বর্তমান আইনে ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার শেষ করার কথা বলা আছে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ১৮০ দিনের মধ্যেও বিচার শেষ হয় না। অথচ এখন আইন সংশোধন করে এই সময়সীমা ৯০ দিনে নিয়ে আসা হচ্ছে।
Published : 27 Mar 2025, 01:30 PM
কয়েকটি প্রশ্ন সামনে রেখে এগোনো যাক।
১. হঠাৎ করে দেশে ধর্ষণ বেড়ে গেল কেন?
২. ধর্ষকের সংখ্যা বেড়ে গেছে নাকি এ সম্পর্কিত খবরের সংখ্যা বেড়েছে?
৩. প্রচলিত আইনে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান থাকার পরেও কেন এই ধরনের অপরাধ কমছে না?
৪. একটি আইন থাকার পরও সরকার কেন এটি সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে?
৫. সংশোধন করে আইনটি আরও কঠিন করা হলেই কি ধর্ষণ বন্ধ হয়ে যাবে?
প্রচলিত আইনে ধর্ষণের শাস্তি ও দায়মুক্তি
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০-এর ৯ ধারায় বলা হয়েছে: যদি কোনো পুরুষ কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন, তাইলে তিনি মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।
যদি একাধিক ব্যক্তি দলবদ্ধভাবে কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন এবং ধর্ষণের ফলে ওই নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটে বা তিনি আহত হন, তাহলে ওই দলের প্রত্যেকে মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অন্যূন এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।
ধর্ষণের চেষ্টা করলে পাঁচ বছরের কম নয় এবং সর্বোচ্চ ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।
পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন কোনো নারী ধর্ষণের শিকার হলে যাদের হেফাজতে থাকাকালীন এই ঘটনা ঘটেছে, অর্থাৎ নারীর হেফাজতের জন্য সরাসরিভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন, তিনি বা তারা প্রত্যেকে হেফাজতের ব্যর্থতার জন্য অনধিক দশ বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অন্যূন দশ হাজার টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।
প্রশ্ন হলো, একজন সাধারণ মানুষ ধর্ষণ করলে মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, আর পুলিশ হেফাজতে ধর্ষণের ঘটনা ঘটলে দশ বছর কারাদণ্ড— এটা কী ধরনের আইন? এখানে কি পুলিশকে একরকম দায়মুক্তি দেয়া হলো? সংবিধান বলছে, আইনের দৃষ্টিতে সকল নাগরিক সমান। কিন্তু ধর্ষণ আইন কেন পুলিশের জন্য শিথিল? পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় একজন নারী বা মেয়ে ধর্ষণের শিকার হবেনই বা কী করে? এই ভাবনাটাই বা আইনপ্রণেতাদের মাথায় কী করে এল? একজন নারী বা মেয়ে পুলিশ হেফাজতে থাকা মানে তো তিনি সম্পূর্ণ নিরাপদ। তিনি কীভাবে বা কেন ধর্ষণের শিকার হবেন? আর যদি তার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কারও গাফিলতিতে কিংবা তাদের কারও দ্বারা হেফাজতে থাকা অবস্থায় ধর্ষণের শিকার হন, তাহলে তার তো শাস্তি হওয়া উচিত সাধারণ মানুষের যে শাস্তি, তারচেয়ে বেশি। সুতরাং এটি বিদ্যমান আইনের একটি বিরাট দুর্বলতা।
ধর্ষণ মানে কী?
