চীনা ঋণের ফাঁদ এবং অর্থমন্ত্রীর কথিত বক্তব্য

আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ‘রোডিয়াম গ্রুপ’ তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্পের নামে চীন ২০১৬ সালে পঁচাত্তর বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিভিন্ন দেশকে ঋণ দিয়েছে। ২০১৮ সালে ঋণের অংক কমে গেলেও তা এখনো ভয়াবহতার পর্যায়ে রয়েছে।

শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকশামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক
Published : 20 August 2022, 11:55 AM
Updated : 20 August 2022, 11:55 AM

বিশ্বময় অর্থনীতির খবরাখবর প্রকাশ করার জন্য যে দুইটি পত্রিকা সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেছে তার একটি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এবং অপরটি লন্ডন থেকে প্রকাশিত ফাইনান্সিয়াল টাইমস। দুইটি পত্রিকাই বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করে অর্থনীতির সংবাদ প্রচার করে। ফাইনান্সিয়াল টাইমস পত্রিকার প্রতিটি রিপোর্টার, গবেষক এবং সাংবাদিকই অর্থনীতি শাস্ত্রে উঁচু মাপের বিশেষজ্ঞ। বিশ্বব্যাপী পত্রিকাটির মানদণ্ড এবং বিশ্বাসযোগ্যতা রক্ষার জন্য প্রতিটি রিপোর্টারকেই সংবাদ বা সাক্ষাৎকার বা নিবন্ধ লেখার ব্যাপারে সর্বোচ্চ পর্যায়ের সতর্কতা অবলম্বন করতে হয় যাতে ভ্রান্ত তথ্য প্রকাশিত হয়ে পত্রিকাটির সুনাম ক্ষুণ্ণ না হয়। ফাইনান্সিয়াল টাইমসের এমনি এক রিপোর্টারের নাম বেন ফ্রাংকলিন। কিছুদিন আগে ফ্রাংকলিন সাহেব ঢাকা এসেছিলেন আমাদের অর্থমন্ত্রী মোস্তফা কামাল সাহেবসহ আরও কয়েকজন অর্থনীতি বিশেষজ্ঞের সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য। মোস্তফা কামাল সাহেবের সাথে সাক্ষাৎকারটি ফাইনান্সিয়াল টাইমস পত্রিকা তাদের অনলাইন ভার্সনে ছেপেছে। পত্রিকাটি দাবি করেছে, সাক্ষাৎকারে মোস্তফা কামাল সাহেব চীন দেশের ঋণের ভিত্তিতে চীনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ (সংক্ষেপে বিআরআই) প্রকল্পে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে বিশ্ববাসীকে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশসমূহকে, সতর্ক করে বলেছেন- চীনের ঋণ নেওয়ার এবং ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্পে প্রবেশের পূর্বে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে দুইবার ভাবতে হবে। কারণ বৈশ্বিক মুদ্রাস্ফীতি এবং প্রবৃদ্ধি ঋণগ্রস্ত উদীয়মান বাজারগুলোতে চাপ বাড়ায়। ফাইনান্সিয়াল টাইমসের দাবি অনুযায়ী, কামাল সাহেব আরো বলেছেন যে- চীনকে তার ঋণের মূল্যায়নে আরো কঠোর হতে হবে, কারণ দুর্বল ঋণের সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে সংকটে নিক্ষিপ্ত হওয়ার ঝুঁকিতে ফেলছে। পত্রিকার ভাষায় কামাল সাহেব শ্রীলংকার দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, সেখানে চীন সমর্থিত প্রকল্পগুলো রিটার্ন জেনারেট করতে ব্যর্থ হয়ে দ্বীপ রাষ্ট্রটিকে এক গুরুতর সংকটের