বিএনপি নেতা বলেন, “আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, পশ্চিমা বিশ্ব, তারা কমিটেড টু ডেমোক্রেসি… এটার ওপর আমাদের বিশ্বাস রাখতে হবে।”
Published : 15 Oct 2023, 04:38 PM
প্রধানমন্ত্রী চাইলেও এবার ‘ভোটারবিহীন’ নির্বাচন করতে পারবেন না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি পশ্চিমাদের ওপর ‘বিশ্বাস’ রাখার কথা জানিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শও জানিয়েছেন।
‘যেভাবেই হোক এ দেশে নির্বাচন হবেই’ বলে আওয়ামী লীগের সুধী সমাবেশে বক্তব্য আসার পরদিন রোববার দুপুরে রাজধানীতে এক সেমিনারে এসব কথা বলেন বিএনপি নেতা।
গুলশানের লেকশোর হোটেলে বিএনপির উদ্যোগে ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে দেশীয়-আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা’ শীর্ষক এই সেমিনারে তিনি বলেন, ‘‘যারা এভাবে কথা বলে… যেভাবেই হোক নির্বাচন হবে… নির্বাচন তো আমরাও চাই এবং সেটা জনগণের অধিকারের জন্য চাই। কিন্তু সেই নির্বাচন অবশ্যই হতে হবে যেখানে জনগণ তার অধিকার প্রয়োগ করতে পারবে।
‘‘শেখ হাসিনা চাইলেন যে, বিনা ভোটারের মাধ্যমেই তিনি নির্বাচিত হবেন… সেটা এবার হবে না। ২০১৪ সালে যা করতে পেরেছেন, ২০১৮ তে যেটা করতে পেরেছেন, এবার সেই নির্বাচন আপনি করতে পারবেন না। কারণ, এবার মানুষ যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, তাতে করে সেটা সম্ভব হবে না।”
উচ্চ আদালতের রায়ে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপের পর দুটি সংসদ নির্বাচন হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করে আন্দোলন করলেও ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি।
সেই নির্বাচনে আগের রাতেই ভোট হয়ে যাওয়ার অভিযোগ এনে আবার তত্ত্বাবধায়কের দাবিতে ফিরে গেছে বিএনপি ও সমমনারা। নভেম্বরে ভোটের তফসিল ঘোষণার কথা বলছে নির্বাচন কমিশন। তবে বিএনপি অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে ‘জোরাল আন্দোলনে’ নামার ঘোষণা দিয়ে নির্বাচন হতে না দেওয়ার কথা বলছে।
তবে সরকার বিএনপির অবস্থানকে পাত্তা দিচ্ছে না। শনিবার রাজধানীর কাওলায় এক সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “যেভাবেই হোক এ দেশে নির্বাচন হবেই। জনগণ স্বাধীনভাবে ভোট দেবে।”
আরও পড়ুন: যেভাবেই হোক নির্বাচন হবে: প্রধানমন্ত্রী
জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আসল কথা হচ্ছে, উনি (শেখ হাসিনা) কালকে বলে দিয়েছেন, ‘তোমরা যে যা বলো ভাই, আমার সোনার হরিণ চাই।’
“অর্থাৎ যে যাই বলুক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যাই বলুক, ইউরোপীয় ইউনিয়ন যাই বলুক, আমরা রাজনৈতিক দলগুলো যাই বলি, উনার ওই ‘সোনার হরিণ’ চাই। অর্থাৎ ‘ক্ষমতায় কাউকে যেতে দেব না।’ টোটাল সংকটটা ওই জায়গায়।”
‘পশ্চিমা বিশ্বে বিশ্বাস রাখতে হবে’
মির্জা ফখরুল তাদের অবস্থানে অটল থাকার কথা জানিয়ে পশ্চিমা শক্তির বক্তব্যেও ‘বিশ্বাস রাখার’ পরামর্শও দেন।
তিনি বলেন, “একটা কথা আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে যেটা আমি আগেই বলেছি আপনাদেরকে যে, আমরা একা নই। আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, পশ্চিমা বিশ্ব তারা কমিটেড টু ডেমোক্রেসি… এটার ওপর আমাদের বিশ্বাস রাখতে হবে।
