দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জিততে আওয়ামী লীগ কী ‘কৌশল’ নিচ্ছে, সেটি ‘গোপন সূত্র’ থেকে জেনে যাওয়ার কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগ ‘পুলিশকে দিয়ে’ করিয়েছিল বলে অভিযোগ তার। তিনি ‘জেনেছেন’, এবার আনসার ও গ্রাম পুলিশ বা ভিডিপি দিয়ে ‘নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করবে’ সরকার। সেই সঙ্গে ‘কিনে নেয়া হবে’ নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত সংস্থা ও কর্মকর্তাদের।
দেশের বিদ্যুৎ খাত নিয়ে বৃহস্পতিবার রাজধানীতে এক গোলটেবিল আলোচনায় কথা বলছিলেন ফখরুল। বিএনপিপন্থি প্রকৌশলীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (অ্যাব) এর উদ্যোগে আলোচনার বিষয় ছিল ‘মহাবিপর্যয়ে বিদ্যুৎ খাত: গভীর খাদে অর্থনীতি’।
আদানির সাথে বিদ্যুৎ চুক্তিতে দেশের বিপুল পরিমাণ আর্থিক লোকসান হয়েছে অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, “এটা কেন করছে সরকার? তারা করছে এ কারণে যে, টাকা দিয়ে ভবিষ্যতে আবার নির্বাচন কিনে নেবে। বিভিন্ন সংস্থাগুলো যারা নির্বাচন চালায়, তাদেরকে তারা পরিষ্কার ক্যাশ টাকা দিয়ে দেবে।
“মানতে চায় না নির্বাচন কমিশন। কিন্তু প্রিজাইডিং অফিসার থেকে শুরু করে ওই পর্যন্ত কিন্তু খাম চলে যায়। পুলিশের কাছে খাম যায়, বিজিবির কাছে খাম যায়, এমনকি স্ট্রাইকিং ফোর্স যারা থাকে, তাদের কাছেও খাম যায়। এটা সত্য, ঘটেছে ২০১৮ সালে।”
ফখরুল বলেন, “এখন আবার নতুন কৌশল হয়েছে। আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে খবর-টবর শুনি। উনারা বলছেন যে, ‘আগের মত তো পারা যাচ্ছে না পুলিশ দিয়ে, ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে…’।
“নতুন কৌশল কী? আনসার-ভিডিপি দিয়ে করানো হবে।”
স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও ‘নতুন প্রবণতা’ দেখার কথা জানান বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, “স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো হয়ে গেছে, সেই নির্বাচনে হঠাৎ দেখা গেল গণনা করতে করতে একজন চেয়ারম্যান এগিয়ে আছেন। তারপর দেখা গেল আরেকজন এগিয়ে চলে গেলেন। যে ফলাফল লিখছে, ওইটা বদলে দিচ্ছে।”
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মনিরুল হক সাক্কুকে ‘এই কৌশলে’ হারানোর অভিযোগ করেন ফখরুল। তিনি বলেন, “আমার এলাকায় একজন চেয়ারম্যান ২৫ বছর ধরে আছেন। তাকে এভাবে ১৯ ভোটে হারিয়ে দিল। এই হচ্ছে নতুন নতুন কৌশল।”
নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার অভিযান শুরু হয়ে গেছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, “কোনো ওয়ারেন্ট নাই, গোলমাল নাই…ঘর থেকে বেরুলে আপনি ধরা পড়ছেন। বাসায় বসে কথা বললে ধরা পড়ছেন।
“আবার একটা আইন করার প্রস্তাব দিয়েছে, ‘ডেটা প্রটেকশন ল’। এই আইন হলে ‘আপনি শেষ’।
এই অবস্থা থেকে ‘উত্তরণে’ আন্দোলনের বিকল্প নেই বলেও মনে করেন ফখরুল। তিনি বলেন, “এই সরকারকে বাধ্য করতে হবে পদত্যাগ করার জন্য। এছাড়া এই দেশ বাঁচবে না।”
আদানির সঙ্গে এমন চুক্তি ‘কীভাবে করে?’
ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে করা বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তিকে ‘দেশবিরোধী’ অভিহিত করে অবিলম্বে তা বাতিলের দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব। তার মূল্যায়নে এটি ‘ভয়ংকরভাবে অসম’ ও ‘দুরভিসন্ধিমূলক’ চুক্তি।
তিনি বলেন, “পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রশ্ন উঠেছে যে, কীভাবে তারা (সরকার) এরকম চুক্তি করতে পারে? আদানির সঙ্গে এই চুক্তি দেশবিরোধী, এই চুক্তি জনগণবিরোধী।
“আমি এই ফোরাম থেকে বলছি, এই চুক্তি অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। একই সঙ্গে বিদ্যুৎখাতে যে দায়মুক্তি আইন করা হয়েছে, সেই আইন বাতিল করতে হবে।”
মানুষের প্রতি সরকারের কোনো দয়া-মায়া বা দায়বদ্ধতা ও জবাবহিদিতা নেই বলেও মনে করেন বিএনপি নেতা। বলেন, “তারা চুরি করবে, বিদেশে টাকা পাঠাবে, বিদেশে প্রসাদ তৈরি করবে, ব্যবসা করবে, বিলাসী জীবনযাপন করবে, আর আমাদের সাধারণ মানুষের পকেট কেটে নিয়ে যাবে।”
দেশের বড় বড় ১০ টি ব্যবসায়িক গ্রুপের নাম উল্লেখ করে ফখরুল দাবি করেন, তারা ৫০ হাজার কোটি টাকা লুট করেছে। বলেন, “এরা সবাই এই শাসক গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত।”
‘প্রতারণা’ ছাড়া সরকারের কিছু নেই
সরকার পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশকে লুট করছে বলেও অভিযোগ করেন ফখরুল। তিনি বলেন, “খুব বড় বড় কথা বলে যে, মানুষের অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে, সিঙ্গাপুর বানিয়ে ফেলেছে, মালয়েশিয়া বানিয়ে ফেলেছে। আরে, মালয়েশিয়ার পত্রিকায় যদি এ রকম কয়েকটা খবর বেরুত, তার পরের দিন ওই মন্ত্রিসভার কল্লাটা যেত। এটা বাস্তবতা।
“আসলে প্রতারণা ছাড়া ওদের (সরকার) কোনো কৌশল নাই। আজকে প্রায় বক্তৃতায় বলেন যে, ‘জনগণই হচ্ছে দেশের মালিক’। সেই জনগণের সঙ্গে আপনি গত ১৪ বছর ধরে প্রতারণা করে আসছেন। একটা দিন ভোট দেয়ার অধিকারটাও কেড়ে নিয়েছেন।
“২০০৮ সাল থেকে শুরু করেছ এই প্রতারণা। ২০১৪ সালে ১৫৪ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ঘোষণা করেছ। একটা সরকার কী করে এত অনৈতিক কাজ করতে পারে, একটা সরকার কী করে সংসদে মিথ্যা কথা বলে, ভাবা যায় না।”
অ্যাবের সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম রিজুর সভাপতিত্বে যুগ্ম মহাসচিব কেএম আসাদুজ্জামান চুন্নুর সঞ্চালনায় আলোচনায় সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্যসচিব কাদের গনি চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য আবদুস সোবহান, শাম্মী আখতার, অ্যাবের আশরাফ উদ্দিন বকুল, শাহজাহান আলী, গোলাম মাওলা, মোস্তফা-ই-জামান সেলিম, একেএম জহিরুল ইসলাম জহির, নিয়াজ উদ্দিন ভুঁইয়া, শাহাদাত হোসেন বিপ্লব, সুমায়েল মুহাম্মদ, মাহবুবুল আলম, মো. হানিফও বক্তব্য রাখেন।