রাজনৈতিক দলের স্বকীয়তা বজায় রেখেই জাতীয় ঐক্য সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
Published : 22 Jan 2025, 11:26 PM
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে জড়িত থাকা কারোর অন্তর্বর্তী সরকারের অংশ হওয়া উচিত হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল।
বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক আলোচনা তিনি বলেন, “তারা অংশ না হলে; বাইরে থেকে আমরা যে চাপ সৃষ্টি করতে পারতাম কিংবা করতে পারতেন- সেটা অনেক অংশে কমে গেছে। এটা বাস্তবতা, বলে না অনেকে।”
কোটা সংস্কার থেকে সরকার পতনের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে রয়েছেন৷
‘জাতীয় ঐক্য: কেন, কিসের ভিত্তিতে ও কোন পথে?’ শীর্ষক আলোচনা সভায় পণ্যের উচ্চমূল্যের প্রসঙ্গ টেনে আলাল বলেছেন, ঐক্য এবং সংস্কারের আগে এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
“দরিদ্র মানুষেরা কোন সংস্কার নিয়ে চিন্তা করবে; কোন ঐক্যের চিন্তা করবে? এখন ক্ষুধায় তার পেটের যে অবস্থা। আবার রমজান সামনে আসছে। কয়েক লাফে মূল্য বেড়ে যাবে, এতে কোন সন্দেহ নেই।”
রাজনৈতিক দলের স্বকীয়তা বজায় রেখেই জাতীয় ঐক্য সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির এই নেতা।
তিনি বলেন, “উদ্যোগটা নিতে হবে তরুণদের। যারা একান্নবতী পরিবারের সদস্য হবেন না, তারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সরে যাবেন।”
আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার সফল আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও তাদের সংগঠন জাতীয় নাগরিক কমিটি সংস্কার শেষ করে নির্বাচন করার কথা বলে আসছে। পাশাপাশি তারা ‘গণপরিষদ’ নির্বাচন দাবি করছে।
‘ইউনিটি ফর বাংলাদেশ’ আয়োজিত আলোচনা সভায় গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, “জাতীয় নির্বাচনের জন্য যেমন সংস্কার আনা দরকার; তেমনি সংস্কার সম্পন্ন করার জন্যও নির্বাচনের প্রয়োজন রয়েছে।”
যে সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে তা জনগণের সম্মতির ভিত্তিতে হচ্ছে, সেই বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত করার উপর জোর দিয়েছেন তিনি।
আগামী নির্বাচনটা নিদেন পক্ষে ‘সংবিধান সংস্কার সভা’ নির্বাচন করার প্রস্তাব দেন জোনায়েদ সাকি।
তিনি বলেন, “একটা অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে চাইলে অনেকগুলো সংস্কার দরকার। কিন্তু মৌলিক কাঠামোগত যে সংস্কার, সে দাবিও সামনে আসছে; সংবিধান বদলাতে হবে- সেটা সম্পন্ন করতেও কিন্তু নির্বাচন লাগবে, সেটাকে চূড়ান্ত করতেও নির্বাচন লাগবে।
“সেটা জনগণের সম্মতি ছাড়া আপনি কিংবা কেউ কেউ চূড়ান্ত করতে পারবেন না যদি জনগণের সার্বভৌমত্ব স্বীকার করেন।”
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই দেশের পররাষ্ট্রনীতি আলোচনায় উঠে আসে। আওয়ামী লীগ সরকারের পররাষ্ট্রনীতি ভারত নির্ভর ছিল, এমন সমালোচনা রয়েছে।
সে বিষয়ে জোনায়েদ সাকি বলেন, নিজের দেশের স্বার্থে অন্যদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে হবে; কোনো একটি দেশকে ‘শত্রু ঘোষণা’ করার মধ্য দিয়ে একটি দেশের জনগোষ্ঠীর স্বার্থভিত্তিক পররাষ্ট্রনীতি হতে পারে না।
নতুন রাজনৈতিক দল কোনোভাবেই সরকারের ‘ক্ষমতা বলে’ হওয়া উচিত নয় মন্তব্য করেছেন তিনি।
“এতবড় একটা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে, সে অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে যদি কোন রাজনৈতিক দল গড়ে উঠে তা জনগণের ভেতর থেকে গড়ে উঠতে হবে।”
আর জাতীয় ঐক্যের বিষয়ে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী বলেন, ঐক্য বজায় রাখতে না পারলে তা অভ্যুত্থানকে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এবং ব্যর্থ করতে পারে।
“ঐকমত্য থাকা মানেই এমন নয়, সবাই সবার মতামত স্থগিত রাখবে, রাজনৈতিক লক্ষ্য স্থগিত রাখবে, যার যার রাজনৈতিক চেষ্টা, তৎপরতা সবই বহাল থাকবে।”
নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি বইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে ‘আদিবাসী’ শব্দযুক্ত একটি চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছিল। সেখানে একটি গাছের পাঁচটি পাতায় লেখা ছিল মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ ও আদিবাসী; পাশে লেখা ছিল ‘পাতা ছেঁড়া নিষেধ’।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী ‘স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টি’ ব্যানারে গত ১২ জানুয়ারি এনসিটিবি ঘেরাও করার পর রাতে ওই বইয়ের অনলাইন সংস্করণ থেকে চিত্রকর্মটি সরিয়ে ফেলা হয়।
এর প্রতিবাদে বুধবার পাঠ্যপুস্তক ভবন ঘেরাওয়ের ঘোষণা দেয় ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা’ নামে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের একটি সংগঠন। ‘স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টি’ও একইসময়ে পাঠ্যপুস্তক ভবন ঘেরাও করার ঘোষণা দেয়। সেখানে কর্মসূচি চলাকালে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করা হয়।
এ হামলার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতার’ ব্যানারে শিক্ষার্থীরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ঘেরাও করতে গেলে শিক্ষাভবনের সামনে তাদের বাধা দেয় পুলিশ। শিক্ষার্থীরা বাধা উপক্ষো করে এগোতে গেলে জলকামান ব্যবহার ও লাঠিপেটা করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়।
এ হামলার প্রসঙ্গ টেনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি- সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক রাগীব আহসান মুন্না বলেছেন, “আওয়ামী লীগের কায়দাতে তাদের উপর নির্যাতন করা হয়েছে।
“আমরা দেখলাম অভ্যুত্থানের পাঁচ সাত দিনের মধ্যে শ্রমিককে গুলি করে হত্যা করা হল, ধনী এবং লুটেরাদের চেতনাতেই রাষ্ট্রটাকে পরিচালনা করা হচ্ছে।”
জাতীয় ঐক্য তৈরির ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে আয়োজিত এ আলোচনায় সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি বাকী বিল্লাহ।
সেখানে বক্তব্য রাখেন নিউ এজ সম্পাদক নুরুল কবির, সাবেক সেনা কর্মকর্তা আমিনুল করিম, তুহিন খান।