Published : 06 Sep 2020, 08:53 PM
করোনাভাইরাস মহামারীতে বিপন্ন মানুষের কাছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও অক্ষমতা প্রকট হয়ে ধরা পড়েছে। মানুষের বাঁচা-মরা নিয়ে রিজেন্ট, জেকেজির প্রতারণা, জালিয়াতিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সম্পৃক্ততা মানুষকে হতবাক করে দেয়। স্বাস্থ্যসেবার অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা ও দুর্নীতি নিয়ে মিডিয়াগুলি সরব। তাদের পরিবেশিত তথ্যে হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে জনমনে আস্থাহীনতা এবং ব্যাপক ঘৃণা তৈরি হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতি আস্থা ও গ্রহণযোগ্যতা যখন তলানিতে, গত ৪ অগাস্ট মন্ত্রণালয় থেকে দেশের যে কোনো সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অভিযান পরিচালনা করা থেকে বিরত থাকতে নির্দেশনা জারি করা হয়। জরুরি অভিযান পরিচালনার প্রয়োজন অনুভূত হলে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে চিকিৎসা শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে অভিযান পরিচালনা করতে হবে। এর সপক্ষে নির্দেশনায় যতটুকু বলা হয়- একটি হাসপাতালে একাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান পরিচালনা করায় তাদের স্বাভাবিক চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এসব কারণে স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে এক ধরনের চাপা অসন্তোষ বিরাজ করছে।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ টিআইবি নির্বাহী প্রধান ইফতেখারুজ্জামান দ্রুত প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে বলেন, রুই-কাতলাদের আড়াল করতে এই নির্দেশনা। তিনি মনে করেন, অভিযানের মাধ্যমে অনিয়ন্ত্রিত দুর্নীতির চিত্র প্রকাশের সুযোগ প্রতিহত করা হলো।
গবেষক শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আব্দুল মান্নান মনে করেন যার কাজ তাকে করতে দেয়া সমীচীন। স্বাস্থ্য ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মর্যাদার তুলনামূলক অবস্থানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রালয়ের অবস্থানকে তিনি উচ্চ পর্যায়ে বলে মনে করেন। সেই যুক্তিতে তিনি এটাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজ বলে রায় দিয়েছেন। পৃথিবীর কোনো দেশের নাম আমার জানা নেই যেখানে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী হাসপাতালের মান তদারকি করে থাকে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় গ্রুপ থেকে গ্রুপ সরব- চোর ও চুরিকে প্রশ্রয় দেওয়া এ নির্দেশনার উদ্দেশ্য। ব্যঙ্গ-বিদ্রুপে ধুয়ে ফেলা হচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে। উত্তেজিত জনতা স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও আদেশ দাতাদের বিরুদ্ধে আগ্নেয় লাভা নিক্ষেপ করছে। বছরের পর বছর ধরে সরকারের লক্ষ্যহীন কার্যক্রম ও পর্যাপ্ত বিনিয়োগের অভাবে বিগত কয়েক বছরে অসংখ্য বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার তৈরি হয়েছে। বেসরকারি হাসপাতাল কি জনগণের সেবায় সরকারি স্বাস্থ্যসেবার ঘাটতি পূরণে জন্ম হয়েছে না ব্যবসার উদ্দেশ্যে? হাসপাতাল নির্মাণ খরচ, স্বাস্থ্যসেবা কর্মীর বেতন, অবসর ভাতা, যন্ত্রপাতি ক্রয়, চিকিৎসা সামগ্রী ইত্যাদি মিলিয়ে সরকারি হাসপাতালে একটি সেবা পেতে জনগণ কত দাম দিচ্ছে তা কি অমরা কল্পনা করতে পারি? অদক্ষতা ও দুর্নীতিতে বেড়ে যাওয়া সেই মূল্য তো জনগণকে তার কষ্টার্জিত আয় থেকেই দিতে হচ্ছে। নিজের পকেট থেকে সরাসরি যাচ্ছে না বলে সাধারণ মানুষ তা বুঝতে পারছে না। বিগত বছরগুলিতে মানুষ সরকারি হাসপাতালের বিশৃংখলা, সেবার নিম্নমান ও লম্বা কিউ দেখে মুখ ঘুরিয়ে প্রাইভেট হাসপাতালমুখি হয়েছে। সেখানে গিয়ে উচ্চ ফিস দেখে ক্ষুব্ধ হচ্ছে মানুষ। স্বাস্থ্য ব্যয় নিজের পকেট থেকে মেটাতে গিয়ে (Catastrophic Health Expenditure) প্রতি বছর ৫২ লাখ মানুষ দরিদ্র হয়ে পড়ছে। এর জন্য মানুষ চিকিৎসকদেরকে দোষারোপ করছে, এমনকি অভিশাপও দিচ্ছে। এইসব নাটকীয় অভিযান মানুষের ক্ষুব্ধ মনে প্রশান্তি আনছে। জনগণ হাততালি দিচ্ছে। নিত্যদিনের জ্বলে উঠা ক্রোধের আগুন থেকে এইসব অভিযান শক্তি পাচ্ছে।
করোনাপূর্বকাল থেকে এদেশের চিকিৎসকরা কসাই গালি শুনে আসছে। করোনাকালে কিছু দায়িত্বশীল ব্যক্তি তাদেরকে ফ্রন্টলাইন যোদ্ধা বলে প্রশংসায় সিক্ত করল। হাসপাতালে ডাক্তাররা প্রাণপণে সেবা দিয়ে গেল, শত চিকিৎসক জীবন দিল – তাতে পরিস্থিতি বদলালো না। এখনও তারা গণধিকৃত থেকে গেছে। র্যাবের অভিযান চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে নয়। তবে চিকিৎসকদের কেন্দ্র করেই প্রতিষ্ঠানগুলি আবর্তিত। তাই জনগণের কঠোর প্রতিক্রিয়ার মনোজগত অনুধাবনযোগ্য। অভিযানে চিকিৎসকদের সম্মানহানি ও হয়রানি সাধারণ দৃশ্য। চিকিৎসকরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই মনে করেছিলাম, তাদের মধ্যে ভিন্ন প্রতিক্রিয়া থাকবে। তাদের একাংশ মনে করে- র্যাবের অভিযান না হলে সাহেদ-সাবরিনা ধরা পড়ত না। যে মনস্তত্ব ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষের মগজ দখল করে আছে আক্রান্ত চিকিৎসকরা সেই সংক্রমণ থেকে নিজেদেরও বাঁচাতে পারেনি। অভিযান বজায় রাখতে জনগণের ক্রোধের সাথে এই ধারণাও সহায়ক ভূমিকা নিচ্ছে।
অভিযানের বড় নৈতিক শক্তির জোগান দিচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নিজে। এর জন্য বছরের পর বছর ধরে বিরাজমান অব্যবস্থাপনা দায়ী। স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানে লাইসেন্স প্রদান, মান উন্নয়ন ও জনবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে তারা কোনো কার্যকর তদারকি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেনি। বারডেম, হার্ট ফাউন্ডেশনের মতো বড় বড় হাসপাতালগুলোও লাইসেন্স নবায়ন ছাড়া চলছে। তাদের এই অক্ষমতা অমার্জনীয়।
