“ম্যাডামের জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে দোয়া কামনা করছি, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেবও দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন,” বলেন তিনি।
Published : 22 Jan 2025, 10:15 AM
চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে যাতে বিভিন্ন স্থানে নেওয়ার প্রয়োজন না পড়ে, সেই উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
তিনি বলেন, “গত ৮ জানুয়ারি থেকে ম্যাডাম লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি আছেন। উনার সর্বশেষ যে রিপোর্টগুলো তার প্রফেসর জন প্যাট্রিক কেনেডির নেতৃত্বাধীন মেডিকেল বোর্ড পর্যালোচনা করেছেন এবং পরবর্তীতে আরো কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী দুই-একদিনের মধ্যে লন্ডনের আরও দুইজন চিকিৎসক উনাকে দেখবেন।”
বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি এ কথা বলেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জাহিদ হোসেন বলেন, “উনার চিকিৎসার ব্যাপারে আমাদের যে পদ্ধতি অর্থাৎ উনাকে তো এখন ঔষুধ দিয়ে চিকিৎসা চলছে লিভারের জন্য, কিডনির জন্য, হার্টের জন্য, ডায়াবেটিস, প্রেসার, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস- প্রত্যেকটির জন্য।
“এর বাইরেও আরও যদি কোনো চিকিৎসা করা যায়, সেজন্য যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স হসপিটালের মেডিকেল টিমের সদস্যরা এখানে মেডিকেল বোর্ডের সভায় অংশগ্রহণ করেছিলেন- যাতে আমরা এটাকে এক ছাদের নিচে চিকিৎসা যেটা বলে, ওয়ান আমব্রেলার নিচে অর্থাৎ ওয়ান স্টপ সার্ভিসের মতো সেটা করার ব্যাপারে উনারা উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।”
জাহিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তারপরে উনার সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে উনার বয়স, উনার রোগের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যে যে ধরনের ক্ষতি গত সাড়ে ৫ বছর যাবৎ বাংলাদেশে বন্দি থাকা অবস্থায়- সুচিকিৎসা কম পাবার জন্য যা হয়েছে, বাইরে নিতে না পারার জন্য যা হয়েছে সেগুলো বিবেচনায় রেখে- উনার বয়সের কথা বিবেচনায় রেখে উনার জন্য যেটা সবচেয়ে মঙ্গলজনক হবে, সেই ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করবে বলে আমরা আশা করি এবং উনারা (লন্ডন ক্লিনিক) সেই ধরনের চিন্তা করছেন।
‘‘সেটা হয়ত আগামী দুই-তিনদিন পরে যখন আবার মেডিকেল বোর্ডের এক্সটেন্ডেড মেম্বার আছেন, উনারাও এদেশের (যুক্তরাজ্যের) এবং দেশের বাইরের তারা এই ব্যাপারে মতামত দেবেন; পরবর্তীতে সেই অনুযায়ী ইনশাল্লাহ উনার চিকিৎসা চলবে।”
‘দেশবাসীর কাছে দোয়া প্রার্থনা’
অধ্যাপক জাহিদ বলেন, ‘‘শুধু লন্ডনসহ প্রবাসীরা নয়, বাংলাদেশের মানুষ উদগ্রীব হয়ে আছেন ম্যাডামের সুস্থতার জন্য। উনার সুচিকিৎসার জন্য আমরা দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই- উনার সুস্থতার জন্য।
“আপনাদের মাধ্যমে ম্যাডামের জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে দোয়া কামনা করছি, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেবও দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।”
বিএনপি নেতা জাহিদ বলেন, “বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা সার্বক্ষণিকভাবে, নিকট আত্মীয়রা বিশেষ করে উনার দুই পুত্রবধূ জোবাইদা রহমান, সৈয়দা শামিলা রহমান সিঁথি, তিন নাতনি জাইমা রহমান (তারেক রহমানের মেয়ে), জাফিয়া রহমান ও জাহিয়া রহমান (আরাফাত রহমান কোকোর মেয়ে) সবসময়ই এবং দেশের (লন্ডন) বাইরে যারা আছেন, তারা ওভার টেলিফোন সার্বক্ষণিকভাবে ম্যাডামের খোঁজ-খবর নিতে যোগাযোগ রাখছেন।”
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় লন্ডন বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক, সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমেদসহ কয়েকজন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করছেন বলে জানান জাহিদ।
৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন।
দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পাঁচ মাস বাদে চিকিৎসার জন্য গত ৭ জানুয়ারি যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয় বিএনপি চেয়ারপারসনকে। প্রাথমিক পরিকল্পনায় তার লন্ডন হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার কথা বলা হলেও এখন যুক্তরাজ্যের হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়াই চূড়ান্ত হয়েছে।
সবশেষ সাড়ে সাত বছর আগে যুক্তরাজ্যেই চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলেন ৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া। সেবার চোখ ও পায়ের চিকিৎসা নিয়েছিলেন। লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, ফুসফুস, আর্থ্রাইটিস, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ নানা জটিলতায় তিনি ভুগছেন।
মাঝে কারাবন্দি জীবনের পর শর্তসাপেক্ষে মুক্তি মিললেও বিদেশে তার চিকিৎসার অনুমতি দেয়নি তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। এই অনুমতির জন্য তার দল আন্দোলন-সংগ্রাম করেও সুবিধা করতে পারেনি।
সেই কারণে ২০১৭ সালের ১৫ জুলাই বিএনপি চেয়ারপারসনের লন্ডনযাত্রার পর আর কোনো বিদেশ সফর হয়নি।