“এ লোকগুলো গত ১৭ বছর টাকা কামিয়েছে আর আগামী ১৭ বছর এই টাকা খরচা করবে বাংলাদেশ ধ্বংস করার পেছনে,” বলেন তিনি।
Published : 11 Mar 2025, 11:33 PM
যেসব ব্যবসায়ী ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সুবিধা নিয়েছেন এবং এখন রাজনৈতিক দলগুলোকে নানাভাবে সহযোগিতা করছেন তাদের নিয়ে সংবাদমাধ্যম লিখছে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
তবে তিনি কোনো ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক দলের কোনো নেতার নাম উল্লেখ করেননি।
মঙ্গলবার ঢাকার গুলশানে লেক শোর হোটেলে সাংবাদিকদের সন্মানে আয়োজিত এক ইফতারে মির্জা আব্বাস বলেন, “আপনারা লিখছেন না কোন কোন ব্যবসায়ীর হেলিকাপ্টারে কে বেড়াতে যায়। কোন ব্যবসায়ী কাকে কত টাকা দেয়। কোন ব্যবসায়ীকে আমাদের অনেক রাজনৈতিক দল পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছে।”
তিনি বলেন, “একটি বিশেষ দল সম্পর্কে আপনারা কোনো সাংবাদিক কোনো কিছুই লিখছেন না, পর্দা অন্তরালে আরও অনেক কিছু আছে, ঘটছে, আপনারা কিন্তু লিখছেন না। শুধু লিখছেন বিএনপি সম্পর্কে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে-বাড়িয়ে লিখছেন।”
রাজনৈতিক দলকে সহায়তা করা ব্যবসায়ীদের নিয়ে লেখা হচ্ছে না মন্তব্য করে মির্জা আব্বাস বলেন, “যাদের নামে হত্যা মামলা থাকার পরও একটি দুইটি নয়… এই ঘটনার পরেও অনেক ঘটনা রয়ে গেছে। জুলাই-আগস্ট ছাড়াও হত্যার ঘটনায় এমন ব্যবসায়ী মহল জড়িত আছে তাদের বিরুদ্ধে আপনারা কিছু লিখছেন না।”
সাংবাদিকদের সমালোচনা করছে না দাবি করে তিনি বলেন, “আমি আপনাদের আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে চাই যে, আপনারা কোথায় কোথায় ভুল করছেন।”
এতে দেশের ক্ষতি হচ্ছে, জাতির ক্ষতি হচ্ছে দাবি করে বিএনপির এই নেতা বলেন, “আপনারা (সংবাদমাধ্যম) কেনো তুলে ধরছেন না যারা জুলাইয়ের প্রথম দিকে ব্যবসায়ীদের সম্মেলনে কারা কারা ছিলেন, কারা কারা গ্রেপ্তার হয়েছেন, কারা কারা হয় নাই, কেনো হয় নাই এটা কিন্তু আপনাদের তুলে ধরা দরকার।”
তিনি বলেন, “এ লোকগুলো গত ১৭ বছর টাকা কামিয়েছে আর আগামী ১৭ বছর এই টাকা খরচা করবে বাংলাদেশ ধ্বংস করার পেছনে।”
এসব ব্যক্তিকে তুলে ধরতে ও তাদের বিষয়ে সাবধান করতে খবর করার আহ্বান জানিয়ে মির্জা আব্বাস বলেন, “ওরা মনে করে টাকা হলে বোধহয় পৃথিবীটা পকেটে নেওয়া যায়। কিন্তু ওরা জানে না টাকা হলে সব সাংবাদিকদের কেনা যায় না। এটা আমার জীবনে দেখা ব্যাপার। টাকা হলে সকল সাংবাদিককে কেনা যায় না।”
বিগত ‘ফ্যাসিস্ট’ সরকারের মদদপুষ্ট ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সংবাদমাধ্যমকে সোচ্চার হওয়ার জন্য কেন এমন আহ্বান জানাচ্ছেন তার কারণও তুলে ধরে তিনি।
মির্জা আব্বাস বলেন, “যাদের বিরুদ্ধে আামি বললাম আমি তাদের বিরুদ্ধে বলি নাই। আমি আমার পক্ষে বলেছি। কারণ আমি বাঁচতে চাই, আমাকে বাঁচতে হবে।
“আর ওই লোকগুলো যদি অবৈধ টাকা নিয়ে এভাবে ঘুরে বেড়ায় তাহলে বাংলাদেশের কোনো মানুষ সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে পারবে না। এ দেশটাকে তারা অসুস্থ করে তুলবে, এ দেশের মানুষকে তারা অসুস্থ করে ফেলবে, এ দেশের গণতন্ত্রকে তারা অসুস্থ করে ফেলবে।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটিরি এই সদস্য বলেন, “শুধু অবৈধ টাকা লুটকারী ব্যবসায়ী না, সচিবালয়ে খোঁজ নেন আওয়ামী দোসরা কীভাবে সেখানে সবকিছু নিয়ে বসে আছে। আওয়ামী দোসরা সচিবালয়ে, থানা, ইউনিয়ন পরিষদ সমস্ত জায়গায় অবস্থান নিয়েছে।”
‘‘সুতরাং সাংবাদিকদের উচিত হবে দেশ ও জাতিকে বাঁচানোর জন্য ওদের অবস্থানের খবর সংগ্রহ করে মানুষের সামনে তুলে ধরা।”
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথ-পরিক্রমায় সাংবাদিকদের ভূমিকার প্রশংসা করেন বিএনপির এই নেতা।
তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের দোসররা আজকে কে কোথায় অবস্থান করছে এবং বাংলাদেশের রাজনীতিতে কোন কোন রাজনৈতিক দলের কার কি অবস্থান, কোথায় অবস্থান এটা আপনাদের পরিস্কারভাবে তুলে ধরতে হবে।”
সাংবাদিকদের সম্মানে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ নামের একটি সংগঠন আয়োজিত ইফতারপূর্ব আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন মির্জা আব্বাস।
সেখানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমন। আর সদস্য জাহিদুল ইসলাম রনির সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান ও সেলিমা রহমান।
ইফতারে উপস্থিত ছিলেন মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, সম্পাদক মাহবুবা চৌধুরী, বিএনপির শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, রশিদুজ্জামান মিল্লাত, মওদদু হোসেন আলমগীর পাভেল, শাম্মী আখতার, আশরাফ উদ্দিন বকুল, আবুল কাশেম, মোস্তফা ই জামান সেলিম, বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তার, ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ এর সদস্য সচিব মোকছেদুল মোমিন মিথুন।