“ভারতের সঙ্গে হওয়া এসব চুক্তির কোনোটাই বাংলাদেশকে লাভবান করবে না, বরং বাংলাদেশের নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলবে”, বলেন জোনায়ের সাকি।
Published : 27 Jun 2024, 06:58 PM
ভারতের সঙ্গে সরকার ‘সার্বভৌমত্ব বিরোধী-অসম চুক্তি’ করেছে অভিযোগ এনে আগামী ৫ জুলাই ঢাকায় বিক্ষোভের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এই সমাবেশ হবে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মঞ্চের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে ১০টি সমঝোতা চুক্তি সইয়ের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ভারতের সঙ্গে হওয়া এসব চুক্তির কোনোটাই বাংলাদেশকে লাভবান করবে না, বরং বাংলাদেশের নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলবে। বাংলাদেশের জনগণ কোনোভাবেই নিজের অর্থ খরচ করে পরের জন্য এই ঝুঁকি নিতে পারে না।
“প্রধানমন্ত্রী এ ধরনের ‘দাসখত’ দেওয়া সমঝোতা স্মারক ও চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশকে চীন-ভারতের আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক ‘ব্যাটেল গ্রাউন্ড’ তৈরি করে ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্বের' সাংবিধানিক পররাষ্ট্রনীতি উপেক্ষা করা হয়েছে।”
সংবাদ সম্মেলনে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সিনিয়র যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন পাটোয়ারীও বক্তব্য রাখেন।
মঞ্চের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “ইন্ডিয়ান রাষ্ট্র অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক বিকাশকে রুদ্ধ করতে চায়৷ কারণ, দক্ষিণ এশিয়াকে একটা পিপলস ফেডারেশন ইউনিয়নে পরিণত করার ক্ষেত্রে স্বাধীন ও স্বনির্ভর বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। কিন্তু ইন্ডিয়া তা হতে দিতে চায় না। এ জন্যই তারা সার্ককে পরিকল্পিতভাবে অকার্যকর করে রেখেছে।”
গণতন্ত্র মঞ্চ বলেছে, তারা ট্রান্স-এশিয়ান কানেকটিভিটিকে কার্যকর করার পক্ষে। কিন্তু কেবল ‘ভারতীয় স্বার্থ রক্ষার এক পাক্ষিক’ উদ্যোগে শঙ্কা প্রকাশ করেছে।
ভারতের সঙ্গে সমঝোতার বিরোধিতা করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “দেশের মর্যাদাকে ভূলুণ্ঠিত করে সরকার যেসব ‘অসম’ চুক্তি করছে সেটার তো একটা বিনিময় আছে। এই চুক্তির বিনিময়ে তারা গদিতে থাকতে চান।
“ভারতকে নানাভাবে ট্রানজিট-করিডোর কিংবা সমুদ্র বিজ্ঞান ও সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে যৌথ গবেষণা, ইত্যাদি চুক্তির নামে প্রকারান্তরে মংলা বন্দর ‘ভারতের নিয়ন্ত্রণ’ প্রতিষ্ঠা করতে চান। ‘উদারভাবে’ ভারতকে সহযোগিতার মাধ্যমে বর্তমান ‘ডামি সরকার’ ভারতের সহায়তায় নিজেদের গদি রক্ষা করতে চায়।”
অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনের বিষয়ে বলা হয়, “পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বহু বছর কথা বার্তা হচ্ছে। একমাত্র গঙ্গা চুক্তি ছাড়া আরও যে ৫৩টি যৌথ নদী আছে, সেগুলোর কোনোটা নিয়ে আমরা চুক্তি করতে পারিনি।
“তিস্তার চুক্তি ২০১১ সালে প্রস্তুত হলেও তা স্বাক্ষর হয়নি। এই চুক্তি বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের দাবি। এর সঙ্গে আমাদের উত্তরাঞ্চলের দুই কোটি মানুষের ভাগ্য জড়িত। এ চুক্তির বিষয়ে ভারতের দিক থেকেও অঙ্গীকার ছিল। কিন্তু এবার ঘোষণায় এ চুক্তি নিয়ে কোনো কিছু উল্লেখ নেই।”
তিস্তা মহাপরিকল্পনায় ভারতের যুক্ত হওয়ার প্রস্তাবেরও বিরোধী গণতন্ত্র মঞ্চ। তারা বলেছে, “যাদের হাতে তিস্তা ‘ধ্বংস’ হয়েছে, তাদেরকেই তিস্তা ব্যবস্থাপনার অংশীদার করার আলাপ করে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী।”