প্রচলিত আইনে ধর্ষণের ব্যাখ্যা এরকম: যদি কোনো পুরুষ বিবাহ বন্ধন ব্যতীত ১৬ বছরের বেশি বয়সের কোনো নারীর সঙ্গে তার সম্মতি ছাড়া বা ভীতি প্রদর্শন বা প্রতারণামূলকভাবে তার সম্মতি আদায় করে অথবা ১৬ বছরের কম বয়সী কোনো নারীর সঙ্গে তার সম্মতিসহ বা সম্মতি ছাড়া যৌন সঙ্গম করেন, তাহলে তিনি ওই নারীকে ধর্ষণ করেছেন বলে গণ্য হবেন।
বাংলাদেশের বাস্তবতায় ১৬ বছর বয়সী একজন কিশোরীর যথেষ্ট বুদ্ধিবিবেচনা তৈরি হয়ে যায়। ওই বয়সে সে মাধ্যমিক স্কুলের গণ্ডি পার হয়ে যায়। সুতরাং কোনো পুরুষ যদি তার সম্মতি নিয়ে যৌন সম্পর্কে জড়ায়, তাহলে সেটি ধর্ষণ হবে কেন? সম্ভবত আইনে এই ধরনের শারীরিক সম্পর্ককেও ধর্ষণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে যাতে ১৬ বছরের আগে কেউ কোনোভাবেই শারীরিক সম্পর্কে না জড়ায়, বিশেষ করে কোনো পুরুষ যাতে ১৬ বছরের কম বয়সী কোনো মেয়ের সঙ্গে সুযোগ থাকলেও শারীরিক সম্পর্কে জড়ানো থেকে বিরত থাকেন।
বিবাহ বন্ধন ব্যতীত ১৬ বছরের বেশি বয়সের কোনো নারীর সঙ্গে তার সম্মতি ছাড়া বা ভীতি প্রদর্শন বা প্রতারণামূলকভাবে তার সম্মতি আদায় করে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করলে সেটি ধর্ষণ বলে বিবেচিত হবে। প্রশ্ন হলো, কোন সম্পর্কটি সম্মতিতে হয়েছে, আর কোনটি প্রতারণামূলকভাবে সম্মতি আদায় বা ভয়-ভীতি দেখিয়ে করা হয়েছে— তা প্রমাণ হবে কী করে?
ধরা যাক, পারস্পরিক সম্মতিতে দুজন নারী-পুরুষ যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হলেন এবং এরপর তাদের মধ্যে কোনো ইস্যু নিয়ে বিরোধ তৈরি হলো। তখন ওই নারী যদি এই অভিযোগে মামলা করেন যে, তাকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে বা প্রতারণামূলকভাবে সম্মতি আদায় করে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা হয়েছে— তাহলে সেটিও ধর্ষণ হিসেবে বিবেচিত হবে। এরকম ঘটনা ঘটলে ওই পুরুষ ন্যায়বিচার পাবেন না। কেননা অভিযোগকারী কী করে প্রমাণ করবেন যে সম্মতি ছাড়াই তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা হয়েছে? আদালত কি অভিযোগকারীর অভিযোগকেই শুধু আমলে নেবেন? এখানে অভিযুক্তের আত্মপক্ষ সমর্থন বা সুরক্ষার সুযোগ কোথায়? ফলে বিষয়টা খুব জটিল এবং এ কারণেই দেখা যায়, এই ধরনের ঘটনা বছরের পর বছর ধরে অনিষ্পন্ন হয়ে পড়ে থাকে।
২০১৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি যুগান্তরের একটি খবরের শিরোনাম ছিল: নারী নির্যাতন মামলার অধিকাংশই বানোয়াট। খবরে বলা হয়, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে লক্ষাধিক মামলার বিচার কাজ চলছে। ট্রাইব্যুনালের বিচারকরা বলছেন, এসব মামলার অধিকাংশ মিথ্যা ও ভুয়া। মামলাগুলোর ৮০ শতাংশই যৌতুক, ধর্ষণ ও যৌননিপীড়নের অভিযোগে করা হয়েছে। কিন্তু অভিযোগ নারী নির্যাতন হলেও অন্য ধরনের বিরোধের কারণেই এসব করা হয়েছে। বিচারকরা মামলাগুলো আপসে নিষ্পত্তির পরামর্শ দিচ্ছেন। পাশাপাশি মামলাগুলো সুপ্রিমকোর্টের লিগ্যাল এইডের কাছে পাঠানোর কথা বলেছেন।
নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মিথ্যা মামলারও শাস্তির বিধান রয়েছে। যেমন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১৭ ধারায় বলা হয়েছে: যদি কোনো ব্যক্তি অন্য কোনো ব্যক্তির ক্ষতিসাধনের জন্য এই আইনে মামলা বা অভিযোগ করার জন্য ন্যায্য বা আইনানুগ কারণ নেই জেনেও মামলা বা অভিযোগ দায়ের করেন বা করান, তাহলে মামলা বা অভিযোগ দায়েরকারী ব্যক্তি এবং যিনি অভিযোগ দায়ের করিয়েছেন, তিনি অনধিক ৭ বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন। কিন্তু ধর্ষণ বা নারী নির্যাতনের মিথ্যা মামলায় কতজনের শাস্তি হয়েছে বা কতগুলো মামলা হয়েছে, তাও বিরাট প্রশ্ন।
কেন আইন সংশোধনের উদ্যোগ?
