Published : 28 Apr 2025, 02:33 PM
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের কারণে পুরোপুরি বদলে যাওয়া এক নির্বাচনী পরিবেশে সোমবার ভোট দিতে যাচ্ছে কানডার জনগণ।
বছরের শুরুতে যে কোনো নির্বাচনে ভূমিধস জয়ের ব্যাপারে প্রায় নিশ্চিতই ছিল কনজারভেটিভরা; কিন্তু ট্রাম্পের শুল্ক আর কানাডাকে ’৫১তম রাজ্য’ বানানোর খায়েশ উত্তর আমেরিকার দেশটির রাজনীতিকে উল্টেপাল্টে দিয়েছে, মার্ক কার্নির লিবারেল পার্টিতে সঞ্চার করেছে নতুন প্রাণ।
সর্বশেষ জনমত জরিপগুলোতে লিবারেলদের সামান্য এগিয়ে থাকতে দেখা গেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
তবে গত কয়েক সপ্তাহের জনমত জরিপ বিবেচনায় নিলে দুই পার্টির মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনাও খারিজ করা যাচ্ছে না। কনজারভেটিভদেরে নেতা পিয়ের পয়লিয়েভ্রে নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
শনিবার রাতে ভ্যাঙ্কুভারে লাপু লাপু উৎসবের ভিড়ের মধ্যে গাড়িচাপায় ১১ জনের মৃত্যুর খবর আসার পর দেশটিতে ৩৬ দিনের নির্বাচনী প্রচারণা শোকের আবহে শেষ হয়েছে।
মর্মান্তিক ওই ঘটনার পর ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী কার্নি হ্যামিল্টনে এক প্রচারণা বাতিল করে রোববার সকালে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েছেন। পয়লিয়েভ্রে টরন্টোর মিসিসাগায় নির্বাচনী সমাবেশে গিয়ে সেখানকার ফিলিপিনো সম্প্রদায়ের সঙ্গে কথা বলেছেন।
রোববার প্রচারের শেষদিনে কার্নি প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভদের ঘাঁটি বলে পরিচিত তিন প্রদেশ সাসকাচুয়ান, অ্যালবার্টা ও ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় একাধিক আয়োজনে অংশ নিয়েছেন।
কানাডার এবারের নির্বাচনে ট্রাম্পই কেন্দ্রীয় চরিত্র দখল করে নিয়েছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরের প্রতিবেশী দেশটির পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন এবং দেশটিকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘৫১তম অঙ্গরাজ্য’ বানানোর ধারাবাহিক হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন, যা কানাডীয়দের জাতীয়তাবাদে ঘাঁ বসিয়েছে এবং তাদেরকে ক্ষুব্ধ করে তুলেছে।
এর প্রতিক্রিয়ায় হকি খেলার আগে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীতের সময় দুয়োধ্বনিও শোনা গেছে, যাতে বোঝা যাচ্ছে কয়েক দশক ধরে স্থিতিশীল যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা সম্পর্ক হঠাৎ করে কতটা বদলে গেছে।
ট্রাম্প হাজির হওয়ার আগে কানাডার রাজনৈতিক মহলে অর্থনৈতিক দুরাবস্থা, আবাসনে ব্যয় বৃদ্ধি, অপরাধ ও ক্রয়ক্ষমতা নিয়ে আলোচনা ছিল। আর এখন বেশিরভাগ ভোটারই নির্বাচনকে দেখছেন দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউজে ঢোকা রিপাবলিকানকে কীভাবে মোকাবেলা করা হবে সে বিষয়ক গণভোট হিসেবে।
এ জায়গাতেই ৬০ বছর বয়সী কার্নি এগিয়ে গেছেন, তিনি নিজেকে এখনকার সংকটকালীন মুহূর্ত মোকাবেলার সম্ভাব্য সবচেয়ে সেরা প্রার্থী হিসেবে উপস্থাপন করছেন।
তার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার ঝুলি সমৃদ্ধ না হলেও তিনি মহামন্দার সময় কানাডার সেন্ট্রাল ব্যাংক এবং ব্রেক্সিটের সময় ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের দায়িত্ব সামলেছেন।
লিবারেল পার্টির এ প্রার্থী বারবারই ট্রাম্পের দিক থেকে আসা হুমকি মোকাবেলায় জোর দিচ্ছেন।
“তিনি (ট্রাম্প) চাইছেন আমাদের দুমড়েমুচড়ে ফেলতে, যেন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের মালিক হতে পারে,” বলেছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কয়েক দশকের পুরনো সম্পর্ক ‘শেষ হয়ে গেছে বলা’ কার্নি রোববার সাসকাটুনে এক নির্বাচনী সমাবেশে বলেছেন, কানাডার উচিত যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো অন্য ‘নির্ভরযোগ্য বাণিজ্য অংশীদারদের’ সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করা।
কনজারভেটিভ পার্টির প্রার্থী পয়লিয়েভ্রে তার প্রচার শেষ করেছেন অন্টারিওতে, যেখানে তার দল পিছিয়ে আছে বলে একাধিক জনমত জরিপে ইঙ্গিত মিলেছে।
কানাডার পার্লামেন্টের ৩৪৩টি আসনের মধ্যে ১২২টি আসনই জনবহুল অন্টারিওর। এখানে ভোটের ফল সামগ্রিক ফলে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখে।
সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গড়তে হলে কোনো দরকে পার্লামেন্টের এই ৩৪৩ আসনের মধ্যে অন্তত ১৭২টিতে জিততে হবে।
এই মুহূর্তে হাউজ অব কমন্সে লিবারেলদের আসন ১৫২টি, দল হিসেবে সবচেয়ে বেশি হলেও সরকারে থাকতে তাদের অন্যদের সহায়তা নিতে হচ্ছে।
দলের জনপ্রিয়তা তলানিতে নামার পর এ বছরের শুরুতে দায়িত্ব ছেড়ে দেন ২০১৫ সাল থেকে কানাডা শাসন করা জাস্টিন ট্রুডো।
তার এক দশকের শাসনকালকে ‘অবক্ষয়ের শাসন’ বলে অভিহিত করছেন পয়লিয়েভ্রে।
“পরিবর্তনের জন্য ভোট দিতে হবে আমাদের, তাহলে খাবার ও ঘর আপনাদের সাধ্যের মধ্যে থাকবে,” টরন্টোর অদূরে পিটারবারাতে এক সমাবেশে সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বলেন এ কনজারটিভ নেতা।
লিবারেল ও কনজারভেটিভদের পাশাপাশি খানিকটা বাম-ঘরানার নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি) ও ক্যেবেকবাসীদের স্বাধীনতার জন্য লড়া ব্লক ক্যেবেকোয়াও নির্বাচনে লড়ছে। তবে তারা মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসতে পারবে না বলেই মনে হচ্ছে। এর মধ্যে ব্লক ক্যেবেকোয়া কেবল ফ্রেঞ্চ ভাষাভাষী প্রদেশ ক্যেবেকেই প্রার্থী দিয়েছে।
কানাডার টাইম জোন ছয়টি। সোমবার নিউফাউন্ডল্যান্ড অ্যান্ড ল্যাব্রাডর প্রদেশে স্থানীয় সময় সাড়ে ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হবে, শেষ হবে ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার সময় সন্ধ্যা ৭টায় (বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার সকাল ৯টায়)।
রেকর্ড সংখ্যক কানাডীয় এরই মধ্যে আগাম ভোটও দিয়েছেন, এই সংখ্যা ৭০ লাখের বেশি বলে জানাচ্ছে কানাডার নির্বাচনী কর্তৃপক্ষ।