জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কৌশল কী?

সরকার কি ইভিএম ইস্যুতে বিতর্ক এড়াতে চাইছে? দেশি-বিদেশি চাপ বিবেচনায় নিয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনটি যাতে বিগত দুটি নির্বাচনের মতো প্রশ্নবিদ্ধ না হয় সেই চেষ্টায় আছে? সত্যিই যদি অবাধ-সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়, তাহলে কি আবারও সরকার গঠন করতে পারবে আওয়ামী লীগ?

আমীন আল রশীদআমীন আল রশীদ
Published : 31 May 2023, 01:15 PM
Updated : 31 May 2023, 01:15 PM

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) হচ্ছে না— ইসির এমন সিদ্ধান্তে রাজনীতি ও ভোটের মাঠে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপির যতটা খুশি হওয়ার কথা ছিল, সম্ভবত ততটা খুশি হয়নি তারা। কারণ তাদের মূল কনসার্ন ইভিএম নয়, বরং নির্বাচনকালীন সরকার। আরেকটু খোলাসা করে বললে, নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান কে থাকবেন—সেটিই তাদের মূল বিবেচ্য।

বাস্তবতা হলো, যদি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিগত দুটি নির্বাচনের মতোই অন্তর্বর্তী তথা ছোট পরিসরের মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়, আইনত সেই মন্ত্রিসভায় বিএনপির কোনো প্রতিনিধি থাকারও সুযোগ নেই। কারণ বিএনপি সংসদে নেই। তাদের এমপিরা সংসদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। অর্থাৎ বিএনপি এখন সংসদের কোনো বিরোধী দল নয়। মাঠের বিরোধী দল বটে।

সঙ্গত কারণেই যে প্রশ্নটি সামনে আসছে তা হলো, এ বছরের শেষ অথবা আগামী বছরের শুরুতে যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা, সেটি কোন সরকারের অধীনে হবে এবং ওই সরকারের প্রধান কে থাকবেন? বিএনপি এরই মধ্যে এটি স্পষ্ট করেছে যে, নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে তারা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মানবে না। তাহলে কে হবেন ওই সরকারের প্রধান এবং বিদ্যমান সংবিধান ও আইনের আলোকে শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য কারোর পক্ষে নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হওয়ার আদৌ কি সুযোগ আছে? যদি না থাকে তাহলে বিএনপি কি ওই নির্বাচন বয়কট করবে? নির্বাচন বয়কট করে তাদের কী লাভ? সংসদ থেকে তাদের এমপিরা যে পদত্যাগ করলেন, তাতে কি বিএনপির কোনো লাভ হয়েছে?

বিএনপি হয়তো এই ভেবে আত্মতুষ্টিতে ভুগছে যে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যেখানে তিনশো আসনেই ইভিএম চেয়েছিল, সেখানে ইভিএম ছাড়াই ভোট হবে বলে ইসির সিদ্ধান্ত তাদের এক ধরনের বিজয়। সেই ধারাবাহিকতায় তারা হয়তো ভাবছে যে নির্বাচনকালীন সরকারও তারা যেভাবে চাচ্ছে, সেরকম হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত যে রাজনৈতিক বাস্তবতা, তাতে নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে বিএনপির দাবি পূরণ হয়ে যাবে— সেই সম্ভাবনা ক্ষীণ।

প্রসঙ্গত, গত তেসরা এপ্রিল নির্বাচন কমিশনের তরফে জানানো হয়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো আসনেই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট হবে না। বরং ৩০০ আসনেই ভোট হবে ব্যালট পেপার ও স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের মাধ্যমে। এর কারণ হিসেবে ইসি বলছে, নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী রোড ম্যাপে সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোটগ্রহণের পরিকল্পনা নিয়েছিল। এই লক্ষ্য ৮ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সরকার সেই প্রকল্পটি অনুমোদন করেনি। অন্যদিকে বিদ্যমান ইভিএম সংস্কারে প্রায় এক হাজার ২০০ কোটি টাকা প্রয়োজন। সেই টাকা দিতেও অর্থ মন্ত্রণালয় অপারগতা প্রকাশ করেছে। এছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ইভিএম নিয়ে ঐকমত্যের অভাব ছিল। এই সব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে কমিশন হয়তো এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের বক্তব্যে দুটি বিষয় স্পষ্ট; ১. সরকার ইভিএমের পেছনে পয়সা খরচ করতে চায় না বা দেশের বিদ্যমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় ইসির চাহিদামতো টাকা খরচের সক্ষমতা সরকারের নেই। ২. ইভিএম নিয়ে যেহেতু রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনৈক্য রয়েছে, ফলে নির্বাচন কমিশন নতুন করে সেই অনৈক্য বাড়ানোর সুযোগ দিতে চায় না।

তবে যে প্রশ্নটি অনেকেই করছেন তা হলো, ইভিএমের নতুন প্রকল্পের জন্য এ ‍মুহূর্তে আট হাজার কোটি টাকা খরচ করার সক্ষমতা সরকারের না থাকলেও পুরোনো ইভিএমগুলো সংস্কারের জন্য এক হাজার কোটি টাকা খরচ করতে পারছে না কেন বা এই প্রকল্পটি কেন অনুমোদিত হলো না? তার মানে সরকার কি ইভিএম ইস্যুতে বিতর্ক এড়াতে চাইছে? দেশি-বিদেশি চাপ বিবেচনায় নিয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনটি যাতে বিগত দুটি নির্বাচনের মতো প্রশ্নবিদ্ধ না হয় সে চেষ্টায় আছে? যদি সত্যিই অবাধ-সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়, তাহলে আওয়ামী লীগ কি আবারও সরকার গঠন করতে পারবে? যদি এখানে কোনো সংশয় থাকে, তাহলে সরকারের ভোটের কৌশল কী হবে?

সরকার-বিরোধীদের শঙ্কা ছিল, ইভিএমে কারচুপির মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ আবারও সরকার গঠন করতে চায়। কিন্তু এখন যেহেতু ইসি বলছে যে, তিনশো আসনেই স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে ভোট হবে, ফলে এটি বিরোধীদের জন্য একটা ক্যামোফ্ল্যাজ তৈরি করেছে। তারা এখন ভাবছে, সরকারের নির্বাচনী কৌশল তাহলে কী হবে? তারা কি আপাতদৃষ্টিতে ভালো নির্বাচনের মোড়কে মাঠ প্রশাসনকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রেখে এবং কাজে লাগিয়ে ভোটের বৈতরণী পার হবে, নাকি সত্যি সত্যিই একটি অবাধ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে?

যদি নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের পরাজয়ের সমূহ শঙ্কা থাকে, তাহলে তারা সেই পথে কেন হাঁটবে? আন্তর্জাতিক চাপে? বিরোধীদের দাবি এবং আন্তর্জাতিক চাপের কাছে নত হয়ে আওয়ামী লীগ এমন কোনো নির্বাচনের পথে কেন হাঁটবে—যে নির্বাচনে তাদের পরাজয়ের শঙ্কা রয়েছে?

তার চেয়ে বড় কথা, শেখ হাসিনা যে কোনো বিদেশি চাপের কাছে মাথা নত করেন না, সেটির প্রমাণ বিভিন্ন সময়ে তিনি দিয়েছেন। গত ১৩ মে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপকারী কোনো দেশের কাছ থেকে বাংলাদেশ কিছু কিনবে না। তিনি বলেন, ‘স্যাংশন দেয়ার একটি প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। যাদের দিয়ে সন্ত্রাস দমন করি, তাদের উপর দেওয়া হচ্ছে স্যাংশন! আমরা একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি বলে দিয়েছি, যে দেশ স্যাংশন দেবে তাদের কাছ থেকে আমি কিছুই কিনব না।’ বোঝা যাচ্ছে তিনি এই কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রকে ইঙ্গিত করে—যে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র‌্যাবের সাতজন প্রাক্তন ও বর্তমান কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। প্রধানমন্ত্রী এই কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে ফেরার পরে। যে যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে তিনি জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়েই বেশ কিছু কড়া কথা বলেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আগে।