দিকে ঠেলে দিয়েছে। পত্রিকাটি লিখেছে কামাল সাহেবের সতর্কবাণী এই যে বিশ্বব্যাপী পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, সবাইকে চীনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্পে সম্মত হওয়ার আগে দুইবার ভাবতে হবে। পত্রিকাটির দাবি অনুযায়ী, কামাল সাহেব আরো বলেছেন- “সবাই চীনকে দোষারোপ করছে এবং চীনও নিশ্চয়ই তার দায় এড়াতে পারে না। চীন থেকে ঋণ নেওয়ার পর ঋণের দায়িত্ব নিজেদেরই নিতে হবে।” পত্রিকাটি আরো লিখেছে যে, অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেবের মতে, “শ্রীলংকার সংকট থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট যা হলো কোন প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে ঋণ দেয়া হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে চীন যথেষ্ট কঠোর ছিল না। একটি প্রকল্পে ঋণ দেয়ার আগে সেটিকে পুঙ্খানুপুঙ্খ অধ্যায়ন করতে হবে। শ্রীলংকার পর আমরা অনুভব করেছি যে চীনা কর্তৃপক্ষ এই বিশেষ দিকটির দিকে নজর দিচ্ছে না, যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।” ফাইনান্সিয়াল টাইমস- এর অনলাইনে প্রকাশিত হওয়ার তিনদিন পর অর্থমন্ত্রী মোস্তফা কামাল সাহেব ফাইনান্সিয়াল টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের প্রতিবাদ করে লিখেছেন যে, তিনি শুধু চীনা ঋণের কথাই বলেননি, তিনি সাধারণভাবে সকল দেশকে সতর্ক করেছেন যে কোনও সূত্র থেকে ঋণ নেওয়ার আগে সতর্কতা অবলম্বন করতে।

কামাল সাহেবের প্রতিবাদ সত্ত্বেও যা স্পষ্ট তা হলো এই যে, তিনি যদি নাম ধরে চীনের কথা উল্লেখ নাও করে থাকেন তথাপিও যেহেতু তার কথায় বিদেশি ঋণ নেওয়ার ব্যাপারে সতর্কবাণী রয়েছে, তাই চীনা ঋণের কথা স্বভাবতই এসে যায়। কেননা, গত কয়েক বছর ধরে চীনই হচ্ছে একমাত্র দেশ যে অকাতরে এবং চাওয়ার আগেই আফ্রো-এশিয়া-লেটিন আমেরিকার দরিদ্র এবং উন্নয়নশীল দেশসমূহকে অকাতরে ঋণ দিয়ে যাচ্ছে এবং এই চীন থেকে অবিবেচকের মতো অঢেল ঋণ নিয়ে শ্রীলংকা ছাড়াও বেশ কয়েকটি দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশ আজ আর্থিক অনটনের মরণ কামড়ে দিশেহারা, আর চীন হচ্ছে জি-২০ দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ ঋণ প্রদানকারী দেশ।

অবিবেচকের মতো ঋণ নেওয়ার ব্যাপারে সতর্ক বাণী উচ্চারণ যে মোস্তফা কামাল সাহেবই প্রথম করলেন তা নয়। গত কয়েক বছর ধরে বিশ্বের সমস্ত প্রান্তের বহু বোদ্ধা অর্থনীতিক চীনা ঋণের ফাঁদ সম্পর্কে অবারিতভাবে সতর্কতার কথা বলে আসছেন। চীনা ঋণের ভয়াবহতার কথা তারা এমনভাবে বলে আসছেন যে, ‘চীনা ঋণের ফাঁদ’ কথাটি এখন বিশ্বের শব্দ ভাণ্ডারে একটি নতুন সংযোজন হিসেবে স্থান পেয়েছে। এমনকি নেপাল, যে দেশটির সাথে চীনের ঘনিষ্ঠতা বেশ গাঢ় বলেই সবাই জানেন, সে দেশটিও কয়েক মাস পূর্বে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখের উপরই বলে দিয়েছিলেন যে তারা চীনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্পে অংশ নেবে না, চীনা ঋণ গ্রহণ করবে