মানুষের দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে জালিয়াতি, প্রতারণার মতো অমানবিকতা একটা পশ্চাদপদ সমাজের ছবি। দুর্নীতি ও বিচারহীনতা তার নিত্যদিনের সঙ্গী। মহামারীতে বিপন্ন মানুষের সাথে সাহেদ-সাবরিনার ভয়ঙ্কর প্রতারণার গল্পে ক্রুদ্ধ জনগণ ক্রসফায়ারের আওয়াজ তুলছে। কান পাতলে তারা প্রান্তিক অসহায় মানুষের কান্না শুনতে পেতেন। কী নারকীয় প্রতারণায়, নৃশংসতায় সর্বস্বান্ত, ধর্ষিত হচ্ছে তারা প্রতিদিন। দরিদ্র, অজ্ঞ, দুস্থ রোগীরা প্রতিনিয়ত নিম্নমানের ক্নিনিকে, দালালদের দৌরাত্ম্যে প্রতারিত ও নিঃস্ব হচ্ছে। টাকার অংকে সাহেদ-সাবরিনার প্রতারণা একটা ছিঁচকে চুরির পর্যায়ভুক্ত। স্বাস্থ্যখাতে বছরের পর বছর টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করে, ব্যাংকের হাজার কোটি লোপাট করে নিরাপদে বিদেশ চলে গেল – এ সমস্ত অভিযান তার টিকিটি ছুঁতে পারেনি।
আমি নির্মোহভাবে দৃশ্যপট আঁকতে চাচ্ছি। সাহেদ-সাবরিনার ঘৃণিত কাজকে কোনোভাবেই লঘু করে দেখার সুযোগ নাই। চিকিৎসক সমাজের শুধু তার পেশাগত সুরক্ষার পক্ষে ক্রমাগত কথা বলা জনগণকে ভুল ম্যাসেজ দিচ্ছে। তাকে অপচিকিৎসা, জনভোগান্তি রোধে সোচ্চার হয়ে জনবান্ধব স্বাস্থ্যসেবার দিকনির্দেশনা ও দাবি তুলতে হবে। আমার শব্দচয়নের ভুল অর্থ হতে পারে। তারপরেও ঝুঁকি নিয়ে সচেতন মানুষ, বিশেষজ্ঞ, নীতি নির্ধারক ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে তথাকথিত অভিযানের যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন রাখছি।
করোনাকালে অভিযানের বিষয়টি শীর্ষে এসেছে। করোনাপূর্বকাল থেকে এই শহরে ফি বছর অভিযান চলে আসছে। কথিত ফাইভ স্টার হাসপাতালে, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভীতিকর পোশাকে অস্ত্র হাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপারেশন চলে। যুদ্ধাহত সৈনিককে তার কাঁধের অস্ত্র জমা রেখে সামরিক হাসপাতালে প্রবেশ করতে হয়। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম হাসপাতালেও মানের ঘাটতি থাকে। মান উন্নয়ন একটা চলমান প্রক্রিয়া। একটা সাইন্স। অভিযানে প্রতিবছর একই চিত্র- মেয়াদোত্তীর্ণ রিএজেন্ট। মিডিয়ায় ফলাও প্রচার। কয়েক লক্ষ টাকা ফাইন। প্রতিষ্ঠানটির ফেস ভ্যালু নষ্ট হচ্ছে। রুগ্ন হাসপাতালটির পক্ষে আরও কঠিন হয়ে পড়ছে তাকে বাঁচিয়ে রাখা। সরকারি হাসপাতালে কয়েক গুণ মেয়াদোত্তীর্ণ চিকিৎসা সামগ্রী, মানহীন নোংরা পরিবেশ থাকলেও সেখানে অভিযান হতে দেখা যায়নি।
ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে পারে না। জরিমানা, নিগ্রহ ও গ্রেপ্তার আতঙ্কের মধ্যে কাজ করে একটি সুস্থ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যায় না। অভিযানের খবর আগে জানার পরও হাসপাতালগুলো এত বছরেও কেন মেয়াদোত্তীর্ণ রিএজেন্ট সরাতে পারছে না? বিষয়টি কি কেবলই দুর্নীতি? আমাদের উচিত হবে সামগ্রিক বিষয়কে মাথায় রেখে সুষ্ঠু সমাধানের লক্ষ্যে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া। ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরির মান নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে কড়া প্রতিষ্ঠান আমেরিকান কলেজ অব প্যাথলজি বিদেশি ল্যাবে শর্ত সাপেক্ষে মেয়াদোত্তীর্ণ কিট ব্যবহারের সুযোগ রেখেছে। একটি গরিব দেশ, তার চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে উচ্চমূল্যে আমদানি নির্ভর জীবন রক্ষাকারী স্বল্প মেয়াদের চিকিৎসা সামগ্রী ফেলে দেওয়ার মত বিলাসিতা করবে না স্থানীয় বিশেষজ্ঞদের ব্যবহারের বৈজ্ঞানিক নীতিমালা তৈরির সুযোগ দেবে সেটাই প্রশ্ন। আমরা বিজ্ঞানমনস্ক হবো না দম্ভধারীদের অজ্ঞতার শিকার হবো! অভিযান পরিচালনাকারীদের একটি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে ত্রুটি-বিচ্যুতি খুঁজে বের করার মতো কারিগরি জ্ঞান থাকে না। স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে এসে রোগীরা ইচ্ছা-অনিচ্ছায় প্রতারিত হয়, ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। বিভিন্ন সুরক্ষা ধাপ ও সূচক স্থাপন করে তা নিশ্চিত করতে হয়। অথচ ত্রুটি-বিচ্যুতি সংশোধনের চেয়ে মিডিয়ায় প্রচারটাই মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়। প্রতিষ্ঠানটির ফেইস ভ্যালু নষ্ট করাটাই যেন লক্ষ্য থাকে অভিযানের। প্রতিষ্ঠান ও তার কর্মচারীরা একটা দীর্ঘ ট্রমার মধ্যে প্রবেশ করে। আর্থিকভাবে রুগ্ন প্রতিষ্ঠানগুলি আরো রুগ্ন হয়ে পড়ে। দেশী হাসপাতালের ওপর জনগণের অনাস্থা তৈরি হয়। আমরা জানি না এ সমস্ত অভিযান দেশী প্রতিষ্ঠানকে পঙ্গু করে বিদেশি হাসপাতালের ওপর পরনির্ভরতা জিইয়ে রাখার কোনো চক্রান্তের অংশ হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে কিনা। দেশের ভিতর থেকে রোগী ধরে নিয়ে যাওয়ার, রোগীর নমুনা নিয়ে যাওয়ার অসংখ্য এজেন্সির অনিয়মের বিরুদ্ধে তো কোন অভিযান হতে দেখা যায় না!
এই করোনাকালে আমরা দেখেছি উন্নত স্বয়ংসম্পূর্ণ হাসপাতালের কতটা প্রয়োজন। ধনার্ঢ্য ব্যক্তি যারা চিকিৎসার জন্য সর্বদাই বিদেশ দৌড়াতেন তারা দেশের হাসপাতালে মৃত্যুর সময় অক্সিজেন পাননি। রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা দিয়ে আমাদের যোগ্য চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। নিয়ম-নীতি ও মান নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে জনবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে, ত্রাস সৃষ্টি করে নয়।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে তেমন মতামত পাওয়া যায়নি। একজন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং একজন ডায়াগনস্টিক কর্ণধার তাদের ভারসাম্যমূলক বক্তব্যে অভিযানের আগে হাসপাতালগুলো নিয়মিত তদারকি করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।
থানায়, সাব-রেজিস্টার অফিসে ভয়াবহ দুর্নীতি ও জনভোগান্তি চলে। সেখানে অভিযান চালাবে কে? ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেছেন- আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ক্ষমতার অপব্যবহার সম্পর্কে আস্থাহীনতার সংকট রয়েছেই। প্রতিদিনের পত্রিকার পাতায় আছে ক্রসফায়ার, ভয়-ভীতি তৈরির লোমহর্ষক কাহিনী।
