সরকারের দিক থেকে এ কর্মসূচি পালন করতে না দেওয়ার বিষয়ে বলেছেন ক্রীড়া ও শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
Published : 09 Nov 2024, 10:44 PM
গণ আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া আওয়ামী লীগের ঘোষিত কর্মসূচি ঘিরে বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে রাজধানীর গুলিস্তানসহ আশপাশের এলাকায় এরইমধ্যে ‘ভিন্ন পন্থায়’ তৎপরতা শুরু করেছে পুলিশ।
‘নূর হোসেন চত্বরে’ শ্রদ্ধা নিবেদনের এ কর্মূসচির সময় রোববার বিকালে হলেও আগের দিন শনিবার সন্ধ্যা থেকে মাঠপর্যায়ে পুলিশ সদস্যদের তৎপরতা শুরুর তথ্য দিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল বিভাগের এক কর্মকর্তা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, “গুলিস্তানসহ আশপাশের এলাকায় আমাদের সর্বোচ্চ নজরদারি রয়েছে। যেকোনো ধরনের পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ প্রতিরোধের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।”
স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় যুবলীগ কর্মী নূর হোসেনকে হত্যার দিনটিতে রোববার ঢাকার জিপিও এলাকার ‘নূর হোসেন চত্বরে’ শ্রদ্ধা নিবেদনের কর্মসূচি ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ; যেটি সরকার পতনের পর দলটির প্রথমবারের মত রাজপথের কর্মসূচি।
এ কর্মসূচি ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবাইকে জমায়েতের আহ্বান জানালেও দলটির পক্ষ থেকে অনুমতি চেয়ে কোনো আবেদন করা হয়নি বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপ-কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।
অনুমতি ছাড়া কর্মসূচি পালনের বিষয়ে তিনি বলেন, “যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়ানোর জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশ সর্বোচ্চ প্রস্তুত আছে।”
এ কর্মসূচি ঘিরে পুলিশের প্রস্তুতির বিষয়ে পুলিশ সদস্যরা বলছেন, প্রতি মুহূ্র্তে নতুন নতুন নির্দেশনা আসছে। সে অনুযায়ী মাঠপর্যায়ে কাজ চলছে।
“ডিফারেন্ট অ্যাঙ্গেলে আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। কেউ কিছু করতে চাইলে আগেই আমাদের বাধার মুখে পড়বে, ধরা পড়ে যাবে।”
সরকারের দিক থেকে আওয়ামী লীগের এ কর্মসূচি পালন করতে না দেওয়ার বিষয়ে বলেছেন ক্রীড়া ও শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
নূর হোসেন দিবস: আওয়ামী লীগ নামতে পারবে না, ঘোষণা প্রেস সচিবের
রোববার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেইসবুক পেইজে আসিফ মাহমুদ লেখেন, “গণহত্যাকারী বা নিষিদ্ধ সংগঠনের কেউ কর্মসূচি করার চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নিবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।”
অপরদিকে শফিকুল আলম ফেইসবুক পোস্টে লেখেন, “আওয়ামী লীগ এখন একটি ‘ফ্যাসিবাদী’ দল। এই ‘ফ্যাসিবাদী’ দলটির বাংলাদেশে প্রতিবাদ করার মত কোনো সুযোগ নেই। ‘গণহত্যাকারী ও স্বৈরশাসক’ শেখ হাসিনার নির্দেশে কেউ সভা, সমাবেশ ও মিছিলের চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তা কঠোরভাবে মোকাবিলা করবে। দেশে আইনশৃঙ্খলা বিনষ্ট হয়, এমন কোনো কর্মকাণ্ড অন্তর্বর্তী সরকার বরদাশত করবে না।”
আওয়ামী লীগের এ কর্মসূচির বিষয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফি বলেন, “শহীদ নূর হোসেন দিবস শুধু আওয়ামী লীগ একা পালন করে বিষয়টা তা না, এটা দেশের সকল রাজনৈতিক দল পালন করে আসছে। আমরাও প্রতি বছরের ন্যায় দিনটিকে স্মরণ করব, শ্রদ্ধা নিবেদন করব। এখানে আমাদের ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সহযোগী সংগঠনের নেতারা শ্রদ্ধা নিবেদন করবে।”
গত ৫ অগাস্ট সরকার পতনের দিনেই শেখ হাসিনা তার বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে ভারতে উড়ে যান। সেদিনই দলটির কেন্দ্রীয়, ধানমন্ডিতে দলীয় সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় এবং তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা কার্যালয়ে হামলা করে লুটের পর আগুন দেওয়া হয়।
সেদিন থেকেই দলটির শীর্ষস্থানীয় থেকে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে। গোপালগঞ্জ ছাড়া অল্প দুই একটি জেলায় মিছিল হয়েছে। ঢাকায় গভীর রাতে বা ভোরে নিষিদ্ধ ঘোষণার পর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ঝটিকা মিছিল দেখা গেছে।