না। এমনকি চীনের শ্রেষ্ঠতম বন্ধু দেশ পাকিস্তানেও আজ ‘চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরে’র নামে নেওয়া চীনা ঋণের বোঝার বিরুদ্ধে সবাই মুখ খুলতে শুরু করেছে। কেননা পাকিস্তানের বর্তমান অবস্থা শ্রীলংকা থেকে বেশি দূরে নয়, যে দেশে এখন ডলারের মূল্য ২৩০ রূপি, যে দেশ ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরে বেড়াচ্ছে, যে দেশে অন্য দেশের কাছে ভূমি এবং অন্য সম্পদ হস্তান্তরের জন্য সরকারকে ক্ষমতা প্রদান করে একটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। কয়েক মাস পূর্বে জার্মানিতে এক বহুজাতিক সম্মেলনে ভাষণ দেওয়ার সময় আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সাহেবও বলেছিলেন চীন আমাদেরকে টাকার বস্তা দেখাচ্ছে। তিনি সেটি গ্রহণ না করার কথা স্পষ্ট করে বলেননি বটে, কিন্তু সে টাকা গ্রহণ করবেন না- এমন ইঙ্গিত তার বক্তব্যে ছিল। কেননা চীন থেকে আমাদের ঋণ নেওয়ার প্রবণতা বহুলাংশেই কমে গেছে।

শ্রীলংকার বিগত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থমন্ত্রী আলী সাবরি গত এপ্রিল মাসে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল পত্রিকায় এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, চীন থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধ করতে করতেই শ্রীলংকাতে অর্থনৈতিক প্রলয়কাণ্ড শুরু হয়েছে। তিনি আরো বলেন, বেশ কিছু সময় আগে শ্রীলংকা আইএমএফের দ্বারস্থ হলে, সম্ভবত এই সঙ্কট এড়ানো সম্ভব হতো। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বেশ কিছু দলিলে চীনা ঋণের বিপদের কথার উল্লেখ রয়েছে। ২০২০ সালে স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে চীন সুচতুরভাবে বিভিন্ন দেশকে অনুপ্রাণিত করছে তাদের ঋণ গ্রহণ করে ফাঁদে পড়তে, যার ফলে উক্ত দেশসমূহের সার্বভৌমত্ব বহুলাংশে খর্ব হচ্ছে। গত ৬ই জানুয়ারি বিবিসি তাদের রিপোর্টে উল্লেখ করে, চীন দরিদ্র দেশগুলোকে অকাতরে এমন ঋণ দিচ্ছে যেগুলো শোধ করার ক্ষমতা সেই দেশগুলোর নেই, যার কারণে ঋণে জর্জরিত দেশগুলো বাধ্য হয়ে চীনের কাছে বহু কিছু বিলিয়ে দিচ্ছে। গত বছর ডিসেম্বরে চীনা ঋণ শোধ করতে ব্যর্থ হয়ে লাতিন আমেরিকান দেশ সুরিনাম আইএমএফের দ্বারস্থ হয়েছিল। এর পরেই আইএমএফের মহাপরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা দরিদ্র দেশগুলোকে চীনা ঋণের ব্যাপারে সতর্ক করেছিলেন, সুরিনামের নজির দেখিয়ে। আইএমএফ প্রধান জি-২০ অর্থমন্ত্রীদের সম্মেলনে উল্লেখ করেছিলেন, এই বিপদ অনুধাবনের জন্য শ্রীলংকার উদারহণই যথেষ্ট। সিডনি মর্নিং হেরাল্ড পত্রিকার প্রতিবেদক পিটার হার্চার লিখেছেন, শ্রীলংকার ঘটনাবলির জন্য চীনের সৃষ্ট পদাঙ্কু বছরের পর বছর বেদনাময় স্মৃতি হয়ে থাকবে। তিনি উল্লেখ করেছেন, “এটিই পৃথিবীতে ঘটে যাওয়া একটি বৃহৎ অনিয়ন্ত্রিত অবক্ষয়, যার পেছনে চীন ছিল মুখ্য কর্মকার।” তিনি আরো লিখেছেন, “এই ঘটনা যে প্রশ্নটি তুলে ধরছে তা হলো- চীন তার সদ্য প্রাপ্ত ক্ষমতা অপব্যবহার করে বিভিন্ন