বাজেটে মূল সমস্যার কোনো স্বীকৃতি ও সে সমস্যা মোকাবেলার দিক নির্দেশনা পাওয়া যায়নি।
Published : 29 Jun 2024, 07:46 PM
অর্থনীতিতে দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়নের প্রসার ঘটিয়ে অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের চিন্তা করা অবাস্তব বলে মনে করেন বিরোধী দলীয় নেতা জিএম কাদের।
তিনি বলেছেন, অর্থনীতিকে সুস্থ করতে হলে সমাজের সর্বস্তরে জবাবদিহির ব্যবস্থা থাকতে হবে। তাহলেই শুধু দেশে সুশাসন আসবে।
শনিবার জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
তার অভিযোগ, “বাজেটে মূল সমস্যার কোনো স্বীকৃতি ও সে সমস্যা মোকাবেলার দিক নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। বরং সমস্যার কারণসমূহকে উৎসাহিত করার প্রয়াস লক্ষ্য করা যায়। কাজেই বিদ্যমান অর্থনৈতিক সমস্যার টেকসই ও স্থায়ী সমাধান খুব শীঘ্র হচ্ছে এমনটা আশা করা যাচ্ছে না।”
প্রস্তাবিত বাজেটকে গতানুগতিক বাজেট হিসেবে চিহ্নিত করে তিনি বলেন, “এবার উন্নয়ন বাজেট কমানো উচিত ছিল।”
জিএম কাদের বলেন, “বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দায়মুক্তি দিয়ে আইন প্রণয়ন করে দেশে অবাধ দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টি, অফশোর ব্যাংকিং চালু করে বিদেশে পাচারকৃত অবৈধ অর্থ বৈধকরণ, নাম মাত্র কর প্রদান করে কালো টাকা সাদা করার মাধ্যমে দুর্নীতি থেকে দায় মুক্তি দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
”দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি ও গোষ্ঠী, ব্যাংক ঋণ খেলাপি, বিদেশে টাকা পাচারকারীদের মাধ্যমে একটি বড় আকারের ধনী ও অতিধনী শ্রেণি সৃষ্টি করা হয়েছে। তাদেরকে অর্থনীতির মূল স্রোতে আনার জন্য বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে।”
তিনি বলেন, কোভিড মহামারী ও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতিতে ক্রমশ কমছে। বিভিন্ন দেশ আগের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রমাবনতি ঠেকানো যাচ্ছে না। অনেক বিশেষজ্ঞের ধারণা কোভিড মহামারী বা ইউক্রেন যুদ্ধ বাংলাদেশে মূল সমস্যা সৃষ্টি করেনি।
”সমস্যা শুরু হয়েছিল আগেই অন্যান্য কারণে। কোভিড মহামারী ও ইউক্রেন যুদ্ধ এগুলোকে উস্কে দিয়েছিল মাত্র। তাদের মতে কোভিড ও ইউক্রেইন শুধু মূলসমস্যাগুলোকে পাশ কাটানোর অজুহাত হিসেবে বর্তমানে ব্যবহার করা হচ্ছে।”
বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, “আসল সমস্যা এক কথায় জবাবদিহিতার ঘাটতি ফলে সু-শাসনের অভাব। ফলশ্রুতিতে দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়ন সমাজের প্রতিটি স্তরে ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হয়েছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও সে সংক্রান্ত নীতিমালা ব্যক্তি স্বার্থ ও গোষ্ঠীর স্বার্থ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। ফলে অর্থনৈতিক নীতি প্রণয়ন বা বাস্তবায়নে দেশ ও জনগণের স্বার্থ প্রায়শ উপেক্ষিত হয়েছে।
”এক কথায় বলা যায় অর্থনীতিতে সুশাসনের অভাব ও সে কারণে দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়নে যে ব্যাপকতা তা থেকে উত্তরণ ব্যতীত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়।”
ব্যাংক খাতে অব্যবস্থাপনার সমালোচনা করে জিএম কাদের বলেন, খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংক খাত নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। তথ্য গোপন করে এ খাতকে নাজুক পরিস্থিতিতে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।
কালো টাকা সাদা করার প্রস্তাবের বিরোধিতা করে তিনি ১৫ শতাংশের পরিবর্তে ৫০-৬০ শতাংশ কর দিয়ে এ সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব করেন।
তিনি বলেন, কর যারা ফাঁকি দেন তারা ভুল করেন না। হিসাব নিকাশ করেই তারা দেন।
বিদ্যুৎখাতের সমালোচনা করে জিএম কাদের বলেন, “অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা দেশের অর্থনীতিতে একটি মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি করেছে।
”উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে ঠিকই, কিন্তু এর অর্ধেকটাই ব্যবহার করা যাচ্ছে না। কিন্ত মজার ব্যাপার হলো সেই অর্ধেক অর্থাৎ প্রায় ১৫,০০০ মেগাওয়াট অব্যবহৃত উৎপাদন সৃষ্টির জন্য বেসরকারি মালিকদের বিদেশি মুদ্রায় বিশাল অংশের ভাড়া বা ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে।”
অফশোর ব্যাংকিং আইনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ”অফশোর ব্যাংকিং আইনের মাধ্যমে বড় ধরনের দায়মুক্তি বা ইনডেমনিটি দেওয়া হয়েছে। এ কথাটা খুব ব্যাপকভাবে প্রচলিত যে দেশের কিছু ব্যবসায়ী বিভিন্নভাবে টাকা উপার্জন করে ও ঋণ খেলাপি হয়ে ধনী ও অতিধনী হয়েছেন তারা সে অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন।”
এ আইনে দায়মুক্তি দেওয়ায় অর্থনৈতিক ও দুর্বৃত্তায়ন সহায়ক বলে অভিযোগ ওঠার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এতে নতুন করে বৈধ বা অবৈধভাবে অর্জিত টাকা বিদেশে পাচার উৎসাহিত হতে পারে।