বিএনপির ‘অগ্নিসন্ত্রাস’ প্রতিহত করতে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ‘শান্তি কর্মসূচি’ নিয়ে রাজপথে থাকার আহ্বান জানান ওবায়দুল কাদের।
Published : 19 Jun 2023, 09:06 PM
গত নির্বাচনের মতো ফল আঁচ করে এবারের নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার বিএনপি আগেভাগেই নেমেছে বলে মন্তব্য করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
এই লক্ষ্যে দলটি সরকারের উপর আন্তর্জাতিক চাপ আনতে লবিস্ট নিয়োগ দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
সোমবার আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সভা শেষে সাংবাদিকদের সামনে আসেন কাদের।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ‘খুবই চ্যালেঞ্জিং’ হবে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, “এখানে জাতীয় সংকট বিশ্ব সংকটের সঙ্গে একাকার হয়ে গেছে। অর্থনৈতিক সংকট রাজনৈতিক সংকটের সঙ্গে একাকার হয়ে গেছে।
“নির্বাচনকে সামনে রেখে এখানে আমাদের দেশে একটা পোলারাইজেশন হচ্ছে এবং একটা ডিভাইসিভ অ্যাটিচিউড গড়ে উঠছে। এখানে পরস্পরবিরোধী মতের প্রদর্শন হচ্ছে। আমরা আশা করব, দেশে শান্তিপূর্ণভাবে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে পারব।”
বিএনপির নেতৃত্বে একটি মহল এই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায় অভিযোগ করে তিনি বলেন, “তারা নিজেরা ব্যর্থ হয়ে এখন বিদেশি শক্তিকে কাজে লাগাতে চায়। বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচার তারা করছে।”
শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হলে বিএনপির এই নির্বাচনে হেরে যাওয়ার ভয় আছে মন্তব্য করে কাদের বলেন, "তারা (বিএনপি) বোঝে শেখ হাসিনার যে জনপ্রিয়তা, এই অবস্থায় নির্বাচন হলে তারা নির্বাচনে করতে পারবে না। কাজেই এই নির্বাচনটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা, এই নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করা, এটা হল এখন তাদের কাজ। এই কাজ করতে গিয়ে তারা বিদেশিদের কাছে নালিশ করছে।
“এখন পরিষ্কারভাবে যেটা দেখতে পাচ্ছি, তারা লবিস্ট নিয়োগ করেছে। আমেরিকা, ইউরোপে তারা লবিস্ট নিয়োগ করেছে। সর্বশেষ যে খবর পেয়েছি, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের অপপ্রচারের সঙ্গে তাদের অপপ্রচার একাকার হয়ে গেছে।”
“বাংলাদেশে যে বিষয়টি বাইরে অত্যন্ত সম্মানের সঙ্গে দেখা হয়, সেটা হচ্ছে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনী। আমাদের সেনাবাহিনী দেশে দেশে শান্তিরক্ষায় নিয়োজিত, তাদের সেই মিশনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য অপপ্রচার চালাচ্ছে,” বলেন তিনি।
বিএনপির ‘অগ্নিসন্ত্রাস’ প্রতিহত করতে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ‘শান্তি কর্মসূচি’ নিয়ে রাজপথে থাকার আহ্বান জানান ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, “আমাদের লড়াই করতে হবে অশান্তির বিরুদ্ধে শান্তির জন্য। নির্বাচনের পরিবেশ ঠিক রাখতে হবে, কেউ যাতে বাধা দিতে না পারে। তাদের সংঘাত, উস্কানিমুলক কর্মকান্ডের বিপরীতে আমরা আগামী নির্বাচন পর্যন্ত আমরাও মাঠে থাকব।”
নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আমন্ত্রণ জানানোর কথা জানিয়ে মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, “আপনারা আসুন, বিএনপি আপনাদের কাছে যেটা নিয়ে নালিশ করে, সেই নির্বাচনটা বাংলাদেশে কীভাবে হচ্ছে, কয়েকটা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হয়েছে, সেগুলো কীভাবে হয়েছে, এটা বিভিন্ন দেশের দুতাবাস আছে, তাদের লোকজন আছে তারা এটা প্রত্যক্ষ করেছে।
“আগামী নির্বাচনে আমাদের নেত্রী গ্যারান্টি দিয়েছে, বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। এটার নিশ্চয়তা প্রধানমন্ত্রী নিজে দিয়েছেন।”
ওবায়দুল কাদের বলেন, "এখন বিএনপির ব্যাপারটা হচ্ছে আমরা নির্বাচনে হেরে আমাদের প্রমাণ করতে হবে দেশে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে?”
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ‘প্যাথলজিক্যাল লায়ার’ আখ্যায়িত করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, "এত মিথ্যা কথা বলতে পারে! কুত্তা নির্বাচন বলে তারা। কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা যদি মিনিমাম গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, তাহলে কুত্তা নির্বাচন কোনো রাজনৈতিক দলের নেতার মুখে আসে! শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে? এই কথাটা আমি উইড্র করতে বলেছি।”
দলের আগামী প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ইউনিয়ন থেকে ওয়ার্ড পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে উদযাপনের কথা জানিয়ে কাদের বলেন, বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকটের কারণে সাদামাটা অনুষ্ঠান হবে এবং মাসব্যাপী অনুষ্ঠান হবে।
আগামী ২২ জুন নির্বাহী কমিটির সভা
আগামী ২২ জুন আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভা হবে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, "সভায় দলের সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা হবে। যে নেতাদের বিভাগীয় দায়িত্ব দিয়েছেন তাদের কাছ থেকে রিপোর্ট নেবেন। কোথাও কোনো সংকট থাকলে সে ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত দেবেন (দলীয় সভাপতি)।
“মিটিংয়ে জেলায় জেলায়, উপজেলায় আমাদের দলের কিছু কর্মসূচি ঠিক করা হবে এবং কিছু কিছু জেলাকে পর্যায়ক্রমে ঢাকায় আমন্ত্রণ করে তাদের বিভিন্ন জায়গায় যে সমস্যা সে সম্পর্কে অবহিত হবেন এবং তাদের প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেবেন।"
সোমবারের সভায় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ, মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক উপস্থিতি ছিলেন।