মার্কিন ভিসা নীতি: বিএনপি এবার ‘সচেতন’ হবে, আশা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমরা সুষ্ঠু সুন্দর নির্বাচন করতে চাই, এইটাকেই তারা (যুক্তরাষ্ট্র) সমর্থন দিয়েছে। সুতরাং, নাথিং টু ওরি…।”

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 May 2023, 09:14 AM
Updated : 25 May 2023, 09:14 AM

বাংলাদেশে ‘গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ীদের’ ভিসা না দেওয়ার যে নতুন নীতি যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করেছে, তাতে সরকার ‘মোটেও ভীত নয়’ বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

তিনি বলেছেন, “আমেরিকার এই ভিসার রেস্ট্রিকশন শুধু সরকারি দলের ওপর না, অপজিশনের লোকজনেরও ওপর বর্তাবে। এতে করে আমরা আশা করি, এবার তারা (বিএনপি) ইনশাল্লাহ একটু সচেতন হবে।”

বৃহস্পতিবার সকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই প্রতিক্রিয়া আসে।

এর আগে বুধবার বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র জানায়, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের এই নীতির আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ভিসা দেওয়া হবে না।

র‌্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞার দেড় বছর পর ভিসা নিয়ে ওয়াশিংটনের নতুন নীতির ঘোষণা এল।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে ব্লিংকেন বুধবার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্রের স্বার্থেই’ তাদের এ পদক্ষেপ। বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে যারা এগিয়ে নিতে চায়, তাদের সবাইকে সমর্থন দিতে এই নীতি ঘোষণা করেছেন তিনি।

তার ভাষ্য, “এই নীতির অধীনে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে মনে করা যে কোনো বাংলাদেশি ব্যক্তির জন্য ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপে সক্ষম হবে।”

বৃহস্পতিবার সাংবাদিকরা যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে দুদিন আগে সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি কর্মীদের সংঘর্ষের প্রসঙ্গ টানেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “ইদানিং যে জ্বলাও-পোড়াও চলে, আমরা এই জ্বালাও-পোড়াও চাই না। তাই আমরা বিশ্বাস করব, ভিসা রেস্ট্রিকশনের ঘোষণা পর এই জ্বালাও-পোড়াও দলরা একটু সচেতন হবে।

“রাস্তা দখল করে যে আন্দোলন, ওগুলা কমবে। মানুষের জীবন অতিষ্ঠ করে দিয়ে, পাবলিক এবং প্রাইভেট প্রোপার্টি ধ্বংস করে, জ্বালাও-পোড়াও করে… গতবার তারা ৩৮০০টা গাড়ি, ২৭টা বগি জ্বালাইছে।”

মোমেন বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের ক্ষমতায় বিশ্বাস করে। আর ‘গণতন্ত্র আছে বলেই’ দেশের মানুষের উন্নতি হয়েছে।

“এ দেশে গত ১৪ বছর ধরে আওয়ামী লীগ সরকার আছে বলেই একটা গণতন্ত্রের প্রক্রিয়া চলছে। এর মাঝে হাজার হাজার নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচনের মাধ্যমেই সরকার এসেছে। ২০০৮ সাল থেকে গণতান্ত্রিক মাধ্যমেই সরকার পরিচালিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ সবসময় জনগণের ভোটের মাধ্যমে সরকারে আসতে চায়।”

যুক্তরাষ্ট্রের ওই ভিসা নীতি নিয়ে সরকার ‘মোটেও ভীত নয়’ জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “শুনছি তো যে ওটা সব দেশের জন্য। ভালো তো। চিন্তার কিছু নাই। এটা বরং আমাদের অবস্থানকে আরও শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়েছে। আমরা স্বচ্ছ সুন্দর ইলেকশন করে দেব।”

মোমেনের ভাষ্য, স্বচ্ছ এবং সুন্দর নির্চানের জন্য সরকার ‘বদ্ধ পরিকর’। নির্বাচন যাতে স্বচ্ছ হয়, সেজন্য বিগত বিছরগুলোতে সরকার অবকাঠামোগত উন্নয়ন করেছে।

“বিএনপির সময় ১ কোটি ২৩ লক্ষ ফেইক ভোটার তৈরি হয়েছে। যাতে ফেইক ভোট না হয়, সেজন্য ভোটারের ফটো আইডি করে দিয়েছি। কেউ কেউ অভিযোগ করে যে রাতের অন্ধকারে নাকি ভোট হয়ে যায়। সেজন্য আমরা স্বচ্ছ ট্রান্সপারেন্ট ব্যালট বাক্স তৈরি করেছি।

“ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশনের জন্য আমরা শক্তিশালী ইসি তৈরি করেছি। ইলেকশনের সময় এটাকে ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার করার দায়িত্ব কিন্তু সে ইলেকশন কমিশনের, সরকার তাদের সাহায্য করবে।”

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমরা সুষ্ঠু সুন্দর নির্বাচন করতে চাই, এইটাকেই তারা (যুক্তরাষ্ট্র) সমর্থন দিয়েছে। সুতরাং, নাথিং টু ওরি…। সেইসাথে তারা এও বলেছে যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে একটা ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশনের যে আগ্রহ, সেটাকে আরও শক্তিশালী করার জন্য তারা এই নীতিটা করেছে।”

গত ৩ তারিখ পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে নতুন এই ভিসা নীতির ব্যাপারে প্রথম জানানো হয়। সেই চিঠির ব্যাপারে এক প্রশ্নে মোমেন বলেন, “আমাকে তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী চিঠি দিয়েছে। সেই চিঠিতে অত্যন্ত সুন্দর কথা বলেছে, অপূর্ব চিঠি দিয়েছে। তারা তাদের কাজ করেছে। আমরা আমাদের কাজ করেছি। এটা বাড়তি কোনো প্রেশার না।”

চিঠির একটি অংশ উপস্থিত সাংবাদিকদের পড়ে শুনিয়ে মন্ত্রী বলেন, “চিঠির এক জায়গায় উল্লেখ করেছে, দিস পলিসি সাপোর্টস প্রাইম মিনিস্টার হাসিনা’স স্টেডেড কমিটমেন্ট টু হোল্ড ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশন ইন বাংলাদেশ অ্যান্ড অ্যালাও দ্য ইউনাইটেড স্টেটস টু অ্যাক্ট হোয়েন বাংলাদেশি সিটিজেন্স অর অফিশিয়ালস ফ্রম অল পলিটিক্যাল পার্টিস আন্ডারমাইন দিস ক্রিটিক্যাল পিলার অব ডেমোক্রেসি… তারা প্রধানমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করেছে।”