সংকটাপন্ন এবং বিপদগ্রস্ত দেশসমূহকে কিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।” যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডনাল্ড ট্রাম্প এবং বর্তমান রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন উভয়ই এই মর্মে সতর্ক করেছেন যে চীন ঋণের ফাঁদ ফেলে বিভিন্ন দেশের সম্পত্তি এবং প্রাকৃতিক সম্পদ দখল করে নিচ্ছে। চীন এটি করছে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করে যেন গ্রহিতা দেশগুলো চীনা ঋণ শোধ করতে অক্ষম হয়ে যায়।

আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ‘রোডিয়াম গ্রুপ’ তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্পের নামে চীন ২০১৬ সালে পঁচাত্তর বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিভিন্ন দেশকে ঋণ দিয়েছে। ২০১৮ সালে ঋণের অংক কমে গেলেও তা এখনো ভয়াবহতার পর্যায়ে রয়েছে। জি-২০ সম্মেলনে চীনা ঋণ পরিশোধের ব্যাপারে শর্ত শিথিল করার জন্য পারস্পরিক ভিত্তিতে আলোচনার প্রসঙ্গ উত্থাপিত হলে, চীন তা নাকচ করে দিয়ে দাবি করে চীনের ঋণদাতা অনেকগুলো ব্যাংকই চীন সরকারের নিয়ন্ত্রণ মুক্ত, যদিও বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট চীনের এই দাবির সমালোচনা করেছেন। ‘আটলান্টিক কাউন্সিলের জিও ইকোনোমিক সেন্টারে’র সিনিয়র ফেলো জেরেমি মার্ক উল্লেখ করেছেন, চীনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্প এখন অবক্ষয়ের পর্যায়ে রয়েছে, যার কারণে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সম্মেলনে এই প্রকল্পের ব্যাপারে কোনওকিছু উল্লেখ করা হয়নি।

২০১৮ সালে যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকা উল্লেখ করেছিল যে চীনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্প থেকে অনেক দেশই বেরিয়ে আসার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে চীনা ঋণের ফাঁদের ভয়াবহতা উপলব্ধি করার পর। সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের এশিয়া প্রজেক্টের পরিচালক জনাথন হিলম্যান উল্লেখ করেছেন ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্পের পেছনে রয়েছে চীনের দুরভিসন্ধিমূলক কূটনীতি। ২০১৮ সালে হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলের প্রতিবেদনেও একই ধরনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সিএনএ এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, চীন সেই সমস্ত দেশকেই ঋণ দিচ্ছে যারা চীনের ঋণ শোধ করতে অক্ষম হয়ে চীনের কাছে অনেক কিছু বিলিয়ে দেবে। পাকিস্তানে চীনের ঋণে নির্মিত কারাকোরাম মহাসড়কের উল্লেখ করে সিএনএ মন্তব্য করেছে, এই সড়কের সুবিধা নিয়ে চীন পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমে গোয়াদর বন্দরে তার আধিপত্য বিস্তার করবে, আর সেটিই হচ্ছে এই সড়ক নির্মাণের পেছনে চীনের মূল উদ্দেশ্য।

এখানে উল্লেখযোগ্য যে, চীন-পাকিস্তান করিডোরের আওতায় নির্মিত এই সড়কের জন্য চীন পাকিস্তানকে যে ঋণ দিয়েছিল তার ভার বহন করা পাকিস্তানের অর্থনীতির জন্য একটি গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ডের (আইএমএফ) ম্যানেজিং ডাইরেক্টর গত এপ্রিলেই চীনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্পকে বিভিন্ন দেশকে আকৃষ্ট করার জন্য একটি লোভ দেখানো ‘মুলা’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তারা বলেছেন, চীন তাদের ঋণের ফাঁদে ফেলে আফ্রিকান দেশ জিবুতির একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর দখলের পাঁয়তারায় লিপ্ত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ওভারসিজ প্রাইভেট ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশনের (উপিআইসি) প্রধান কর্মকর্তা মি. রে ওয়াশবার্ন রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ মর্মে সতর্ক বাণী দিয়েছেন, চীন তাদের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ নামক প্রকল্পের মাধ্যমে অত্যন্ত সুচতুরভাবে পৃথিবীর দরিদ্র এবং স্বল্পোন্নত দেশসমূহকে ফাঁদে ফেলছে, যে কথা এই দেশগুলোর বোঝা উচিত। তিনি আরও বলেছেন, ‘এভাবে চীনের ফাঁদে পা দিয়ে বহু দেশ বোকার সারি লম্বা করে চলছে। তিনি চীনা ঋণ নিয়ে জাম্বিয়ায় এক বিশালাকায় বিমান বন্দর নির্মাণকে সেই দেশটির জন্য অপ্রয়োজনীয় উল্লেখ করে বলেন, “ভবিষ্যতে এই প্রকল্পের জন্য নেওয়া চীনা ঋণ শোধ করা জাম্বিয়ার জন্য কঠিন হয়ে পড়বে, আর তখনই চীন এটি দখলে নেয়ার চেষ্টা করবে।” চীনের ঋণের উপর অতিমাত্রার নির্ভরতাকে ‘ভয়ঙ্কর’ বিষয় বলে উল্লেখ করে ২০১৮ সালে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স চীনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্পকে ‘ঋণের ফাঁদের কূটনীতি’ বলে অভিহিত করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “নির্বোধ, গরিব দেশগুলো এই জাল থেকে বেরুতে পারবে না”। উল্লেখযোগ্য যে ভারতের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ব্রাহ্ম চেনারি ‘চীনা ঋণের ফাঁদ’ কথাটি প্রথমবারের মতো উচ্চারণ করার পর, এই শব্দটি এখন বিশ্বের সকল দেশের অভিধানে মুদ্রিত হয়েছে। সাবেক মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার বলেছিলেন চীন গরিব দেশগুলোর উপর শুধু ঋণের বোঝাই চাপাচ্ছে না, সে ঋণ শোধের সময়সীমা শিথিল করার জন্য আলাপ করতেও নারাজ। ‘দ্য আটলান্টিক ডেইলি নিউজ লেটার’ পত্রিকায় এক গবেষণাভিত্তিক প্রবন্ধে ডেবোরা প্রোডিগাম এবং ম্যাগি রিথসায়ার কয়েকজন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞের মতামত উল্লেখ করে লিখেছেন, “তারা মনে করেন, চীনের ফাঁদে পা দিয়ে যারা নিরূপায় হয়ে ঋণ নিচ্ছে তারা সে ধরনের বেপরোয়া জুয়ারির মতো যারা জুয়ায় হেরে পরে মাফিয়া চক্র থেকে ঋণ নিয়ে সর্বশান্ত হয়ে যায়। চীনও একইভাবে সুবিবেচনাবর্জিত দরিদ্র দেশগুলোকে ঋণ দিচ্ছে এটা আন্দাজ করে, এরা ঋণ শোধ করতে না পেরে তাদের প্রকল্পগুলোর নিয়ন্ত্রণ চীনের হাতে ছেড়ে দিতে বাধ্য হবে, যে প্রক্রিয়ায় চীন শ্রীলংকার হামবানটোটা বন্দরের