“ফখরুল ইসলাম, নেতিবাচক বিদ্বেষমূলক রাজনীতির কারণে আজীবন আপনাদের বিরোধী দলে থাকতে হবে।”
Published : 12 Aug 2023, 08:38 PM
বিএনপি আজীবন বিরোধী দলে থাকবে দাবি করে তা ‘খাতায় লিখে রাখতে’ দলটিকে পরামর্শ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
বিএনপির ইচ্ছা না হলে নির্বাচনে আসতে পারে, না চাইলে নাও আসতে পারে জানিয়ে ‘আগুন নিয়ে না খেলতে’ও দলটিকে সতর্ক করেছেন তিনি।
সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে বলেও সাফ জানিয়ে দেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী।
শনিবার বিকালে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সরকার সমর্থক চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের আয়োজনে শোক দিবসের আলোচনায় এ কথা বলেন তিনি।
কাদের বলেন, “মির্জা আব্বাস (বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য) বলেন, ‘সংবিধান আমরা মানি না।’ কেন মানেন না? এটার মধ্যে কি কাঁটা আছে?
“এটা নাকি কাটাছেঁড়া করেছি। কাটাছেঁড়া আমরা করিনি, কাটাছেঁড়া করেছেন সেনাপতিরা। প্রথম করেছেন জিয়াউর রহমান।”
বিএনপির দাবি মেনে নিয়ে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার হবে না, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করবেন না, ভোটের আগে সংসদ ভাঙবে না জানিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতা বলেন, “স্বাধীন নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করবে। পছন্দ হলে নির্বাচনে আসুন না হলে যা ইচ্ছা করুন। তবে আগুন নিয়ে খেললে খবর আছে।
“আগুন নিয়ে খেলতে আসবেন না। আগুন নিয়ে খেলতে আসলে প্রতিহত করা হবে, সমুচিত জবাব দেয়া হবে। ২০১৩/২০১৪ আর ২০২৩ সাল কিন্তু এক নয়।”
বিএনপি মহাসচিবের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আর বিএনপির মির্জা ফখরুলের লাফালাফি! লাফালাফি, এই বুঝি গেল শেখ হাসিনার গদি!
“ফখরুল ইসলাম, নেতিবাচক বিদ্বেষমূলক রাজনীতির কারণে আজীবন আপনাদের বিরোধী দলে থাকতে হবে। আজীবন বিরোধী দলের খাতায় নামটা লিখে রাখুন।”
‘তারা পেয়েছে কেবল বাংলাদেশকে’
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ক্রমাগত কথা বলে যাওয়া পশ্চিমা শক্তিশালী দেশগুলোর অবস্থান নিয়েও কড়া প্রতিক্রিয়া জানান আওয়ামী লীগ নেতা কাদের।
‘বিদেশিরা শুধু বাংলাদেশকে পেয়ে বসেছে’ মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, “এ বছর বিশ্বের ২২টি দেশে নির্বাচন হবে। বাংলাদেশ ছাড়া আমি একটা দেশও খুঁজে পাচ্ছি না যেখানে বড় বড় দেশগুলো একেকবার প্রতিনিধি, কখনও কংগ্রেসম্যান, মন্ত্রী গিয়ে তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মাথা ঘামাচ্ছে, কোথাও কোনো প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে।
“শুধুমাত্র বাংলাদেশ। কী অপরাধ আমাদের গণতন্ত্রের? কী অপরাধ আমাদের উন্নয়নের? গণতন্ত্র আছে বলেই দেশ আজ এত উন্নয়নের মুখ দেখছে। গণতন্ত্র অব্যাহত না থাকলে এত উন্নয়ন সম্ভব হত না।”
ইউক্রেইন যুদ্ধে পশ্চিমাদের ভূমিকা নিয়েও তীব্র সমালোচনা করেন আওয়ামী লীগ নেতা।
তিনি বলেন, “গণতন্ত্রের যারা প্রবক্তা, মানবাধিকারের যারা প্রবক্তা, তাদেরকে যদি বলি, ইউক্রেইনে এক বছরে ৭৫ বিলিয়ন ডলার আপনারা পাঠিয়েছেন। রেজাল্ট কী নিজেরাই অংক করে হিসাব করুন।
“৭৫ বিলিয়ন ডলারে যুদ্ধ বন্ধ হয়েছে না কারও পরাজয় হয়েছে? সোমালিয়ায় প্রতিদিন মানুষ না খেয়ে মারা যাচ্ছে, মিনিটে মিনিটে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে, কই এখানে তো কিছু করতে পারলেন না।”
তিনি বলেন, “জাতিসংঘের কথা ইসরায়েল শোনে না। আজকে একজন সাংবাদিক রিফিউজি ক্যাম্পে গিয়ে ইসরায়েলি সৈন্যরা হত্যা করে। সবাই জানে কে তাকে মেরেছে। অথচ এখানে ওয়াশিংটন নীরব। ওয়াশিংটন জানে, তারপরেও ইসরায়েলকে কিছু বলে না।
“প্রতিদিন ফিলিস্তিনে মানুষ মারা যাচ্ছে, ওয়াশিংটনের শাসন এখানে নেই। তারা পেয়েছে শুধু বাংলাদেশকে। তারা পেয়েছে, পান থেকে চুন খসলে আমাদের ভিসা নীতি দেবে, পান থেকে চুন খসলে ভিসা নীতি দেবে। হুমকি-ধমকি।”
বাংলাদেশকে আফগানিস্তান বানানোর চেষ্টা
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট ও ৩ নভেম্বরের হত্যাযজ্ঞের ‘মাস্টারমাইন্ড’ আখ্যা দিয়ে কাদের বলেন, “বাংলাদেশে হত্যার রাজনীতি রক্তপাত শুরু করেছে জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমানের পুত্র ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলার মাস্টারমাইন্ড।
“বাংলাদেশে এরাই জঙ্গিবাদ সাম্প্রাদায়িক শক্তিকে আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়ে পাকিস্তান বানানোর চেষ্টা করছে। বাংলাদেশকে নতুন করে আফগানিস্তান বানানোর চেষ্টা করছে। ওরা শেখ হাসিনাকে সহ্য করতে পারে না।”
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি জামাল উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, স্বাচিপের সাধারণ সম্পাদক মো. কামরুল হাসান মিলন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফি, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান খান নিখিল, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান।