ভোটের সাড়ে তিন বছর পর নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের রায় পেয়ে চট্টগ্রামের মেয়র হিসেবে শপথ নিলেন বিএনপি নেতা শাহাদাত হোসেন।
Published : 03 Nov 2024, 05:08 PM
নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের রায়ে বিএনপি নেতা শাহাদাত হোসেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ নেওয়ায় আওয়ামী লীগ আমলে ভোটে কারচুপির প্রমাণ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রোববার দুপুরে শপথ গ্রহণের পর শাহাদাতকে নিয়ে শেরে বাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে এমন প্রতিক্রিয়া দেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ শুধু দেশটাকেই ‘ধ্বংস’ করেনি, ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতে প্রতিটি নির্বাচনকে তারা তাদের মত করে সাজিয়েছিল।
“চট্টগ্রামে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জনপ্রিয় নেতা প্রতিযোগিতা করে ‘জিতেছিলেন’। কিন্তু আওয়ামী লীগের ‘ফ্যাসিস্টরা’ বলপ্রয়োগভাবে জনগণের ফলাফল তারা কেড়ে নিয়েছিল।”
২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি হওয়া ওই নির্বাচনে ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮ ভোট পাওয়া নৌকার প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীকে জয়ী ঘোষণা করা হয়। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির শাহাদাত ধানের শীষ নিয়ে পান ৫২ হাজার ৪৮৯ ভোট।
প্রায় এক মাস পর ২৪ ফেব্রুয়ারি শাহাদাত নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। তাতে বলা হয়, রেজাউল করিম নৌকা প্রতীক পাওয়ার পর থেকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা তার সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে দেন। এ থেকে বোঝা যায় নির্বাচনের নামে ওইদিন শুধু ‘আনুষ্ঠানিকতা’ হয়েছে।
“যে কারণে নির্বাচনে ভোটের হিসাব চেয়ে পাওয়া যায়নি। কোনো কেন্দ্র থেকে ইভিএমের প্রিন্ট কপি দেওয়া হয়নি। ভোটের দিন দুপুর পর্যন্ত ৪ থেকে ৬ শতাংশ ভোট পড়ে। কিন্তু ভোটের হিসাবে দেখানো হয় ২২ শতাংশ ভোট পড়েছে।”
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ১ অক্টোবর চট্টগ্রামের নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের বিচারক যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ খাইরুল আমীন বিএনপির প্রার্থী শাহাদাতকে বিজয়ী ঘোষণা করেন।
তারও আগে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দেশের সব সিটি করপোরেশন বাতিল করে দেওয়ায় শাহাদাত চেয়ারে বসতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দেয়। তবে সব প্রশ্নের অবসান ঘটিয়ে শাহাদাত এখন চট্টগ্রামের মেয়র হয়েছেন, যদিও তিনি কোনো কাউন্সিলর পাচ্ছেন না। কারণ, সরকার কাউন্সিলর পদও বাতিল করে দিয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, “আমি ধন্যবাদ জানাই নির্বাচন কমিশন ট্রাইব্যুনালকে তারা পূর্বের নির্বাচনকে বাতিল করে শাহাদাতকে নির্বাচিত ঘোষণা করেছে। সেই সাথে অন্তর্বর্তী সরকারকে ধন্যবাদ জানাই তারা আদালতের রায়কে মেনে নিয়ে তাকে চট্টগ্রামের মেয়র হিসেবে শপথ পড়িয়েছেন।”
‘তারা যেন আর ফিরে আসতে না পারে’
আওয়ামী লীগ যেন আর ফিরে আসতে না পারে, সে জন্য জনগণের দুর্বার প্রতিরোধের আহ্বানও জানান বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, “এবং আগামী দিনের নির্বাচনগুলো যেন অবাধ সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হয় আমরা সেই প্রত্যাশা করছি।”
‘চট্টগ্রাম হবে গ্রিন, ক্লিন, হেলথ সিটি’
এর আগে শাহাদাতকে সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা হাসান আরিফকে মেয়র হিসেবে শপথ পড়ান।
এ সময় বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, মাহবুবে রহমান শামীমও উপস্থিত ছিলেন।
জিয়ার সমাধিতে গিয়ে শাহাদাত হোসেন বলেন, “চট্টগ্রামকে বাঁচালে বাংলাদেশ বাঁচবে। আমাদের যে ইশতেহার, সেই ইশতেহারে চট্টগ্রামকে গ্রিন সিটি, ক্লিন সিটি এবং হেলদি সিটি করার যে চিন্তাভাবনা, তার জন্য আমি কাজ করে যাব।”
তার মামলার রায়ের মাধ্যমে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন শাহাদাত।