এই অনুশীলনের যথেষ্ট প্রভাব ছিল, যেখানে ‘দিনে কেবল দুবার, তিন বা চারটি করে ল্যাপ’ চাঁদে নভোচারীদের পেশী ও হাড় সুস্থ রাখার মতো যথেষ্ট।
Published : 03 May 2024, 05:44 PM
‘ওয়াল অফ ডেথ’ বা সার্কাসের ‘মৃত্যুকূপে’র দেওয়াল ঘিরে ছুটে চলার অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতে চাঁদে বসতি স্থাপন করতে চাওয়া মানুষদের সুস্থ রাখতে পারে বলে উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়।
নতুন এ গবেষণায় চাঁদের মাধ্যাকর্ষণ অনুসরণের জন্য মানুষকে বাঞ্জি কর্ডের সঙ্গে বেঁধে দিয়ে তাদেরকে বিনোদন পার্ক থেকে ধার করা এক ‘মৃত্যু প্রাচীরে’র চারপাশে দৌড়ানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ মিলান’-এর বিজ্ঞানীরা।
এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা যেন প্রাচীরের নিচের দিকে পিছলে না পড়েন, তা ঠেকাতে তাদের বেশ দ্রুত দৌড়াতে হয়েছে, যা সাধারণত পৃথিবীতে একেবারে অসম্ভব। আর বাঞ্জি কর্ডের ফলে তৈরি কম মাধ্যাকর্ষণের অনুভূতিতে তারা দেয়াল আঁকড়ে থাকার মধ্যেই একাধিক ল্যাপ সম্পন্ন করতে পেরেছেন বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম স্কাই নিউজ।
এই অনুশীলনের যথেষ্ট প্রভাব ছিল, যেখানে ‘দিনে কেবল দুই, তিন বা চারটি করে ল্যাপ’ চাঁদে নভোচারীদের পেশী ও হাড় সুস্থ রাখার মতো যথেষ্ট, বলেছেন এ গবেষণার গবেষক ও অধ্যাপক আলবার্তো মিনেত্তি।
“আমরা এতে খুবই অবাক হয়েছিলাম।”
চাঁদে ব্যায়াম করার বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরেই শঙ্কায় রয়েছেন গবেষকরা। সেখানে মাধ্যাকর্ষণ কমে যাওয়ার মানে দাঁড়ায়, চাঁদে নভোচারীর পেশী পৃথিবীর তুলনায় ৮৩ শতাংশ ওজন বহন করছে।
চাঁদে এ ধরনের ওজন বহন করার কষ্টের পাশাপাশি নভোচারীদের ফিটনেস লেভেল কমে যাওয়ার ঝুঁকি আছে, বিশেষ করে পেশীর ক্ষতি ও অস্টিওপরোসিসের মতো বিভিন্ন লক্ষণে দেহের হাড় ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি নিয়ে চাঁদে অবস্থান করার ক্ষেত্রে।
আর এ লক্ষণ কখনও কখনও খালি চোখেই দেখা যায়, যখন নভোচারীরা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে অবস্থান শেষে পৃথিবীতে ফিরে আসেন। এমন অবস্থায় দাঁড়ানো বা হাঁটা তাদের জন্য কষ্টকর হয়ে ওঠে। ফলে তাদের অন্য কারো সহায়তার প্রয়োজন পড়ে।
এ গবেষণায় চাঁদে ফিট থাকার ‘দ্রুত ও সাশ্রয়ী উপায়’ খুঁজে দেখেছেন গবেষক মিনেত্তি, ফ্রান্সেসকো লুচিয়ানো, ভ্যালেন্টিনা নাতালুচ্চি ও গ্যাস্পার পাভেই। তারা এতে দেখেছেন, ‘ওয়াল অফ ডেথ’ বা মৃত্যুকূপ এর একটি বাস্তবসম্মত সমাধান হতে পারে।
পৃথিবীর ক্ষেত্রে এর গঠন কিছুটা অস্বাভাবিক হলেও চাঁদের জন্য পরিকল্পিত কিছু কিছু আবাসন দেখতে বৃত্তাকার, বলেছেন অধ্যাপক মিনেত্তি। পাশাপাশি, ব্যায়াম করার ক্ষেত্রে ‘ওয়াল অফ ডেথ' সঠিক ব্যাসের কাছাকাছি।
এর মানে, এতে কয়েকটি অতিরিক্ত উপকরণ যোগ করা লাগতে পারে, যার মাধ্যমে নভোচারীরা শুধু তাদের বাড়ির দেয়ালের চারপাশে দৌড়ানোর সুবিধা পাবেন।
“তাত্ত্বিকভাবে, এতে কোনও অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বা জায়গা লাগবে না। আর এটি নভোচারীদের বিভিন্ন কাজে খুব বেশি হস্তক্ষেপও করবে না,” বলেছেন মিনেত্তি।
চাঁদে স্থায়ী বসতি নির্মাণের লক্ষ্যে আর্টেমিস নামের একটি প্রকল্প নিয়ে কাজ চলছে, যেটির নেতৃত্বে রয়েছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা।
এ গবেষণাটি বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘রয়্যাল সোসাইটি ওপেন সায়েন্স’-এ প্রকাশ পেয়েছে।