হাসপাতালের মান উন্নয়ন, তদারকি নিরঙ্কুশভাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দায়িত্ব। হাজার হাজার সেবাকর্মীর নিবেদিত কাজের মধ্যে দিয়ে মন্ত্রণালয়ের সুনাম ও সাফল্য অর্জিত হবে। সরকারি বা বেসরকারি যে প্রতিষ্ঠানেই হোক, হাজার কর্মীকে নিয়ম-নীতির কঠোর অনুশীলনে রেখে দুস্থ মানবতার সেবায় উদ্বুদ্ধ করাটাই নেতৃত্ব। রোগীর সুরক্ষা নিশ্চিতে ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের যেমন আইনের আওতায় আনবেন, তেমনিভাবে তাদের অভিবাবকত্বের দায়িত্বও নিতে হবে। কর্মীদের কাজের জায়গা নিরাপদ নয়, মাঠ পর্যায়ে চিকিৎসকগণ প্রতিনিয়ত শারীরিকভাবে নিগৃহীত হচ্ছেন, দুর্বৃত্তের হাতে তাদের মৃত্যুও ঘটেছে। মন্ত্রণালয় কি তাদের পাশে অবস্থান নিয়েছে? এ রকম মেরুদণ্ডহীন অধিদপ্তরের প্রতিষ্ঠানে নানা বাহিনীর দুর্বৃত্তরা হামলা চালাবে, ট্যাক্স নিয়ে যাবে – অবাক হওয়ার কিছু নাই।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে উপলব্ধি করতে হবে, তার কাজ অপচিকিৎসা রোধ করা, সমস্ত সেবাকর্মীর সে অভিভাবক। নিজের কাজের দায়িত্ব নিজেকে নিতে হবে। সেই উপলব্ধি থেকে যদি নির্দেশনা এসে থাকে তাকে স্বাগত জানাই। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে যোগ্য ব্যক্তিদের আনতে হবে, জনবলকে পুনর্বিন্যাস করতে হবে, লোকবল বাড়াতে হবে। বাজেটে ন্যূনতম বরাদ্দ পেয়েও কেন তা বাস্তবায়ন করতে পারে না তা খুঁজে বের করতে হবে। তদারকি জনবলকে বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা জনবল থেকে পৃথক করতে হবে। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালকে ISO অ্যাক্রেডিটেশন নেয়া বাধ্যতামূলক করতে হবে। উদ্ভাবনী ভাবনায় স্বাস্থ্যসেবায় পাবলিক-প্রাইভেট সেক্টরকে পরিপূরক হিসাবে গড়ে তুলতে হবে। প্রধান রাজনৈতিক নেতৃত্বকে এসব বিষয় বুঝতে হবে। স্বাস্থ্যখাতের প্রতি তাদের কমিটমেন্ট এ পরিবর্তনের সূচনা করতে পারে।
৯ অগাস্ট স্বাস্থ্য সচিব বলেন- রাজধানীসহ সারাদেশের হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে চলমান অভিযান এক মিনিটের জন্যও বন্ধ হবে না। জানতে চাই স্বাস্থ্য সচিব চেইন অব কমান্ডের কোথায় অবস্থান করেন?
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট হয়েছে। 'স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের এমন চিঠি কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা হবে না'- তা জানতে চেয়ে গত ২৫ অগাস্ট মহামান্য হাইকোর্ট রুল দিয়েছেন। চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
যারা ক্ষমতার কলকাঠি নেড়ে রাষ্ট্রযন্ত্রকে লুটপাটের ক্ষেত্র বানিয়ে রেখেছেন, সরকারি-বেসরকারি চিকিৎসা খাতকে স্কেপ গোট বানিয়ে জনগণের দৃষ্টি অন্যত্র সরিয়ে দেওয়াটা তাদেরই পুরোনো কৌশল। এই ভাঁওতাবাজি জনগণ কতদিনে ধরতে পারবে?
পরিবর্তন একটা সর্বাত্মক, দীর্ঘ লড়াই। অ্যাকশন ড্রামায় আসক্ত জনগণকে ক্রসফায়ার বা আরো বড় অভিযানের নাটকে ভুলিয়ে রাখা যাবে। তবে সত্যিকারের পরিবর্তন অর্জন সম্ভব হবে না। পরিবর্তন আনতে নিরলস অনুশীলনে ঘাম ঝরাতে হবে।