“জাতি যদি ঐক্যবদ্ধ শক্তি প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হতো, তাহলে সবাই আমরা ব্যর্থ হতাম; কাজেই সবাইকে ঐক্য ধরে রাখতে হবে,” বলেন তিনি।
Published : 25 Dec 2024, 03:47 PM
প্রশাসন থেকে ‘স্বৈরাচারের দোসরদের’ অপসারণে উদ্যোগ নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
বুধবার এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, “আজকের পত্রিকা খুললেই দেখবেন, একটা মামলায় (হত্যা মামলা) তাদের (আওয়ামী লীগের) দুইজন নেতাকে আসামি করা হয়েছিল, ইনকোয়ারি চলছে।
“ইনকোয়ারি কর্মকর্তা তাদেরকে বাদ দিয়ে অর্থাৎ ফাইনাল রিপোর্ট দেওয়ার জন্য যখন যাচ্ছে, তখন আবার ওই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সেটাকে প্রতিরোধ করেছে। অর্থাৎ ওরা ঘাপটি মেরে আছে।”
জাহিদ হোসেন বলেন, “আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বারবার বলছি যে, আপনারা আপনাদের প্রশাসনের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা বিগত স্বৈরাচারের দোসরদেরকে যদি চিহ্নিত করে সরিয়ে দিতে না পারেন, তাহলে এরকম ঘটনা ঘটতেই থাকবে। আপনারা প্রতিরোধ করতে পারবেন না।”
দৈনিক প্রথম আলোয় বুধবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের দুই হত্যা মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীর সাবেক বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে অব্যাহতি দিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করেছিলেন এক তদন্ত কর্মকর্তা। ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসানকেও অব্যাহতি দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। তবে আদালতে ওঠার আগেই বিষয়টি ধরা পড়ে যায়।
জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের (জেটেব) উদ্যোগে ‘রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা: প্রেক্ষিত টেক্সটাইল সেক্টর’ শীর্ষক এ আলোচনা সভা হয়।
জাহিদ হোসেন বলেন, “অতএব সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনাদের; বাংলায় একটা প্রবাদ আছে- বিড়াল নাকি প্রথম রাত্রেই মারতে হবে। বিচারপতি লতিফুর রহমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হয়েছিলেন; উনিও কিন্তু বিড়াল প্রথম রাত্রে মেরেছিলেন দেখেই জাতীয় নির্বাচন পরবর্তীতে নিরপেক্ষ হয়েছিল।”
‘‘আমরা ইউনূস স্যারের (মুহাম্মদ ইউনুস) প্রতি আস্থাশীল, পৃথিবীর মানুষের আস্থা আছে, সরকারকে সহযোগিতা করছে দেশের মানুষ- একদম নিঃস্বার্থভাবে। কাজেই তাদের (সরকার) সিদ্ধান্ত নিতে হবে একেবারে বলিষ্ঠ, আরো যুগোপযোগী, আরো দ্রুততার সঙ্গে।”
তিনি বলেন, “তা নাহলে কোনো অবস্থাতে ওই সমস্ত স্বৈরাচারের দোসররা প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে আজকে ঘাপটি মেরে আছে- তারা কিন্তু ফণা তোলার জন্য, আপনাকে বিভ্রান্ত করার জন্য চেষ্টা করছে; করবে, করতেই থাকবে।
“কাজেই তাদের বিষ দাঁত যদি ভেঙে দিতে হয়- স্বৈরাচারের দোসরদের চিহ্নিত করুন, তাদেরকে প্রশাসন থেকে এবং আপনাদের আশপাশ থেকে সরিয়ে দেন।”
‘দ্রুত ভোট দিন’
অন্তবর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে বিএনপি নেতা জাহিদ বলেন, ‘‘দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা বোঝার চেষ্টা করুন, দেশের মানুষের ভোটের অধিকার দ্রুততার সঙ্গে ফেরত দেওয়ার চেষ্টা করুন। তাহলে মানুষ আপনাদেরকে সাধুবাদ জানাবে, ইতিহাস তখন আপনাদেরকে ধারণ করবে।
‘‘ আর যদি তা না হয়, লক্ষণ সেনকেও যেমন ইতিহাস ধারণ করে নাই, পতিত স্বৈরাচার পালিয়ে গেছে; যতই হুমকি ধামকি করুক- হিটলারও ফেরত আসে নাই, তার বংশধররাও আসে নাই, লক্ষণের শাসন ব্যবস্থাও ফেরত আসে নাই; আর পলাতক স্বৈরাচারের শাসন ব্যবস্থাও বাংলাদেশে ফেরত আসার সম্ভাবনা নাই।”
‘ঐক্য অটুট রাখতে হবে’
জাহিদ বলেন, ‘‘মনে রাখতে হবে আজকে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের রক্তের শপথ নিয়ে মনে রাখতে হবে- বন্ধুদের ঐক্য ভাঙার চেষ্টা করবেন না। জাতি ৫ অগাস্ট ঐক্যবদ্ধ ছিল বলেই স্বৈরাচার পালিয়েছে।
‘‘জাতি যদি ঐক্যবদ্ধ শক্তি প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হতো, তাহলে সবাই আমরা ব্যর্থ হতাম; কাজেই সবাইকে ঐক্য ধরে রাখতে হবে।”
তিনি বলেন, “ঐক্য ধরে রাখার জন্য যেটি প্রয়োজন- সেটি হলো কমন এনিমি যেটি, সেটাকে চিহ্নিত করুন এবং দ্রুততার সঙ্গে জনগণকে তার অধিকার আদায়ের সুযোগ দিন। জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে দেশ কোন পথে যাবে, দেশ কাদেরকে ধারণ করবে, আগামীদিনের বাংলাদেশ কেমন হবে।”
জেটেবের সভাপতি ফখরুল আলমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, আবদুস সালাম আজাদ।