খালিদ মাহমুদ বলেন, "কামবালার বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে বলেছি, কামবালা হচ্ছে ভোটার অব দ্য ইলেকশন।”
Published : 02 Jun 2024, 04:47 PM
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে দিনাজপুরের বিরলে নৌকার প্রচারে অংশ নিয়ে আলোচনায় আসা ৯২ বছর বয়সী কামবালা বেওয়াকে আর মাটির ঘরে থাকতে হবে না। জীবন সায়াহ্নে আসা এই নারীর জন্য তিনটি পাকা ঘর উপহার দিয়েছেন নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
বাড়ি পেয়ে উচ্ছ্বসিত এই বৃদ্ধা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মুই খুব খুশি হইচো, মোর বেটা মোক তিনটা বাড়ি বানায় দিছে।"
ভোটের আগে দিনাজপুর-২ আসনের বিরল উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের কালিয়াগঞ্জ বাজারে নির্বাচনি পথসভা করছিলেন খালিদ মাহমুদ। বর্ষীয়ান কামবালা সেদিন শতশত মানুষের ভিড় ডিঙিয়ে একেবারে পৌঁছে যান খালিদের সামনে। এবং খালিদের হাতে ১০ টাকার একটি নোট দিয়ে কামবালা বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধুর নৌকায় খালিদ যেন ভোট দেন আর এই টাকাও যেন ভোটের কাজে খরচ করা হয়।
খালিদ ছাড়াও সেখানে উপস্থিত অন্যদের কাছেও নৌকায় ভোট চান এই নারী।
নির্বাচনে জয় পেয়ে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী নিজের এলাকায় গিয়ে সবার আগে যখন কামবালাকে তার বাড়িতে দেখতে গিয়েছিলেন, তখন বর্ষীয়ান মানুষটি বলছিলেন, "বেটা মোর ঘরত বসিবার জায়গা নাই, আগিনাত বস। ”
তিন ছেলেকে নিয়ে কামবালা থাকতেন ছনের ছাদ ছাওয়া জরাজীর্ষ মাটির বাড়িতে, টিনের চাল ছিল কেবল বাড়ির একটি অংশে। ওই সময় বাড়ির আঙিনাকে দাঁড়িয়েই কামবালার সঙ্গে কথাবার্তা হয়েছিল প্রতিমন্ত্রীর।
এর পাঁচ মাসের মাথায় প্রতিমন্ত্রীর নিজস্ব অর্থায়নে তিনটি বাড়ি করে দেওয়া হয় কামবালাকে। রোববার কামবালাকে নিয়ে নতুন বাড়িতে ঢুকতে ফিতা কাটেন প্রতিমন্ত্রী।
এরপর নতুন বাড়ির ঘরে খাটে বসতে প্রতিমন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়ে কামবালা বলেন, "বেটা মোর ঘরত বসিলে হইচো।"
চলতি ভাষার উত্তরে খালিদ বলেন, "আমি তো তোর ঘরে বসবার জন্যই আইচ্চু।"
পরে প্রতিমন্ত্রী কামবালার ঘরে বসে আপ্যায়ন গ্রহণ করে।
আপ্লুত কামবালা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "মুই কল্পনাও করিবার পরনি যে মুই বিল্ডিংগের ঘরত থাকিবার পারিম। মোর ছাওয়ালগুলা মানুষের জমিত ধান আবাদ করি যে টাকা পায় তা দিয়ে কোন মতে মোর বাড়ির লোকের পেটত খাবার জোটে আর ঘর বাড়ি তো দুরের কথা। মুই যেই পরিমাণ খুশি হইচো, তা কখনও ভাবিবাও পারনাই। মোর জীবনে সবথাকি আজকা বেশি খুশি হইচো মোর সব বেটা গুলাক ঘরবাড়ি দি। অনেক অনেক ধন্যবাদ মোর বেটা মোক যে ঘরবাড়ি দিছে।"
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, "আমার রাজনৈতিক জীবনে একটি বিরল অভিজ্ঞতা গত জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে। আমি এতদিন রাজনীতি করেও যেটা শিক্ষা লাভ করিনি, আমাদের গদাবাড়ী গ্রামের ৯২ বয়সের এই বৃদ্ধা কামবালা আমাকে সেই শিক্ষা দিয়েছেন। একটি ভোট একটি এলাকার জন্য, একটি দেশের জন্য, সমগ্র জনগোষ্ঠীর জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা তিনি দেখিয়েছেন।”
সেদিনের ঘটনা বর্ণনা করে খালিদ বলেন, "সেই পথসভাটি জনসভায় রূপ নিয়েছিল। হাজার হাজার মানুষ সেখানে উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ করে আমার মা বোনেরা। সেই অনুষ্ঠানে এত মানুষের ভিড় ঠেলে কামবালা তিনি তার প্রার্থীকে চিনেন না, তিনি যে আদর্শকে সমথর্ন করেন, যে দলের প্রতি তার ভরসা আছে, যে নেতৃত্বের প্রতি তার বিশ্বাস আছে, সেই নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের সভামঞ্চের দিকে এগিয়ে গেলেন। প্রার্থীকে খুঁজে নিয়েছেন। তিনি সেই সময় তার যৎসামান্য সঞ্চয় তুলে দিয়েছেন।
"বাংলাদেশের প্রতীক, স্বাধীনতার প্রতীক, আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকার প্রতি কামবালা বেওয়ার অগাধ বিশ্বাস আছে। আমি যখন নৌকার তাকে (কামবালাকে) ব্যাচ পরিয়ে দিতে দিচ্ছিলাম। তখন তিনি বলেছিলেন- ‘আমি এই প্রতীক চিনি, এই প্রতীক আমাকে চিনাতে হবে না।’ নৌকার মার্কার প্রতি তার অগাধ আস্থা, বিশ্বাস, তা দেখে একজন প্রার্থীও একজন ভোটারের কাছে পরাজিত হয়ে গেছে।"
খালিদ মাহমুদ বলেন, "কামবালার বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে বলেছি, কামবালা হচ্ছে ভোটার অব দ্য ইলেকশন। তিনি যে দৃষ্টান্ত রেখেছেন, এটা শুধু ভোটের বিষয় না, শিক্ষণীয় বিষয়। একটি ভোট একটি জাতির ভাগ্য পরিবর্তন করে দিতে পারে। একটি ভোট একটি দেশকে উন্নয়নের শিখড়ে নিয়ে যেতে পারে, একটি ভোট একটি জনগোষ্ঠীকে সমগ্র পৃথিবীতে জাগ্রত করতে পারে। ”
আরও পড়ুন: