স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, চিকিৎসা ব্যবস্থা ও স্বাস্থ্যসেবাকর্মীদের ওপর জনগণের আস্থা গড়ে তোলা ও বজায় রাখার প্রশ্নে ডাক্তারদের কার্যকর যোগাযোগ দক্ষতা ও সংবাদমাধ্যমকে মোকাবেলার দক্ষতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
Published : 09 Jan 2025, 05:30 PM
বর্তমানে আমরা এমন একটা যুগে বাস করছি যখন প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয়, সঠিক-বেঠিক ও ভুয়া মিলিয়ে অতিরিক্ত তথ্যভারে গোটা দুনিয়া ডুবন্ত প্রায়। নানান কিসিমের যোগাযোগমাধ্যমে ভর করে তথ্য আজ ছড়িয়ে পড়ছে আলোর বেগে। এসব তথ্যের ভিত্তিতে মানুষ স্বাস্থ্য সম্পর্কিত যে কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। সিদ্ধান্ত নিতে প্রলুব্ধ হচ্ছে। অন্যদিকে রোগ, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, বৈজ্ঞানিক গবেষণা, উদ্ভাবন, জনগণের আচরণ, বিশ্বাস ও মূল্যবোধের রূপান্তর ও বিকাশ ঘটছে। স্বাস্থ্য ও এ সম্পর্কিত বিষয়সমূহ রাষ্ট্র ও জনগণের মাঝে সম্পর্কের প্রশ্নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গা করে নিচ্ছে। সার্বিকভাবে রাষ্ট্র ও ব্যক্তিজীবনে অস্তিত্ব, কর্তৃত্ব ও দায়িত্বের প্রতি মনোভাব, দৃষ্টিভঙ্গি, আচরণেও নতুন নতুন মাত্রা যোগ হচ্ছে।
ঠিক এমনই এক সময়ে একজন ডাক্তারকে কেবল ক্লিনিক্যালি দক্ষ হলেই চলে না। বরং তাদের চিকিৎসা পেশা, আরোগ্যায়ন শিল্প, বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমে রাষ্ট্র ও জনগণের মাঝে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করতে হয়। আর সেক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হলো সংবাদমাধ্যম ও সংবাদকর্মীগণ। সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ততার গুরুত্ব এখন আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় বেশি। ডাক্তার ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সংবাদমাধ্যমে কথা বলতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। দিন যতই গড়াচ্ছে তাদের সংবাদমাধ্যমে হাজির হাওয়ার পরিমাণ ও পরিসর বাড়ছে। তারা যে কেবলই চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যবিদ্যার জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার বিনিময় করছেন তা নয়। বরং স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সম্পর্কিত ভুয়া ও অপতথ্যের বিরুদ্ধে লড়াই করার এবং স্বাস্থ্যসম্পর্কিত বিষয়ে জনগণের জ্ঞান ও বোঝাপড়া গড়ে তোলার জন্যও ভূমিকা রাখছেন। অঢেল তথ্যের এই প্রাচুর্য, চিকিৎসা পদ্ধতি, চিকিৎসা প্রযুক্তি, ওষুধ শিল্প, জৈব প্রযুক্তি, জনস্বাস্থ্য ও রাজনীতির মিশেলে নব্য এই প্রতিবেশে ডাক্তার ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের যোগাযোগ দক্ষতা ও সংবাদমাধ্যমে ইতিবাচক ও সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ততার গুরুত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে।
