“কেন জানি, ভারত বাংলাদেশের মানুষ, তাদের নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্য জীবন যাপনের প্রতি উদাসীন”, বলেন বিএনপি নেতা।
Published : 22 Aug 2024, 10:11 PM
ভারত নিজেদেরকে ‘বন্যামুক্ত’ রাখতে ত্রিপুরার ডাম্বুর বাঁধ খুলে দিয়ে বাংলাদেশকে বন্যায় ডোবাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বৃহস্পতিবার বিকালে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপি নেতা বলেন, “ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে। …সেখানকার নদ-নদী উপচে পড়ছে। বাঁধ থাকার কারণে তাদের (ভারতের) এলাকাগুলোকে বন্যামুক্ত রাখার জন্য এই মুহূর্তে বাঁধের গেইট খুলে দেয়া হয়েছে।
“এটা তো সত্য কথা। এটা তো আপনি অস্বীকার করতে পারছেন না, তাদের (ভারত) ওখান থেকে যাই বলুক না কেন।”
বাংলাদেশের উত্তর পূর্ব ও পূর্বাঞ্চলে বন্যার পর সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়েছে ভারতের ত্রিপুরায় ডাম্বুর নামে একটি জলবিদ্যুৎকেন্দ্রের বাঁধ খুলে দেওয়া হয়েছে এবং একেই এই বন্যার জন্য দায়ী করে বক্তব্য রেখেছেন দুই উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
আসিফ তার ফেসবুক পাতায় লিখেছেন, “নোটিশ ছাড়াই ওয়াটার গেইট খুলে দিয়ে বন্যার সৃষ্টি করা ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের অবনতির কারণ হতে পারে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের জনগণের কাছে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে হবে।“
নাহিদ বলেছেন, “কোনো ধরনের আগাম সতর্কতা ও প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ না দিয়ে এ যে বাঁধ খুলে দেওয়া হয়েছে; এটির মাধ্যমে ভারত অমানবিকতার পরিচয় দিয়েছে এবং বাংলাদেশের সাথে অসহযোগিতা করছে।”
এ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে একটি ব্যাখ্যা দিয়েছে।
ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, “ত্রিপুরায় গোমতী নদীর উজানে ডাম্বুর বাঁধ খুলে দেওয়াকে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতির কারণ হিসাবে বর্ণনা করে বাংলাদেশে যে উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে, তা আমরা দেখেছি। এটা তথ্যগতভাবে সঠিক নয়।”
বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ও ভারতে গোমতী নদীর সংলগ্ন এলাকায় গত কয়েকদিনে চলতি বছরের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে বাঁধের ভাটি এলাকার পানির কারণে বাংলাদেশের বন্যা হয়েছে।
বাংলাদেশ থেকে উজানে ১২০ কিলোমিটার নদীপথে তিনটি পানির পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থাকার কথা বলা হয়েছে বিবৃতিতে। যার মধ্যে অমরপুর স্টেশন থেকে দ্বিপক্ষীয় প্রটোকলের আওতায় বাংলাদেশকে বন্যার হালনাগাদ তথ্য দেওয়া হয়।
“পানি বৃদ্ধি পাওয়ার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার তথ্য ২১ অগাস্ট বিকাল ৩টা পর্যন্ত বাংলাদেশকে দেওয়া হয়েছে। সন্ধ্যা ৬টায় বন্যার কারণে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় যোগাযোগে সমস্যা তৈরি হয়।”
রিজভী বলেন, “কেন জানি, ভারত বাংলাদেশের মানুষ, তাদের নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্য জীবন যাপনের প্রতি উদাসীন। বাংলাদেশের মানুষের বাঁচা-মরাকে তারা কখনই আমলে নেয় না।
“সচেতনভাবেই ডাম্বুর বাঁধের গেইট খুলে দেওয়া হয়েছে বলে বাংলাদেশের মানুষ মনে করে, সে জন্যই এই আকস্মিক বন্যা। বাংলাদেশ প্রশ্নে ভারত কখনই ন্যায় নীতির নির্দেশ গ্রাহ্য করেনি।”
বন্যা উপদ্রুত মানুষের পাশে দাঁড়াতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছে বলেও জানান রিজভী।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর নেতৃত্বে জাতীয় ত্রাণ কমিটির বৈঠক করে নেতারা বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াতে উপদ্রুত এলাকার পথে আছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা মীর সরাফত আলী সপু, আসাদুল করীম শাহিন, মনির হোসেন, আমিনুল ইসলাম, তারিকুল ইসলাম তেনজিংও উপস্থিত ছিলেন।