তার মানে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের যে টানাপোড়েন চলছে, সেখানে কোনো সুবাতাস নেই। অতএব আগামী জাতীয় নির্বাচন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার বাংলাদেশি সুহৃদরা যা বলবে, আওয়ামী লীগ যে সে পথে হাঁটবে না—সেটি শেখ হাসিনার কথায় স্পষ্ট। তার ফলে হয়তো যুক্তরাষ্ট্র আরও কিছু স্যাংশন দিতে পারে—সেই ভবিষ্যৎ মাথায় রেখেই শেখ হাসিনা বলে দিয়েছেন, কেউ স্যাংশন দিলে তাদের কাছ থেকে বংলাদেশ কিছু কিনবে না।

জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর শেষে ১৫ মে গণভবনে তিনি যে সংবাদ সম্মেলন করেন, সেখানেও স্যাংশন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন বিদেশের ওপর নির্ভরশীল নয়। নিজেদের পণ্য নিজেরাই উৎপাদনে সক্ষম। বিশ্ব পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করলে বাংলাদেশ অনেক ভালো আছে। দুশ্চিন্তার কিছু নেই। কিন্তু কথায় কথায় স্যাংশনের ভয় দেখাবে, আর আমরা ভয় পাব কেন? আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে।’

অন্য কোনো দেশ থেকে কিছু না কেনার অর্থ হলো বাণিজ্য। পৃথিবীর সকল রাজনীতির মূলে যে বাণিজ্যিক স্বার্থ—শেখ হাসিনা সেটি ভালো করেই জানেন। আর কার সঙ্গে কীভাবে খেলতে হয়, সেটি এই মুহূর্তে তার চেয়ে ভালো কেউ জানেন বলে মনে হয় না।

অনেকের মনে প্রশ্ন উঠতে পারে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি প্রভাবশালী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তিনি এত সাহসী কথা কীভাবে বলছেন বা বলতে পারছেন? সহজ উত্তর হলো, বিশ্বের পররাষ্ট্রনীতি এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতির সমীকরণ বদলে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র বা রাশিয়ার মোড়লগিরির দিন শেষ। এখন চীন ও ভারতের মতো বড় দেশই নয়, ভূরাজনীতিতে বাংলাদেশও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কেননা তার রয়েছে বঙ্গোপসাগর। তার আছে ১৮ কোটি মানুষ। তার নিকটতম প্রতিবেশী শক্তিশালী ভারত। তার উন্নয়ন সহযোগী জাপান ও চীন। অতএব ভূরাজনীতির খেলায় বাংলাদেশ ছোট রাষ্ট্র বলে কেউ এসে একটা ধমক দিয়ে যাবে আর বাংলাদেশ সেটি মাথা নিচু করে মেনে নেবে—সেই দিন গত হয়েছে। সুতরাং আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভোটের কৌশল কী হবে—তার কিছুটা ইঙ্গিত হয়তো পাওয়া যাচ্ছে।

প্রশ্ন হলো, বিএনপি ও তার শরিক দলগুলো যে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে অনঢ়, সেই দাবি আওয়ামী লীগ কি মানবে? এই দাবি মানতে গেলে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। কেননা ত্রয়োদশ সংশোধনের মাধ্যমে আনীত এই বিধানটি পঞ্চদশ সংশোধনীর সময়ে বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু বিএনপি ও তার শরিকদের দাবি মেনে নিয়ে সরকার বা ক্ষমতাসীন দল যে এই বিধান পুনর্বহালের জন্য সংবিধান সংশোধন করবে—আপাতত তার কোনো লক্ষণ নেই। বরং বিএনপি হয়তো ভাবছে যে, ১৯৯৬ সালে তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ যেরকম কঠোর ও লাগাতার আন্দোলনের মাধ্যমে তাদেরকে সংবিধান সংশোধনে বাধ্য করেছিল, সেরকম পরিস্থিতি তৈরি করে এবার তারাও বর্তমান সরকারকে বাধ্য করবে। কিন্তু সেরকম রাজনৈতিক সক্ষমতা ও শক্তি বিএনপি ও তার শরিক দলগুলোর আছে কি না—সেটি বিরাট প্রশ্ন।