একটু তলিয়ে দেখলে স্পষ্ট হয় যে, স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্য বিচ্ছুরণ প্রক্রিয়ার ব্যাপক রূপান্তর ঘটছে। আগে রোগীর জন্যস্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্যের উৎস কেবল ডাক্তারই ছিলেন। কিন্তু বর্তমানে তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, অনলাইন সংবাদ প্ল্যাটফর্ম ও স্বাস্থ্য বিষয়ক ব্লগসহ হাজারও উৎস থেকে তথ্য পান। তথ্যের এই গণতন্ত্রায়নের ফলে জনগণ যেমন স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার প্রশ্নে অধিকতর ক্ষমতায়িত হয়েছেন। অন্যদিকে স্বাস্থ্য সম্পর্কে অনেক ভুয়া তথ্য, অপতথ্য ও ভিত্তিহীন তথ্য, যৌন আবেদনময় ও চাঞ্চল্যকর তথ্যও ছড়িয়ে পড়ছে। এরকম প্রেক্ষাপটে ডাক্তার ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আরও বেশি এগিয়ে আসতে হবে। সঠিক ও প্রমাণভিত্তিক তথ্য হাজির করতে হবে সংবাদমাধ্যমে। কেননা স্বাস্থ্যের প্রশ্নে তাদের জ্ঞান ও দক্ষতার বিশ্বাসযোগ্যতা যে কোনো পেশার লোকজনের চেয়ে অধিকতর বেশি।
এছাড়া একজন রোগী চিকিৎসা প্রক্রিয়ায় তার অভিজ্ঞতা, ক্ষোভ, ভুল চিকিৎসার অভিযোগ নিয়ে সরাসরি গিয়ে সংবাদমাধ্যমে কথা কথা বলতে পারেন। সেক্ষেত্রে সংবাদকর্মী মতামতের জন্য ডাক্তারের সঙ্গে যোগযোগ করতে পারেন। সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের চিকিৎসা করতে গিয়ে একজন ডাক্তার জনগণের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে আসতে পারেন। বিশেষ করে রাজনীতি, দুর্নীতি, যৌন হয়রানি কিংবা অন্য কোনো বিষয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা ও হাসপাতালে ভর্তির ক্ষেত্রে ডাক্তার, তাদের বক্তব্য ও বার্তা জনগণকে আকৃষ্ট করে ব্যাপক মাত্রায়। এক্ষেত্রে ডাক্তারকে মোকাবেলা করতে হতে পারে সংবাদমাধ্যম ও সংবাদকর্মীদের। এছাড়া বিখ্যাত কোনো লেখক, গবেষক, খেলোয়াড়, শিল্পী, অভিনেতা-অভিনেত্রী কিংবা অন্যকোনো পেশাজীবীর চিকিৎসার প্রশ্নেও সংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে হতে পারে। এসব রোগীর চিকিৎসার ক্ষেত্রে তাদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা করার প্রশ্নে ডাক্তারকে খুবই কৌশলী হতে হয়। অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয় সংবাদকর্মীদের সঙ্গে। আবার অনেক সময় কোনো রোগী সংবাদ কিংবা তথ্যচিত্রের বিষয়বস্তু হলেও ডাক্তারকে নিশ্চিত করতে হয় যাতে তার চিকিৎসা সম্পর্কিত ব্যক্তিগত তথ্য সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ না হয়ে পড়ে।
কাজেই ডাক্তার ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সংবাদমাধ্যমকর্মীদের মোকাবেলা ও যোগাযোগ দক্ষতায় ঘাটতি থাকলে জনস্বাস্থ্য, জনমত, জন-আস্থায় মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। বিস্তার ঘটতে পারে ভুল তথ্যের। এতে করে জনগণের মাঝে মারাত্মক ভয়-ভীতি-ক্ষোভ-আশঙ্কা ছড়িয়ে পড়তে পারে। বৈজ্ঞানিকভাবে সঠিক ও প্রমাণভিত্তিক চিকিৎসা পদ্ধতির প্রতি মানুষের নেতিবাচক ধারণা জন্মাতে পারে। বাড়তে পারে এসব চিকিৎসা নিতে আগ্রহ। চূড়ান্তরূপে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি জনগণের সন্দেহ, অনাস্থা ও ভরসাহীনতার জন্ম নিতে পারে। আর এর পেছনে অন্যতম কারণ হলো চিকিৎসা শিক্ষা ব্যবস্থায় ডাক্তারদের যোগাযোগ দক্ষতা, সাংবাদমাধ্যম ও সংবাদকর্মীদের পেশাগত জায়গা থেকে মোকাবেলা করা বিষয়ে প্রশিক্ষণ না থাকা।