মালিকানাই নিয়ে নিয়েছে ৯৯ বছরের জন্য। অর্থমন্ত্রী জনাব মোস্তফা কামাল সাহেবের এবং বিশ্বের অন্যান্য বিজ্ঞজনের বক্তব্য ছাড়াও চীন যে তাদের ঋণের ফাঁদ প্রসারিত করে পৃথিবীর দরিদ্র এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোতে তার প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টায় লিপ্ত, সেটিতো এখন দৃশ্যমান বাস্তবতা। তারা শ্রীলংকায় হামবানটোটা নামক বন্দর প্রকল্পের জন্য অঢেল পয়সা দিয়ে, এখন বন্দরটি নিজেই দখল করে নিয়েছে, যেটি সবাই দেখতে পাচ্ছেন। শ্রীলংকাসহ অন্যান্য দেশের বিশেষজ্ঞদের মতে এই বন্দর তৈরির কোন প্রয়োজনীয়তাই ছিল না, যেখানে কলম্বো বন্দরই যথেষ্ট ছিল। হামবানটোটা বন্দর ছিল একটি অতি উচ্চাভিলাষী প্রকল্প, যার থেকে অদূর ভবিষ্যতে কোন ফয়দা লাভ করার সম্ভাবনা শ্রীলংকার ছিল না। এই প্রকল্পের পেছনে ‘রাজাপক্ষ’ পরিবারের দুর্নীতি জড়িত ছিল বলে এখন প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। চীন বুঝতে পেরেছিল যে, শ্রীলংকা উক্ত বন্দরের জন্য চীনা ঋণ শোধ করতে ব্যর্থ হবে, আর তখনই চীন বন্দরটি নিজের দখলে নিয়ে নিবে, যা সে দেশটি সত্যি সত্যিই করেছে। সম্প্রতি চীন হামবানটোটা বন্দরে তাদের গোয়েন্দা জাহাজ পাঠিয়ে প্রমাণ করলো এই বন্দর নির্মাণের পেছনে তাদের আসল উদ্দেশ্য কী ছিল। জিবুতি, জাম্বিয়া, ইথিওপিয়া, কেনিয়া, লাওস, মিয়ানমার, ভেনিজুয়েলা, কিরঘিস্তান প্রভৃতি দেশকেও চীন ঋণের ফাঁদে ফেলেছে একই উদ্দেশ্যে। যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থা এমআই-৬- এর প্রধান রিচার্ড মুর বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “চীন বিভিন্ন দেশকে ঋণের ফাঁদে ফেলছে সে দেশসমূহের উপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য। অতীতে চীন মালদ্বীপ এবং নেপালকে ঋণের ফাঁদে ফেলে সেই দেশগুলোর সরকার পরিবর্তনেও ভূমিকা রেখেছিল, যদিও পরবর্তীতে চীনের সেই দূরভিসন্ধি বুমেরাঙে পরিণত হয়েছে।” গত ১৯ শে জানুয়ারি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক বলেছে, বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোকে ২০২২ সালেই চীনা ঋণের ৩৭ শতাংশ পরিশোধ করতে হবে। বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড মালপাস বলেছেন, পৃথিবীর আরো বহু দেশ চীন থেকে এমন ঋণ নিয়েছে যেগুলো পরিশোধ করার ক্ষমতা তাদের নেই।

তিনি আরো বলেছেন, চীনের দেওয়া ঋণের শর্তগুলোর মধ্যে কোন স্বচ্ছতা থাকে না এবং চুক্তির অন্যতম শর্ত থাকে এই যে চুক্তির বিষয়গুলো গোপন রাখতে হবে, যার কারণে চীনা ঋণের সুদের হার, যা তুলনামূলকভাবে অনেক উঁচু, তা কেউ জানতে পারে না। বাংলাদেশে করোনার টিকা বিক্রয় চুক্তিতে চীন একই শর্ত দিয়েছিল যাতে জনগণ চীনা টিকার দাম জানতে না পারে। ঋণ চুক্তি গোপন রাখার জন্য চীন ‘প্যারিস ক্লাবে’র সদস্য পদ থেকে বিরত রয়েছে। ‘চীন-পাকিস্তান ইকোনোমিক করিডোরের’ নামে চীন একইভাবে পাকিস্তানের উপর এমন ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে, যা থেকে