গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের অভিযোগ, নির্বাচনে ডামি প্রার্থী হল এই সরকারের নির্বাচনী ‘চমক’।
Published : 04 Dec 2023, 04:08 PM
তফসিল বাতিল করে সরকারকে ‘সোজা পথে’ হাঁটার পরামর্শ দিয়েছে সরকারবিরোধী কয়েকটি দল নিয়ে গঠিত মোর্চা গণতন্ত্র মঞ্চ।
মঞ্চের নেতা বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠনের সময় এখনো শেষ হয়ে যায়নি।
সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি বলেন, “এখনো সময় আছে সিধা পথে হাঁটেন, সিরাতুল মুস্তকিম ধরেন। যদি শান্তিপূর্ণভাবে বিদায় নিতে চান, আজকে বলতে চাই, অনতিবিলম্বে এই তামাশার নির্বাচনে, তফসিল বাতিল করুন।
“কীভাবে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ একটা অন্তবর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে পারে, নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে বিরোধী দলের সাথে আলোচনায় বসুন, জনগণের গুরুত্বপূর্ণ স্টেকহোল্ডার যারা আছে, তাদের সাথে আলোচনায় বসুন। নির্বাচনকালীন এই সংকট উত্তরণের পথটা এখনো একেবারে শেষ হয়ে যায় নাই।”
সরকার ‘একতরফা তামাশা’র নির্বাচন করে দেশকে দুর্যোগের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন সাইফুল হক।
তিনি বলেন, “২০১৪ এবং ১৮ সালে মানুষের ভোটাধিকার নিয়ে সরকার যে তামাশা করেছে, যে প্রহসন করেছে, সেই প্রহসন ২৪ সালেও করা হচ্ছে। দুর্যোগের মধ্যে দেশকে ঠেলে দিচ্ছে।
“এই পরিস্থিতিতে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, একটা বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা অনতিবিলম্বে আসবে... সেরকম একটি আশঙ্কা অনেকগুলো গণমাধ্যমে গত কয়েকদিন ধরে এই সংবাদ বেরিয়ে আসছে।“
সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে দেশের সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) পর্যায়ক্রমে বদলি করার যে সিদ্ধান্ত ইসি নিয়েছেন তাতে এই সংস্থা কোনো ধরনের নিরপেক্ষতা দেখাতে পারছেন না বলেও মন্তব্য করেছেন সাইফুল হক।
তিনি বলেন, “এরা ধরা পড়ে গেছে। বলে না যাহাই ৫২ তাহাই ৫৩। গত ১৫ বছরে তিন-চার স্তরে যেভাবে তারা (সরকার) অফিসারদেরকে নিয়োগ দিয়েছে তিন-চার স্তরেরও যদি পরিবর্তন করেন সরকারের অনুগতরা ছাড়া কারো দায়িত্ব পালনে কোনো সুযোগ নাই।“
সমাবেশের আগে গণতন্ত্র মঞ্চ রাজধানীর তোপখানা রোড়, দৈনিক বাংলা মোড়, ফকিরাপুল কালভার্ট রোড, পুরানা পল্টনে সড়কে মিছিল করেছে।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, নির্বাচনে ডামি প্রার্থী হল এই সরকারের নির্বাচনী ‘চমক’।
তিনি বলেন, “এবারে বলা হচ্ছিল নতুন একটা চমক আসবে। কি সেই চমক? সেটা হচ্ছে, সরকারের তামাশার নির্বাচন এবং আওয়ামী লীগ এবং তার নেতা প্রধানমন্ত্রীর আসনে ভোট ছাড়া দখল করে আছেন শেখ হাসিনা … তিনি আমাদের চমক দেখালেন।
“এবার মনোনয়পত্র জমা দেওয়ার আগেই তিনি (শেখ হাসনি) বললেন ডামি প্রার্থী দাও, ডামি দিয়ে উনি নির্বাচন করবেন। কারণ যাদেরকে ধরে-টরে নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বিভিন্ন দলের এবং তাদের খোদ তথাকথিত সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিকেও সবাই উনার কাছে গিয়ে আগে সিট পাওয়ার নিশ্চিয়তা চায়… সবাই চায় ‘আমরা এমপি হব’।”
বিএনপি এবং সমমনাদের ভোট বর্জনের মুখে সরকার প্রতিদ্বন্দ্বী কোথায় পাবে– এ প্রশ্ন রেখে জোনায়েদ সাকি বলেন, “ডামি প্রতিদ্বন্দ্বী দিয়ে উনি (শেখ হাসিনা) প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন করবেন। কিন্তু সবসময় উনি যা চান তাই হবে এমন তো নয়। সেই কারণে আজকে একটু উভয় সংকটে পড়েছেন, কুল রাখি না শ্যাম রাখি, উনার দলের শত শত প্রার্থী আছেন ডামি আর স্বতন্ত্র। এই ডামি-স্বতন্ত্ররা সকলে নৌকা। এখন নৌকা আর মনোনীত নৌকা সাথে ধাক্কা-ধাক্কি করছে…ইতোমধ্যে মারামারি শুরু হয়েছে।“
সাকির ভাষ্য, ১৭ ডিসেম্বর প্রর্থিতা প্রত্যাহারের সময় শেষ হওয়া পর্যন্ত এসব ডামি-স্বতন্ত্র-বিদ্রোহীরা নির্বাচনে থাকতে পারে কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
“উনার একেক কায়দায় বাতিল করছেন, আর শেষ কায়দায় হুকুম দিয়ে বাতিল করাবেন। এসব মিলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখাতে গিয়ে নিজেদের মধ্যে মারামারি আর না হয় প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন একতরফা নির্বাচন– এই হচ্ছে শেখ হাসিনার উপহার। “
সভাপতির বক্তব্যে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, “তথাকথিত ডামি নির্বাচন করছে তা আমরা গণতন্ত্র মঞ্চ করতে দেব না। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, জনগণের অভিপ্রায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে আজকের এই শাসকেরা যেই তামাশার নির্বাচন করতে যাচ্ছেন, এই নাটক বাংলার মাটিতে জনগণ মঞ্চস্থ হতে দেবে না।”
জেএসডির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন পাটোয়ারির সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার, ভাসানী অনুসারী পরিষদের হাবিবুর রহমান রিজু, সাংগঠনিক সমন্বয়ক ইমরান ইমন বক্তব্য দেন।
১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, গণফোরাম-পিপলস পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, এলডিপি, লেবার পার্টি এদিন আলাদা আলাদাভাবে বিজয়নগর ও নয়া পল্টনের সড়কে মিছিল করে।