তার চেয়ে বড় কথা, ১৯৯৬ এবং ২০২৩ সালের বাংলোদেশে ঢের তফাৎ। ১৯৯৬ সালে দেশে বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল ছিল না। সোশ্যাল মিডিয়া ছিল না। মানুষের হাতে হাতে মোবাইল ফোন এবং তাতে ইন্টারনেটের সংযোগ ছিল না। ছিল না বলে নাগরিকের ওপরে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণও এত ছিল না। ফলে তখন যেকোনো আন্দোলন সফল করা যত সহজ ছিল, এখন ততটাই কঠিন। এখন প্রতিটি নাগরিকের প্রতিটি পদক্ষেপ প্রতি মুহূর্তে নিয়ন্ত্রিত। সে কোথায় যায়, কী করে; কোন ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে কত টাকা আছে, টাকার উৎস ঘোষিত কি অঘোষিত; সে কার সঙ্গে কী কথা বলে, কী খায় এমনকি সে অসুস্থতার জন্য কোন ওষুধটি খাচ্ছে—রাষ্ট্র চাইলে এক মুহূর্তে তার যাবতীয় তথ্য জানতে পারে। ফলে রাষ্ট্র যখন নাগরিকের গতিবিধি জানে, তখন তার পক্ষে ভোটের কৌশল নেয়া এবং প্রতি মুহূর্তে সেই কৌশল পরিবর্তন করাও সহজ।

এরই মধ্যে কোনো কোনো দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা জানিয়েছে যে, তারা বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে চায়। নির্বাচন পর্যবেক্ষণের পরিবেশ যাচাই করতে আগামী জুলাই মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) একটি প্রতিনিধি দলও ঢাকায় আসছে; যাদেরকে জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন।

অনেকের ধারণা, আগামী নির্বাচনটি বিগত দুটি নির্বাচনের মতো একতরফা হবে না। আবার বিএনপি তথা বিরোধী জোটও নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় করতে পারবে না। কিন্তু তৃণমূলের চাপ এবং ভবিষ্যৎ রাজনীতির কথা চিন্তা করে বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে যাবে। সেক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে হয়তো আসন ভাগাভাগির বিষয়ে সরকারি দলের একটা ‘সমঝোতা’ হতে পারে। তাতে আওয়ামী লীগ আবার সরকার গঠন করলেও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদ হবে না। হয়তো একটা শক্তিশালী বিরোধী দল থাকবে। অনেকেরই ধারণা, আওয়ামী লীগ হয়তো এই কৌশল নিয়েই এগোচ্ছে।

তবে রাজনীতিতে শেষ কথা বলে যেহেতু কিছু নেই, অতএব সেখানে সব সময় দুই দুগুণে চার নাও হতে পারে। সেখানে চার মেলানোর জন্য অনেক সময় পাঁচ থেকে এক মাইনাস করতে হয়। কখনো একের সঙ্গে তিন যোগ করতে হয়। কখনো দশকে আড়াই ভাগ করেও চার বানাতে হয়। সুতরাং আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কোন গণিত প্রয়োগ করবে—সে বিষয়ে চট করে উপসংহারে পৌঁছানোর সুযোগ নেই।

তবে এই নির্বাচনটি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য বিগত দুটি নির্বাচনের চেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং হবে। কেননা এবার সরকাররে ওপর যে বিদেশি, বিশেষ করে মার্কিন চাপ আছে, সেটি আগে ছিল না। সাম্প্রতিক সময়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ খবর হলো, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এক বিবৃতিতে ঘোষণা দিয়েছেন যে, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বাংলাদেশিদের ভিসা দেবে না যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্টের কয়েকটি ধারা অনুযায়ী নতুন যে ভিসা নীতি ঘোষণা করা হয়েছে, তাতে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত ব্যক্তিদের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা, সরকার সমর্থক এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। ৩ মে যুক্তরাষ্ট্র নতুন এই ভিসা নীতির বিষয়ে বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

কথা হচ্ছে, আমেরিকার বিকল্প নিশ্চয়ই আছে। আমেরিকার সঙ্গে সুসম্পর্ক নেই এমন অনেক দেশও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। সুতরাং তারা কাকে ভিসা দেবে বা দেবে না; নতুন করে আর কারো ওপর স্যাংশন আরোপ করবে কি করবে না; স্যাংশন দিলে কী হবে না হবে—সেগুলো অন্য তর্ক। মূল প্রশ্ন হলো, আমরা আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থাটিকে কেন এমন পর্যায়ে নিয়ে গেলাম, যাতে করে বিদেশিরা আমাদের নিন্দামন্দ করা বা ভয় দেখানোর সাহস পাচ্ছে?