“তাদের যে কমিটমেন্ট আছে গণতন্ত্রের প্রতি, সেই কমিটমেন্ট আমাদেরকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করছে, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। একই সঙ্গে এটাও মনে রাখতে হবে আমরা যারা লড়াই করছি, সংগ্রাম করছি, এটাকে সামনে আরও দৃঢ়তার সঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে।
‘‘রাজপথেই ফয়সালা করার জন্য আমরা রাজপথে নেমেছি, চূড়ান্ত বিজয় অবশই আমরা অবশ্যই অর্জন করতে সক্ষম হব, সেখানে বাংলাদেশের দ্বিতীয় মুক্তি সম্ভব হবে।”
কিছু কিছু লোক ‘সবসময় হতাশায় ভোগেন’ মন্তব্য করে বিএনপি নেতা বলেন, “মাঠে থাকলে এই হতাশা আসে না। আমি তো আমার দলের কোনো মানুষের মধ্যে, কর্মীদের মধ্যে, নেতাদের মধ্যে কোনো হতাশা দেখি না, আমাদের সঙ্গে যারা আছেন যুগপৎ আন্দোলন যারা করছেন, তাদের মধ্যে কোনো হতাশা দেখি না। আমরা বিশ্বাস করি এই সংগ্রামে অবশ্যই আমরা অবশ্যই জয়লাভ করব। কারণ, আমরা সত্যের পথে আছি, সঠিক পথে আছি।”
অনুষ্ঠানে ‘নো কমেন্ট’ নামে একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন মির্জা ফখরুল। এটি সম্পাদনা করেছেন আলোকচিত্রী বাবুল তালুকদার। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন লেখকের লেখা নিয়ে বইটি প্রকাশ করা হয়েছে। কলি প্রকাশনীর বইটির দাম ধরা হয়েছে ৯৯৯ টাকা।
‘কী হতে যাচ্ছে আগামী দিনগুলোতে’
এই প্রশ্ন রেখে সেমিনারে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “হাতে খুব বেশি সময় নাই, দুই মাস সময়। দুই মাসের মধ্যে লড়াই একটা চূড়ান্ত জায়গায় যেতে হবে।
“সবাই জানি পূজার পরে বৃহত্তর আন্দোলন। এমন আন্দোলন যাতে সরকার পড়ে যেতে পারে… তাই তো? আমরা কি জানি সেই বৃহৎ আন্দোলনটা কী? ইজ ইট বিগার দ্যান শ্রীলঙ্কা, ইজ ইট বিগার দ্যান মিয়ানমার, ইজ ইট বিগার দেন দিল্লি রিজিয়নস…ওই নব্বইদিন ধরে যে অবরোধ করে রেখেছিল … ততদূর পর্যন্ত। আমাদের খুবই সূক্ষ্মভাবে সেটা রচনা করা দরকার।
“এখানে যদি মনে করেন আন্তর্জাতিক শক্তির সমর্থন থাকবে, তবে এখানকার বে্ইল (ঘণ্টা) আপনাকেই বাজাতে হবে। এই বেইল বাজানোর ক্ষেত্রে নেতৃত্বে যোগ্যতা ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক কিছু বিবেচনায় আসে। এই পর্যন্ত এই নেতৃত্বে বিএনপি ওয়ান্ডারফুল। অধৈর্য হওয়ার কিছু নেই। বিজয় আমাদের অবশ্যম্ভাবী।’’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন খানের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আব্দুল মঈন খান, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, শাহজাহান ওমর, বরকত উল্লাহ বুলু, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালও বক্তব্য রাখেন।
বিএনপি নেতা মনিরুল হক চৌধুরী, মিজানুর রহমান মিনু, ফজলুর রহমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, ইসমাইল জবিউল্লাহ, নাসের রহমান, হারুনুর রশীদ, শামা ওবায়েদ, এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজাম, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাগপার খন্দকার লুৎফুর রহমান, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহিউদ্দিন ইকরামও এতে উপস্থিত ছিলেন।