সাংগঠনিক পরিচালন, পেশাগত দর্শন, কাজের প্রক্রিয়া ও পদ্ধতির প্রশ্নে মিডিয়া ও মেডিসিনের লজিকে ভিন্নতা বিস্তর। কাজেই সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগের প্রশ্নে ডাক্তার ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মিডিয়া লজিক বুঝতে হবে ভালোভাবে। সংবাদমাধ্যমের পরিচালন ব্যবস্থা ও সংবাদকর্মীদের কাজের আঙ্গিকটি বুঝলে আখেরে লাভ হবে স্বাস্থ্যসেবাকর্মীদেরই। এক্ষেত্রে প্রথমেই বুঝে নেওয়া যাক মিডিয়া লজিকগুলো। সংবাদকর্মীদের সুনির্দিষ্ট বাঁধাধরা সময়ে মধ্যে তথ্যপ্রাপ্তি ও প্রকাশের সংস্কৃতি, সংবাদ মূল্য ও সংবাদ নির্বাচনের মানদণ্ড, সম্পাদকীয় প্রক্রিয়া ও মান নিয়ন্ত্রণ, তথ্য সংগ্রহ পদ্ধতিসমূহ, সংবাদ গল্প নির্মাণ প্রক্রিয়ার আঙ্গিক, টেকনিক্যাল ও পাবলিক যোগাযোগ, সংবাদের বিভিন্ন মাধ্যমের ভিন্নতা, একটি সংবাদ কাহিনীর জনস্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ও পেশাগত সীমানা ইত্যাদি।
বিষয়টি খুলে বলা যাক। কোনো বিষয়ে প্রতিবেদন করার প্রশ্নে সংবাদকর্মীদের হাতে খুবই অল্প সময় থাকে। তারা সুনির্দিষ্ট সময় ও চাপে কাজ করে। তাই তারা কোনো বক্তব্য ও মতামত খুবই তাৎক্ষণিকভাবে পেতে চান। তাড়াহুড়ো করেন। তাদের স্বাস্থ্য বিষয়ক সংবাদটি সঠিক ও তাৎক্ষণিক দিতে হয়। যা ডাক্তারের ক্লিনিক্যাল বাস্তবতা ও কাজের সংস্কৃতির ঠিক উল্টো। তারা ধীরেসুস্থে, সময় নিয়ে কাজ করেন এবং সিদ্ধান্ত দেন। অন্যদিকে, কোনো একটি সংবাদ হবে কিনা বা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হবে কিনা তা নির্ধারণের প্রশ্নে ডাক্তার ও সংবাদকর্মীদের মূল্যবোধ ও মানদণ্ড ভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন একজন সংবাদকর্মীর কাছে অগ্রাধিকারের বিষয় হলো জনস্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ও প্রাসঙ্গিকতা, নতুনত্ব, মানবিক আবেদন এবং বিতর্ক কিংবা সংঘাত। কাজেই তারা এসব মানদণ্ডের নিরিখেই ক্লিনিক্যাল বিষয়গুলো অতিসরলীকরণভাবে হাজির করতে চান।
ডাক্তারদের পক্ষে তা সম্ভব নয়। সংবাদ নির্মাণের প্রশ্নে সংবাদকর্মীদের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু হলো মানবিক আবেদন। তারা সুস্পষ্ট, সুনির্দিষ্ট ও প্রাসঙ্গিক বক্তব্য পেতে চান যাতে উদ্ধৃতি আকারে সংবাদকাহিনীতে সেঁটে দিতে পারা যায়। দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবের বদলে তাৎক্ষণিক ফলাফলের ওপর জোর দেন। সংবাদে পরিসংখ্যানগত তাৎপর্য ও ক্লিনিক্যাল প্রাসঙ্গিকতাকে অতিসরলীকৃতভাবে হাজির করেন। কথা বলার সময় একজন ডাক্তারের মনে রাখতে হবে তিনি কোন মাধ্যমের সংবাদকর্মীর সঙ্গে কথা বলছেন। কেননা মুদ্রণ মাধ্যমের সংবাদকর্মী কোনো বিষয়ের বিস্তারিত বাখ্যা-বিশ্লেষণ হাজির করতে চান। অন্যদিকে টেলিভিশনের সংবাদকর্মী অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত, সুনির্দিষ্ট ও প্রভাবমূলক বক্তব্য চান। আর রেডিওর সংবাদকর্মীর গুরুত্বের জায়গা হলো সুস্পষ্ট উচ্চারণ, সহজ-সরল শব্দ চয়নে বাচনিক যোগাযোগ। এছাড়া অনলাইন সংবাদমাধ্যমের সংবাদকর্মীরা অডিও, ভিডিও, ছবি ও অন্যান্য ডকুমেন্ট চাইবেন।
সংবাদকর্মী যে মাধ্যমেরই হোন না কেন তারা বিভিন্ন উপায়ে ডাক্তার ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আর ওই উপায়গুলো হলো ই-মেইল বা ফোন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সরাসরি বাসায় চলে আসা, হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিকে চলে আসা, সহকর্মী, বন্ধু কিংবা পরিবারের কোনো সদস্যের মাধ্যমে যোগাযোগ করা। যে কোনো উপায়েই হোক সংবাদকর্মী কোনো তথ্য, মতামত বা বক্তব্যের জন্য যোগাযোগ করলে কিছু বিষয় মাথায় রাখা উচিত– সেগুলো হলো, সংবাদকর্মীর নাম, ঠিকানা, কর্মস্থল কিংবা অনুষ্ঠান সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া; ঠিক কোন বিষয়ে বক্তব্য চান তা সুনির্দিষ্টভাবে বুঝে নেওয়া; তাদের সঙ্গে যোগাযোগের বিস্তারিত জেনে নেওয়া; কোনো বিষয়ে বলতে না চাইলে, বলার না থাকলে সরাসরি ‘মন্তব্য করা যাবে না’ এমন না বলে বরং সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব দেখানো এবং আন্তরিকভাবে কারণটি বুঝিয়ে বলা।
পাশাপাশি যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে কথা বলা; নিজের এখতিয়ার বহির্ভূত স্বাস্থ্যের অন্য কোনো বিষয় নিয়ে মন্তব্য না করা; যতটা সম্ভব সহজ-সরল ও বোধগম্য ভাষায় কথা বলা; খুবই সুনির্দিষ্ট ও সংক্ষিপ্তভাবে তথ্য দেওয়া; সংবাদকর্মী কোনো বিষয়ে ভুল তথ্যের ভিত্তিতে প্রশ্ন করলে পেশাদারি মনোভাব নিয়ে ও চিকিৎসাবিদ্যার আলোকে তথ্য দেওয়া; ক্লিনিক্যাল জটিল বিষয়কে উদাহরণ ও উপমা দিয়ে আকর্ষণীয়ভাবে তথ্য উপাত্ত তুলে ধরা; অনুমানের ভিত্তিতে কোনো কিছু না বলা এবং কোনো বিষয় জানা না থাকলে তা সরাসরি বলা।
কোনো সংবাদকর্মীকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার শুরুতেই বেশকিছু প্রস্তুতি নিতে হবে। আর সেগুলো হলো প্রথমেই চিন্তা করে নেওয়া যে আসলে কোন বার্তাটি দিতে চাই এবং মূল বিষয়বস্তুগুলো কী হবে; সাক্ষাৎকারের প্রেক্ষাপট ও আঙ্গিক কী হবে এবং সাক্ষাৎকার দেওয়ার প্রশ্নে কোনো আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক বাধ্যবাধকতা আছে কিনা। কেননা একজন ডাক্তারের কাছে রোগীর অনেক সংবেদনশীল তথ্য থাকে। ওই তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা করা ডাক্তারের পেশাগত ও নৈতিক দায়িত্ব। বিতর্কের জন্ম হতে এমন বিষয়ে কথা বলার প্রশ্নে কৌশলী হতে হবে। সংবাদকর্মীগণ অনেক সময় কঠিন ও অপ্রিয় প্রশ্ন করতে পারেন। এসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় রক্ষণাত্মক বা আবেগতাড়িত হওয়া যাবে না। মেজাজ শান্ত ও স্বাভাবিক রেখে কথা বলতে হবে। সরাসরি উত্তর না দিতে পারলেও নিজেকে এমনভাবে হাজির করতে হবে যে আপনি প্রশ্নটি শুনেছেন এবং বুঝেছেন। উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে সৎ ও স্বচ্ছ হতে হবে। আর উত্তর না দিতে পারলে তা স্বীকার করে নিতে হবে। প্রয়োজনে প্রাসঙ্গিক তথ্য কোথায় পাওয়া যাবে তা বলে দিতে হবে। কোনো প্রশ্ন যদি যথাযথ না হয় কিংবা সম্ভাব্য ক্ষতির কারণ হয় তাহলে বিনয়ের সঙ্গে আলোচনার মোড় ঘুরিয়ে প্রাসঙ্গিক বিষয়ে আসতে হবে।
সংবাদকর্মীর প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো করা যাবে না। সময় খানিকটা ধীরে চিন্তা করে বিবেচনাপ্রসূতভাবে উত্তর দিতে হবে। এছাড়া সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীকে প্রশ্ন করার সুযোগ দিতে হবে যাতে করে তিনি তার চিন্তার প্রকাশ সঠিকভাবে করতে পারেন। সাক্ষাৎকারের সময় অতি নেতিবাচক হওয়া উচিত নয়। তার বদলে নিজের শক্তিশালী দিকের ওপর নজর দেওয়া উচিত। এড়ানো উচিত নেতিবাচক অভিজ্ঞতাগুলোকে।
সাক্ষাৎকারের সময় শারিরিক ভাষাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। একজন চিকিৎসক সংবাদমাধ্যম মোকাবেলা করার সময় সংবাদকর্মীর শারীরিক ভাষা পড়তে পারলে তিনি পরিস্থিতিও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর শারীরিক ভাষার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। আর সেক্ষেত্রে জরুরি হলো চোখ বরাবর তাকিয়ে কথা বলা। এতে করে সম্পৃক্ততা ও আত্মবিশ্বাসের প্রকাশ পায়। মুখোমুখি কথা বলার সময় বসার ভঙ্গি এমন হওয়া উচিত যাতে এক ধরনের ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ পায়। আর সেক্ষেত্রে পায়ের ওপর পা কিংবা হাত মোড়া দিয়ে বসা উচিত নয়। সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর দিকে কিছুটা ঝুঁকে বসলে তার প্রতি আগ্রহ প্রকাশ পাবে। মুখে একটু হাসিভাব ও যথাযথ চাহনি থাকলে আন্তরিকতার প্রকাশ পায়। এছাড়া কণ্ঠস্বরের ওঠা-নামা ও গভীরতার দিকেও খেয়াল রাখা উচিত। বিভিন্ন বাক্য ও শব্দ প্রকাশের প্রয়োজন মতো কণ্ঠস্বরের ওঠা-নামা করা উচিত। আর সমস্ত কথা স্পষ্ট ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলা উচিত।
স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, চিকিৎসা ব্যবস্থা ও স্বাস্থ্যসেবাকর্মীদের ওপর জনগণের আস্থা গড়ে তোলা ও বজায় রাখার প্রশ্নে ডাক্তারদের কার্যকর যোগাযোগ দক্ষতা ও সংবাদমাধ্যম কে মোকাবেলার দক্ষতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই দেশের মেডিকেল কলেজগুলোতে বায়োমেডিকেল ও ক্লিনিক্যাল শিক্ষার পাশাপাশি যোগাযোগ ও মিডিয়া দক্ষতার ওপরও জোর দিতে হবে। চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণ যাতে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম প্ল্যাটফর্মে সাবলীল যোগাযোগ করতে পারেন ওই প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
চিকিৎসকদের বুঝতে হবে সংবাদমাধ্যম ও সংবাদকর্মীর লজিক, কর্মপ্রণালী ও সংস্কৃতি। চিকিৎসা পেশাজীবী, জনস্বাস্থ্যবিদ, যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ, সংবাদমাধ্যম কর্মী, সংবাদকর্মীদের মাঝে একটি সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে দেশের ভবিষ্যৎ ডাক্তারদের তৈরি করতে হবে। তাহলেই স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্য সঠিক ও দায়িত্বশীলতার বিস্তার ঘটবে। আর তাদের যোগাযোগ ও মিডিয়া দক্ষতা বাড়লে তারা সংবাদকর্মীদের সঙ্গে কার্যকরভাবে যোগাযোগ করতে পারবেন। সংবাদমাধ্যম ও সংবাদকর্মীদের চাহিদা মিটিয়েও নিজ পেশাদারিত্বের উন্নত মান বজায় রাখতে পারবেন। জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত নীতি আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবেন। জনপরিসরে তাদের দায়িত্বশীল উপস্থিতি নিশ্চিত করতে পারবেন। চূড়ান্তরূপে স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কিত যেকোনো তথ্যভিত্তিক নীতি-নির্ধারণে সহায়তা করতে পারবেন।
আরও পড়ুন
স্বাস্থ্যসেবায় জন-আস্থার সঙ্কট: গণমাধ্যমের ভূমিকা, কৌশল ও করণীয়