নির্বাচনকালীন তত্ত্বাধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপির ডাকা চতুর্থ দফা অবরোধে সড়ক, মহাসড়কসহ প্রতিটি জায়গায় মানুষ উপস্থিত হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত প্রথম দফা, ৫ ও ৬ নভেম্বর দ্বিতীয় দফা এবং ৮ ও ৯ নভেম্বর তৃতীয় দফার পর বিএনপি আগামী রোব ও সোমবার চতুর্থ দফা অবরোধের ডাক দিয়েছে। এর আগে গত ২৯ অক্টোবর হরতালও করে দলটি।
চতুর্থ দফা কর্মসূচির দুদিন আগে শুক্রবার সন্ধ্যায় ভার্চুয়াল সংবাদ ব্রিফিং করেন রিজভী, যিনি ২৮ অক্টোবর নয়া পল্টনে বিএনপির সমাবেশের অদূরে কাকরাইল ও বিজয়নগরে সংঘর্ষের পরে আত্মগোপনে আছেন। মাঝে একদিন ভোরে খিলগাঁও এবং একদিন উত্তরা এলাকায় ঝটিকা মিছিল করেছেন তিনি।
রোববার থেকে শুরু হওয়া অবরোধ নিয়ে বিএনপি নেতা বলেন, ‘‘যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, যারা স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে, যারা প্রকৃত গণতন্ত্রের বিশ্বাস করে, যারা অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে বিশ্বাস করে, যারা বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন, প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনে বিশ্বাস করে, তাদের প্রত্যেকে এই অবরোধ কর্মসূচি সাফল্যমণ্ডিত করবে।
‘‘তারা সারা বাংলাদেশে রাস্তা-ঘাট, মহাসড়কসহ প্রত্যেকটি জায়গায় উপস্থিত হবে এবং সরকারের যত জুলুম-নির্যাতন-নিপীড়ন-অত্যাচার প্রতিহত করেই তারা রাজপথে থাকবে। বিএনপির পক্ষ থেকে সারাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষকে সেই আহ্বান আমরা জানাচ্ছি।”
‘একতরফা’ নির্বাচন করে আসন ভাগাভাগি করা ছাড়া আওয়ামী লীগের হাতে কোনো উপায় নেই দাবি করে রিজভী বলেন, “একটি রাজনৈতিক দল জনগণের ওপর নির্ভরশীল হলে তারা অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনে ভয় পাবে কেন?”
তবে সরকারের ‘এহেন’ আশা’ জনগণ পূরণ হতে দেবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ক্ষমতায় থাকার স্বপ্ন ওরা বিভোর। ভেবেছে এভাবে ‘নির্মমতা করে’ তারা চিরস্থায়ীভাবে ক্ষমতায় থাকবে। ভেবেছে ক্ষমতা থেকে তাদেরকে কেউ বিচ্যুত করতে পারবে না, ক্ষমতার মসনদ এতই শক্ত মনে করছে ওরা। … কিন্তু প্রকৃতির নিয়ম হচ্ছে যে, অত্যাচারীরা যে অস্ত্র নিয়ে আঘাত করে, স্বাধীনতাকামী মানুষ, গণতন্ত্রকামী মানুষ সেই অস্ত্র তাদের দিকেই তাক করে।”
বিরোধী দলের ‘শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি’ সম্পর্কে বিভ্রান্ত তৈরি করবার জন্য ‘অপপ্রচার’ চালানোর অভিযোগ এনে বিএনপি নেতা বলেন, “মন্ত্রীরা অনর্গল মিথ্যাচার করে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এক সন্ত্রাসী উপরিকাঠামো, সন্ত্রাসের শৃঙ্খলের মধ্যে সারা বাংলাদেশ নিশ্চুপ হয়ে গেছে। সারাদেশের মানুষ সমস্ত কিছু দেখছে।”
দেখতে দেখতে জনগণের ভেতরে দ্রোহ, ক্রোধ ও ক্ষোভ পূঞ্জিভূত হচ্ছে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, “এটা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব টের পাচ্ছেন না।
‘উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশ এখন আর প্রার্থক্য নেই’
রিজভী বলেন বলেন, ‘‘এটা একটি এক দলীয় দেশ শুধু নয়, নিষ্ঠুর এক দলীয় দেশ, এখানে সেই রকম একদলীয় শাসন চলছে। উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশ এখন আর কোনো প্রার্থক্য নেই… একাকার হয়ে গেছে।”
গত ২৪ ঘণ্টা সারাদেশে বিএনপির ২০৬ জনেরও বেশি নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার ও বিভিন্ন মামলায় ১ হাজার ৫৫৫ জনের বেশি নেতা-কর্মীকে আসামি করার অভিযোগও আনা হয় ভার্চুয়ালি এই সংবাদ সম্মেলনে।
গত ২৮ অক্টোবর নয়া পল্টনের সমাবেশের দিন থেকে সারা দেশে ১৩ হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার, ১২ জনকে হত্যা, প্রায় ৬ হাজার জনকে আহত করার দাবিও করেন রিজভী।
বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশির নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ‘তাণ্ডব’ চালাচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি।
রিজভী বলেন, “কথা বলা মানে হচ্ছে সে অদৃশ্য হয়ে যাবে, লাশ হয়ে পড়বে। কয়েকদিন আগে যুব দলের এক ছেলে তুলে নিয়ে যাওয়ার দুই-তিন পর তার লাশ পাওয়া গেছে। এই হচ্ছে বাংলাদেশের চিত্র।”