আওয়ামী লীগের পক্ষে ’কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দাঁড়ানোর চেষ্টা’ করলে ছাত্র-জনতা রাজপথে দাঁড়িয়ে তার বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তুলবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
Published : 22 Mar 2025, 10:11 PM
গণ অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে কোনোভাবেই পুনর্বাসন হতে না দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন, “যে ভাইয়েরা রাজপথে জীবন দিয়েছেন, তাদের রক্তের শপথ, আমাদের শরীরে একবিন্দু রক্ত থাকতে আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করতে দেব না।”
আওয়ামী লীগের পক্ষে ’কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দাঁড়ানোর চেষ্টা করলে’ ছাত্র-জনতা রাজপথে দাঁড়িয়ে তার বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তুলবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
শনিবার বিকালে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত এ বিক্ষোভ সমাবেশে এ মন্তব্য করেন আখতার হোসেন।
’গণহত্যার’ দায়ে আওয়ামী লীগের বিচার, নিবন্ধন বাতিল, রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবিতে এ বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতাদের নিয়ে নবগঠিত এনসিপির ঢাকা মহানগর শাখা।
আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার বিষয়টি আবার সামনে আসে বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের (আইসিজি) প্রেসিডেন্ট ও সিইও কমফোর্ট ইরোর সঙ্গে আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের এ সংক্রান্ত বক্তবের পর।
ওই আলোচনায় তিনি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো পরিকল্পনা না থাকার কথা তুলে ধরেন।
তবে দলটির যেসব নেতার বিরুদ্ধে হত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে, তাদের বাংলাদেশের আদালতে বিচারের আওতায় আনার কথা বলেছেন তিনি।
তার ওই বক্তব্যের পর এনসিপির নেতারা আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে ফেরানোর যে কোনো পদক্ষেপের বিরোধীতায় সোচ্চার হন। শুক্রবারও সংগঠনটির নেতারা এ নিয়ে বক্তব্য দেন। শনিবার দলটির ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বানে এ বিক্ষোভ সমাবেশের পাশাপাশি অন্য নেতারা অন্যান্য অনুষ্ঠানে এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বক্তব্য দেওয়া অব্যাহত রেখেছেন।
শাহবাগে সমাবেশে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার শুধু নেতাকর্মীদের নয়, দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার ও দলটির নিবন্ধন বাতিলের দাবি আবার তোলেন। বলেন, “আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের নাম বা আদর্শে কোন রাজনীতি চলবে না সে নিশ্চয়তা আমাদের দিতে হবে।“
আওয়ামী লীগ যে ’বাংলাদেশে আর রাজনীতি করতে পারবে না’ সে সিদ্ধান্ত ‘দেশের মানুষ জীবন দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “যে ভাইয়েরা রাজপথে জীবন দিয়েছেন, তাদের রক্তের শপথ, আমাদের শরীরে একবিন্দু রক্ত থাকতে আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করতে দেব না।”
বিক্ষোভ সমাবেশে ঢাকা মহানগর শাখার নেতাকর্মীদের পাশাপাশি দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেন। সমাবেশ শেষে মিছিল নিয়ে তারা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পর্যন্ত গিয়ে কর্মসূচি সমাপ্ত করেন।
সমাবেশে আখতার হোসেন বলেন, “কোনো শান্তিপূর্ণ ঘটনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ থেকে আওয়ামী লীগের বিদায় হয় নাই, হাজারো মানুষের জীবন আর রাজপথ ভরা রক্তের মধ্য দিয়ে ওই খুনী ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বিদায় হয়েছে।
”আমাদের পুনর্জন্ম হতে পারে কিন্তু আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন হতে দেব না। আওয়ামী লীগ যতবার ক্ষমতায় এসেছে ততবার বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।”
তিনি বলেন, “পিলখানা হত্যাকাণ্ড, ১৩ সালের হত্যাকাণ্ড, শাপলার হত্যাকাণ্ড, ২৪ এর হত্যাকাণ্ড-কোনো হত্যাকাণ্ডের জন্যই যে আওয়ামী লীগ এখনও পর্যন্ত দুঃখপ্রকাশ করে নাই, অনুশোচনা করে নাই, দায় স্বীকার করে নাই।
“আশ্চর্যের বিষয় হল সাত মাস পেরিয়ে গেছে, অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের ব্যাপারে কোনো বিচারিক কার্যক্রম শুরু করেনি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলব, দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। আওয়ামী লীগের নামে কোনো সাংগঠনিক কোন রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাতে দেওয়া যাবে না। আওয়ামী লীগের নিবন্ধন অল্প সময়ের মধ্যে নিবন্ধন বাতিল করতে হবে। আওয়ামী লীগের নিবন্ধন যদি বাতিল না করা হলে ছাত্র-জনতা রাজপথে এসে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করিয়েই ছাড়বে।”
বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক শক্তির প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “জুলাই চর্টারে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের কথা উল্লেখ থাকতে হবে।”