“অন্তর্বর্তী সরকার দলনিরপেক্ষতা হারালে তাদের অধীনে জাতীয় নির্বাচনও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যেতে পারে।”
Published : 19 Dec 2024, 08:01 PM
বিভিন্ন খাতের চলমান সংস্কার কর্মসূচির গতি বাড়ানো গেলে ২০২৫ সালের মধ্যেই দেশে সংসদ নির্বাচন আয়োজন সম্ভব বলে মনে করে গণতন্ত্র মঞ্চ।
বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে মঞ্চের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, “গুরুত্বপূর্ণ ও সমস্যাসঙ্কুল কাজ হল ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা। মার্চ মাসে না নিয়ে এই কাজ কমিশন এখন শুরু করে দিলে সর্বোচ্চ হয়ত ছয় মাসের মধ্যে হালনাগাদ করা সম্ভব।
“আমরা মনে করি, সরকারের দক্ষতা যদি থাকে, সরকারের কাজের ক্ষেত্রে যদি গতি আনা যায়, যদি ডাবল ইঞ্জিনের গতি যুক্ত করা যায়, তাহলে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন, রূপান্তর বা সংস্কার সম্পন্ন করে আগামী বছররের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব।”
গত সোমবার বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে ধারণা দেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেন, “রাজনৈতিক ঐকমত্যের কারণে আমাদেরকে যদি, আবার বলছি ‘যদি’, অল্প কিছু সংস্কার করে ভোটার তালিকা নির্ভুলভাবে তৈরি করার ভিত্তিতে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হয়, তাহলে ২০২৫ সালের শেষের দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠান হয়ত সম্ভব হবে।”
তিনি বলেন, “আর যদি এর সঙ্গে নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রত্যাশিত মাত্রার সংস্কার যোগ করি তাহলে অন্তত আরও ছয় মাস অতিরিক্ত সময় লাগতে পারে।
“মোটা দাগে বলা যায়, ২০২৫ সালের শেষ দিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা যায়।”
অধ্যাপক ইউনূসের এই ভাষণের প্রতিক্রিয়ায় সংবাদ সম্মেলনে সাইফুল হক বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাকে আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখতে চাই, তাকে স্বাগত জানাই।
“অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর মানুষের ব্যাপক প্রত্যাশা। তারা যদি পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে দলনিরপেক্ষতা হারান, তাহলে তাদের অধীনে জাতীয় নির্বাচনও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যেতে পারে।”
রাজধানীর তোপখানা রোডে নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। এতে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন ও গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়ক আবুল হাসান রুবেলও বক্তব্য দেন।
দ্রব্যমূল্যের ঊধর্বগতি রোধ করতে না পারায় উদ্বেগ প্রকাশ করে সংবাদ সম্মেলনে সাইফুল হক বলেন, চার মাস গেলেও এখনো নিত্যপণ্যের বাজার মানুষের ক্রয়ক্ষমতায় আসেনি।
“পুরনো সিন্ডিকেটের সঙ্গে পটপরিবর্তনের পর নতুন কিছু লোকও যুক্ত হয়েছে। তারা বাস্তবে দেশের কোটি কোটি ভোক্তাকে এক ধরনের জিম্মি করে ফেলেছে। আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা দেখতে চাই, সরকার এই ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ নেবে।”
এক যুগ আগে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপ করা হয়। বিলোপের এই বিধানসহ ওই সংশোধনীর অংশবিশেষ বাতিল করে গত মঙ্গলবার রায় দেয় হাই কোর্ট।
ওই রায়ের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাইফুল হক বলেন, এর মধ্য দিয়ে সংবিধানে জাতীয় নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত হল।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আগামী ২৪ ডিসেম্বর সকাল ১১টায় পুরানা পল্টন মোড়ে জোটের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ সমাবেশ করবেন। ‘দেশবিরোধী অপতৎপরতা, অন্তবর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ করার ষড়যন্ত্র এবং দ্রব্যমূল্যের দাম কমানোর দাবিতে’ এই সমাবেশ আয়োজন করার কথা বলছেন জোটের নেতারা।