মাগুরায় ধর্ষণের শিকার ৮ বছরের একটি শিশুর মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে সম্প্রতি সারাদেশে তোলপাড় হয়েছে। এরকম বাস্তবতায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
বাস্তবতা হলো, যখনই দেশে কোনো অপরাধ বেড়ে যায়, তখন ওই অপরাধের বিচারসংশ্লিষ্ট আইনকে দোষারোপ করা হয়। তখনই আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়। শেষপর্যন্ত আইনটি হয়তো সংশোধিতও হয়। কিন্তু তাতেও যে ওই অপরাধটি নির্মূল হয়ে যায়, তা নয়। বরং বিদ্যমান আইনটি সঠিকভাবে প্রয়োগ হয়েছে কিনা এবং প্রয়োগের ক্ষেত্রে অন্তরায়গুলো চিহ্নিত করা গেলেই সমস্যার অনেকাংশে সমাধান সম্ভব। কিন্তু সরকার ওই পথে এগোয় না। কারণ সে জনতুষ্টিবাদী কর্মসূচি নিয়ে তড়িঘড়ি করে আইন সংশোধনের পথে হাঁটে এবং মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করে যে, সমস্যাটি নিয়ে সরকার ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন’।
ধর্ষণ আইন সংশোধনের সাম্প্রতিক পদক্ষেপও তার ব্যতিক্রম নয়। যেসব জায়গায় সংশোধন আনা হচ্ছে বলে সরকারের তরফে বলা হচ্ছে, সেখানেও অনেক প্রশ্ন থাকবে। যেমন, বর্তমান আইনে ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার শেষ করার কথা বলা আছে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ১৮০ দিনের মধ্যেও বিচার শেষ হয় না। অথচ এখন আইন সংশোধন করে এই সময়সীমা ৯০ দিনে নিয়ে আসা হচ্ছে। ১৮০ দিনেই যেখানে বিচার শেষ করা যায় না, সেখানে ৯০ দিনে কীভাবে বিচার শেষ করা যাবে— ওই প্রশ্নের উত্তর কে দেবে? বরং সরকারের এই আত্মসমালোচনা করা দরকার যে, কেন ১৮০ দিনে বিচার শেষ করা যায় না? এটা তদন্তের দুর্বলতা; সাক্ষ্য-প্রমাণ জোগাড়ের সমস্যা নাকি বিচারিক প্রক্রিয়ায় যুক্ত ব্যক্তিদের অদক্ষতা? হয়তো এর সবগুলোই।
আইন সংশোধনে ধর্ষণ বন্ধ হবে?
ধর্ষণ বা নারীর প্রতি সহিংসতার মামলগুলো ঝুলে যায় মূলত তদন্তের দুর্বলতার কারণে। প্রথমত যারা তদন্ত করেন তাদের অদক্ষতা এবং একইসাথে তাদের অসততাই এর জন্য প্রধানত দায়ী। সুতরাং তদন্তকারীদের দক্ষতা বাড়ানো এবং তদন্ত যাতে পক্ষপাতমুক্ত হয়, তা নিশ্চিত করতে তদন্ত সংশ্লিষ্টদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা জরুরি। এর জন্য আইন সংশোধনের চেয়ে বেশি জরুরি সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি।
প্রচলিত আইন সংশোধন করে শিশু ধর্ষণের মামলার বিচার বিশেষ ট্রাইব্যুনালে করার বিধান রেখে এরইমধ্যে একটি অধ্যাদেশের খসড়ায় উপদেষ্টা পরিষদও নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। প্রশ্ন হলো, বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বা দ্রুত বিচার শেষ হলেই কি ধর্ষণ বন্ধ হয়ে যাবে?
