“সংবিধানের প্রস্তাবনা নতুন করে লেখার প্রয়োজন আছে কি না সন্দেহ আছে,” বলেন অধ্যাপক নজরুল ইসলাম।
Published : 31 Jan 2025, 07:38 PM
আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর অর্থনৈতিক দর্শনের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় দেশে বৈষম্য বেড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
এই দর্শনে নির্ভরশীল কাঠামো রেখে দেশে বৈষম্য কমবে না বলও মনে করেন তিনি।
শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘সাপ্তাহিক একতা’ আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের ওপর ভিত্তি করে ৭২ এর সংবিধান রচিত হয়েছে। এটা সংস্কার করা যাবে না, ব্যাপারটা তা নয়।
“এই সংবিধানে সমস্যা আছে, এই সংবিধানে ক্রমাগত বৈষম্য বেড়েছে, লুন্ঠন, স্বৈরাচারের ভিত্তি হয়ে উঠেছে এ সংবিধান। ব্যক্তি ও জাতিগত নিরাপত্তা ক্রমাগত উপেক্ষা করা হয়েছে এ সংবিধানে।
“যে কারণে বৈষম্য বেড়েছে, আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর অর্থনৈতিক দর্শনের কারণে বৈষম্য বেড়েছে… এই দর্শনে নির্ভরশীল কাঠামো রেখে দেশে বৈষম্য কমবে না।”
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। বিগত সরকারের ‘কর্তৃত্ববাদী’ নীতির কারণে দেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্য বাড়ার বিষয়টি সামনে এনে দেশের হাল ধরা অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রীয় কাঠামো সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে।
এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের পুরনো সাপ্তাহিক পত্রিকা ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) মুখপত্র ‘একতা’র উদ্যোগে ‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ কোন পথে’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা হয়।
এতে ‘রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচনী সংস্কার’ বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতিসংঘের উন্নয়ন গবেষণার সাবেক প্রধান ও এশীয় প্রবৃদ্ধি গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, ‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ ও আর্থ-সামাজিক সংস্কার’ শীর্ষক আরেকটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরোর চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম এম আকাশ।
প্রবন্ধে অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, “সংবিধানের প্রস্তাবনা নতুন করে লেখার প্রয়োজন আছে কি না সন্দেহ আছে। তবে পরিমার্জন করতে হলে ২০২৪ সালের জুলাইয়ের অভ্যুত্থান ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে প্রকাশিত গণতন্ত্র, সাম্য এবং মানবিক মর্যাদার জনআকাঙ্খার কথা নিশ্চয়ই অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
“গণতন্ত্রের জন্য ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানের ত্যাগ ও আকাঙ্খাকে স্মরণ করাও যথার্থ হবে।”
সংবিধানের প্রস্তাবনায় মুক্তিযুদ্ধ ও প্রজাতন্ত্র শব্দাবলী প্রতিস্থাপনের প্রয়াস অপ্রয়োজনীয় ও অবাঞ্ছনীয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, “রাষ্ট্রীয় মূলনীতিসমূহ প্রতিস্থাপনের সুপারিশটি পরিপক্ব নয়। প্রস্তাবিত পাঁচটি মূলনীতি—সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ, গণতন্ত্র এগুলোর মধ্যে যৌক্তিক এবং ঐতিহাসিক গ্রন্থন অনুপস্থিত। সুতরাং এই নিয়ে আরও আলোচনা প্রয়োজন।
“বৈষম্যবিরোধী গণঅভ্যুত্থানের পটভূমিতে সংবিধান পরিমার্জনের উদ্যোগ গ্রহণকারী কমিশন কেন ২(ক) অনুচ্ছেদ (রাষ্ট্রধর্ম) বাতিল করার সুপারিশ প্রদানে অপারগ হলো তা বোধগম্য নয়।”
আরেক প্রবন্ধে এম এম আকাশ বলেন, “শুধুমাত্র ভালো নীতি প্রণয়ন নয়, তা বাস্তবায়নের জন্য সুশাসন প্রতিষ্ঠা, আর্থিক ও জ্বালানি খাত, আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা এবং বাজার ব্যবস্থাপনায় জরুরি নীতিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার প্রয়োজন।”
“তা অন্তত শুরু করতে না পারলে জনগণের মনে প্রয়োজনীয় বিশ্বাস, আস্থা বা স্বস্তি ফিরিয়ে আনা যাবে না এবং গোলযোগ ও সামাজিক বিরোধ আরও বৃদ্ধি পাবে। যার সুস্পষ্ট লক্ষণ ইতিমধ্যেই দেখা যাচ্ছে।”
সিপিবির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, “৫ আগস্টে যে অভ্যুত্থান হয়ে গেছে, তার মূলে বেহাত গণতন্ত্র রক্ষার একটি জনআকাঙক্ষা ছিল।
“এখন পর্যন্ত আমরা সেই আকাঙ্খা পূরণে দৃশ্যমান কিছু দেখছি না, আমরা ব্যর্থ হয়েছি। এখন পর্যন্ত শ্রেণি চরিত্রের পরিবর্তন হয়নি। যেমনটা আগে ছিল, এখনো তা একই রয়েছে।”
জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জ্ল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন একতা সম্পাদক আফরোজান নাহার রাশেদা।
সেখানে বক্তব্য রাখেন- অর্থনীতিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসুর সাবেক সাধারণ সম্পাদক (জিএস) মুশতাক হোসেন, সাংবাদিক মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জু, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান।