা: ‘ধৈর্য ধরতে হবে’
পদোন্নতি নিয়ে জনপ্রশাসনে যে অস্থিরতা চলছে, তা নিয়েও কথা বলেন ফখরুল। তিনি বলেন, “এই রকম বিপ্লবের পরে এই ধরনের সমস্যা থাকতেই পারে। এটা তো সম্পূর্ণ নতুন গভর্নমেন্ট। প্রশাসনে এতদিন ধরে আওয়ামী লীগ যেটা করেছে সম্পূর্ণ রাজনীতিকরণ করতে গিয়ে… সব জায়গায় বেশিরভাগ লোকই তাদের মতাবলম্বী লোকদের প্রমোশন দিয়েছে, পদায়ন করেছে, তাদেরকে দিয়ে কাজ করিয়েছে।
“ফলে এটা একটু সময় লাগবেই। পুরোপুরিভাবে নতুন করে তো এই মুহূর্তে রিক্রুট করে এত অফিসার নিয়োগ করা সম্ভব না। যা আছে তাদেরকে দিয়ে করতে হবে। সেজন্য আমাদেরকে একটু ধৈর্য ধরতে হবে। আমার বিশ্বাস যে, অতি অল্প সময়ের মধ্যে সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।”
‘পরিকল্পিত চক্রান্ত চলছে’
অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে ছাত্র-জনতার যে অভ্যুত্থানকে নস্যাৎ করে দেওয়ার জন্য একটা চক্র কাজ করছে বলেও মনে করেন বিএনপি নেতা।
তিনি বলেন, “কারা কাজ করছে সেটা আপনারা জানেন। পতিত ‘ফ্যাসিবাদ’ হাসিনা ভারতবর্ষে আশ্রয় নিয়েছেন এবং সেখান থেকে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বাংলাদেশ সম্পর্কে, বাংলাদেশের মানুষের সম্পর্কে। এই অপপ্রচার কখনও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বাংলাদেশের মানুষ অবশ্যই প্রতিবাদ করছে, এই ধরনের অপপ্রচারে তারা কান দেবে না বলে আমি বিশ্বাস করি।”
শিল্পক্ষেত্রে অস্থিরতা সৃষ্টি করা হচ্ছে মন্তব্য করে বিএনপি নেতা বলেন, “আপনাদের মাধ্যমে আমি অনুরোধ জানাব, যারা দেশপ্রেমিক মানুষ আছেন তারা সকলে একযোগে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই ধরনের প্রবণতাকে নস্যাৎ করে দেবেন।
“প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন যেন কোনো ব্যক্তি কোনোভাবেই বাংলাদেশের অর্জিত যে সাফল্য, সেটাকে বিনষ্ট করতে না পারে। আমরা সকলকে অনুরোধ করব, এই শিল্প-কল-কারখানাগুলো চালু রাখার ক্ষেত্রে বিএনপির নেতা-কর্মীরা যে যেখানে আছি আমরা যেন সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে পারি।”
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিব উন নবী খান সোহেল, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আবদুস সালাম আজাদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, মীর সরাফত আলী সপু, ঢাকা জেলার খন্দকার আবু আশফাক, মানিকগঞ্জের আফরোজা খান রীতা ও এম এ জিন্নাহ, গাজীপুরের ফজলুল হক মিলন ও রিয়াজুল হান্নান, নরসিংদীর খায়রুল কবির খোকন, মুন্সিগঞ্জের কামরুজ্জামান রতনও উপস্থিত ছিলেন।