সিলেটের শিশু রাজনকে পিটিয়ে হত্যার মামলার বিচার শেষ করা হয়েছিল মাত্র ১৭ কার্যদিবসে— যেটি বাংলাদেশ তো বটেই, পৃথিবীর বিচারিক ইতিহাসেরও একটি মাইলফলক ঘটনা। কিন্তু ওই বিচারের পরে কি পিটিয়ে হত্যা বন্ধ হয়েছে? গত বছরের ৫ অগাস্ট অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগের পতনের পরে এ পর্যন্ত একশ-এর বেশি মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। গত ৫ মার্চ প্রকাশিত মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস)-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম সাত মাসে দেশে অন্তত ১১৪টি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে। এতে ১১৯ জন নিহত এবং ৭৪ জন আহত হয়েছেন। আর গত ১০ বছরে গণপিটুনিতে মারা গেছেন কমপক্ষে ৭৯২ জন। আহত হয়েছেন ৭৬৫ জন। সুতরাং গত সাত মাসে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় কতগুলো মামলা হয়েছে, কতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, কয়টি মামলায় পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে বা প্রতিবেদন দিয়েছে— ওই প্রশ্ন করলে সরকারের তরফে কোনো আশাব্যঞ্জক জবাব মিলবে বলে মনে হয় না। তার মানে শক্ত আইন বা দ্রুত বিচার মানেই অপরাধ নির্মূল নয়। বরং কোন অপরাধের বিচারে সরকার বা রাষ্ট্রের নিয়ত কেমন, তার ওপর ন্যায়বিচার নির্ভর করে।
ডিএনএ ফরেনসিক সাপোর্ট
বিদ্যমান ধর্ষণ আইন সংশোধনের প্রশ্নে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, ধর্ষণ প্রমাণের জন্য প্রতিটি জেলায় ডিএনএ ফরেনসিক সাপোর্টের ব্যবস্থা করতে সরকার উদ্যোগ নিচ্ছে। এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এখানে চ্যালেঞ্জ হলো, সরকারি হাসপাতালগুলোতে সারা বছরই লোকবল সংকট থাকে। চাহিদার তুলনায় ডাক্তার নার্স, টেকনিশিয়ান ও ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট কম থাকে। এমনকি ওই কমের ভেতরেও ঘাটতি থাকে। যে কারণে দেখা যায় সরকারি হাসপাতালগুলোর ল্যাব বন্ধ থাকে। অপারেশন হয় না। ডাক্তার আছে তো অ্যানেস্থেসিস্ট নেই। সুতরাং প্রতিটি জেলায় ডিএনএ ফরেনসিক সাপোর্টের ব্যবস্থা করার যে কথা উপদেষ্টা বলছেন সেটি শুনতে খুবই ভালো। কিন্তু এটা কবে হবে এবং কয়টি জায়গায় দক্ষ লোকবল দেয়া যাবে— তাও বিরাট প্রশ্ন। তবে এই বিষয়টিকে আইনের ভেতরে নিয়ে আসা গেলে ভালো। কেননা ধর্ষণের আইন যত কঠিনই হোক না কেন, মেডিকেল পরীক্ষায় যদি বিলম্ব হয় বা সঠিকভাবে পরীক্ষা করা না যায় তাহলে আদালতে তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করা যাবে না। আদালত শুধু ভিকটিমের মুখের কথায় রায় দিতে পারেন না। তাছাড়া ধর্ষণের মতো ঘটনাগুলো সাধারণত আড়ালে ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীও থাকে না। অতএব, ধর্ষণের বিদ্যমান আইনের ত্রুটিগুলো চিহ্নিত করা, বিশেষ করে ধর্ষণের সংজ্ঞায়নটি নিয়ে নতুন করে ভাবা দরকার। একইসাথে নানা বিদ্যমান আইনেরও বা কতটুকু প্রয়োগ করা যাচ্ছে এবং না গেলে তার কারণও অনুসন্ধান করা জরুরি।
মোদ্দা কথা, শুধু শক্ত আইন দিয়ে ধর্ষণ বা নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন নারী ও কন্যাশিশুর ব্যাপারে পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। পুরুষ যদি নারীকে নারী ভাবতে থাকে; যদি তাকে মানুষ ভাবতে না শেখে বা ভাবতে না পারে; যদি সে পুরুষ হিসেবে নিজেকে সুপিরিয়র ভাবতে থাকে এবং পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র যদি তার এই ভাবনায় সায় দেয়, সেক্ষেত্রে নারীর ওপর পুরুষের খবরদারি কমবে না। খবরদারি না কমলে ধর্ষণও বন্ধ হবে না।