বেড়িয়ে আসা পাকিস্তানের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না এবং একইভাবে চীন পাকিস্তানের গোয়েদার বন্দরের কিছু অংশ নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছে, যার জন্য পাকিস্তানে চীন বিরোধী গণঅসন্তোষ বেড়ে যাচ্ছে। দক্ষিণ এশীয় দেশ লাওসও যে চীনা ঋণের ফাঁদে পড়ে গেছে তা সম্প্রতি ‘সিঙ্গাপুর পোস্ট’ এবং বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে প্রকাশ পেয়েছে। এই প্রতিবেদনগুলোর মতে, লাওস ‘চায়না-লাওস রেলওয়ে’ নামক এক উচ্চাভিলাষী প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য চীন থেকে যে ঋণ নিয়েছে, তা শোধ করা লাওসের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। বিশ্বব্যাংক গত এপ্রিল মাসে জানিয়েছে যে, লাওসের গোটা ঋণের পরিমাণ ১৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যার অর্ধেকই চীনা ঋণ। সারা বিশ্বের বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, চীন সব সময়ই একজন চতুর ঋণদাতার মতো সুযোগের সন্ধানে থেকে, সুযোগ বুঝে কোপ মারে। যেসব দেশের ঋণ পরিশোধের রেকর্ড খারাপ হওয়ায় তারা অন্য সূত্র থেকে ঋণ নিতে পারছে না, চতুর চীন, ভিন্ন মতলবে এবং উচ্চ সুদে সেই সব দেশকে ঋণ দিচ্ছে। যখন আইএমএফ এই সকল খারাপ রেকর্ডধারী দেশকে সাহায্য করতে অপারগতা প্রকাশ করে তখন চীন তাদের বন্ধু সেজে এগিয়ে যায়, আর এইভাবেই চীন তাদের ঋণের ফাঁদ ছড়াতে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের উইলিয়াম অ্যান্ড মেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কেন্দ্র এইডডাটা’র এক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, “উন্নয়নশীল দেশগুলোকে চীন যে পরিমাণ ঋণ দিয়েছে তার অর্ধেকই সরকারি পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়নি। এসব ঋণ প্রায়ই হিসাবপত্রের বাইরে রাখা হয়। ঋণের একটি বড় শর্ত থাকে এই যে চীনা কোম্পানিগুলোকে কাজের চুক্তি প্রদান করতে হবে, চীনা সরঞ্জাম ক্রয় করতে হবে, মূল্য অধিক হলেও। চীনের বিরুদ্ধে প্রায় সকল ক্ষেত্রেই গ্রহিতা দেশসমূহের কর্তাব্যক্তিদের উৎকোচ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। চীন দরিদ্র এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সেই সব প্রকল্পের জন্য ঋণ দিতে উৎসাহিত করে, যেসব প্রকল্পগুলো সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর জন্য আদৌ প্রয়োজনীয় নহে এবং যার থেকে ফায়দা পেতে বহু বছর সময় লাগবে।”

চীন যে শুধু তাদের নিজেদের স্বার্থ নিয়েই ব্যস্ত তার একটি বড় প্রমাণ মিললো গত ১৫ অগাস্ট ঢাকা উত্তরা এলাকায়। সেখানে চীন সরকার নিয়ন্ত্রিত একটি চীনা প্রতিষ্ঠান উড়ন্ত রেল প্রকল্প তৈরির জন্য ঠিকাদার হিসাবে কাজ করে আসছে। ১৫ অগাস্ট এই চীনা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটির খামখেয়ালিমূলক অসাবধানতার জন্য একটি গার্ডার ক্রেন থেকে পড়ে গেলে একটি গাড়িতে থাকা পাঁচ যাত্রী নিহত হয়। প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণ হয়েছে, এর জন্য চীনা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের চরম খামখেয়ালি এবং গাফিলতিমূলক কর্মকাণ্ডই দায়ী। তদন্তে আরও বেরিয়েছে, অতীতেও এই চীনা প্রতিষ্ঠান বহুবার গাফিলতির পরিচয় দিয়েছে, যার কারণে কর্তৃপক্ষ এই চীনা প্রতিষ্ঠানকে বহুবার সতর্ক করার পরেও তারা কর্তৃপক্ষের কথায় কান দেয়নি, কোন সতর্কতা অবলম্বন করেনি। শুধু তাই নয় যেখানে চুক্তি অনুযায়ী এই প্রকল্পটি শেষ করার কথা ছিল ছয় বছরে, সেখানে ১০ বছর পরেও প্রকল্পের মাত্র ৮০ ভাগ কাজ সমাপ্ত হয়েছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই চীনা প্রতিষ্ঠানটিকে কালো তালিকাভুক্ত করার এবং দায়ী সবার বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত আইনি এবং অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি নজরে নিয়ে সকলের প্রশংসা অর্জন করেছেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এই যে প্রতিষ্ঠানটি ৮০ ভাগ কাজ শেষ করেছে বিধায় এটিকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে ঠিকাদার নিযুক্ত করলে সমস্ত কাজ আবার নতুন করে করতে হতে পারে, যার জন্য বহু সময় নষ্ট হবে, বহু অর্থ অপচয় হবে। বিশেষজ্ঞরা এই মর্মে আরো মত প্রকাশ করেছেন যে এই ‘চীনা প্রতিষ্ঠানের কাজগুলো হয়েছে অত্যন্ত নিম্নমানের এবং ঝুঁকিপূর্ণ’। উত্তরার এই দুর্ঘটনার পরে চীনাদের বিশ্বাসযোগ্যতা বহুলাংশে নস্যাৎ হয়েছে, জনমনে তাদের লোভ এবং গাফিলতির কথা চাওর হচ্ছে, যার কারণে খোদ চীনা রাষ্ট্রদূতও একটি আপসমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। তদন্তে জানা গেছে চীনা প্রতিষ্ঠানটি পয়সা বাঁচানোর জন্য এমন সব লোক দিয়ে কাজ করিয়েছে, যাদের সংশ্লিষ্ট কাজে কোন যোগ্যতাই নেই। এমনকি যে ক্রেনটি দুর্ঘটনা ঘটিয়েছিল, সেটিও কোন ড্রাইভার চালাচ্ছিল না, চালাচ্ছিল একজন হেলপার। আরো জানা গেছে ক্রেনটি ২৬ বছরের পুরনো বিধায় এটি ছিল অকার্যকর এবং ঝুঁকিপূর্ণ। যেখানে ক্রেনটি ৫০ টন ওজনের গার্ডার বহন করতে সক্ষম, সেখানে সেটি দিয়ে ৭০ টন ওজনের গার্ডার তোলা হয়েছিল। পয়সা বাঁচানোর জন্য কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়নি। কম খরচে কাজ হাসিলের জন্য সংস্থাটি বঙ্গবন্ধু হত্যা দিবসে, যেটি আমাদের জাতীয় শোক দিবস, কাজ করে আমাদের জাতির জনকের প্রতি চরম অবমাননার পরিচয় দিয়েছে। চীনা প্রতিষ্ঠানের এই অমার্জনীয় গাফিলতি প্রমাণ করে তারা ভিন্ন দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তারা সম্পূর্ণ উদাসীন।

আজ এটি দিবালোকের মতো পরিস্কার যে, চীন টাকার বস্তা দেখিয়ে বিদেশি ভূমি দখল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে, যেভাবে অতীতে আলেকজান্ডার, চেঙ্গিস খান, তৈমুর লং প্রমুখরা বিদেশভূমি দখল করেছিল। তবে তারা টাকার বোঝা দেখিয়ে দখল করেনি, দখল করেছিল যুদ্ধের মাধ্যমে। যুদ্ধের মাধ্যমে ভূমি দখল আজ সম্ভব নয়। কিন্তু সেটি যখন সম্ভব ছিল তখন চীন যুদ্ধ করেই জিনজিয়াং অঞ্চল এবং তিব্বত দখল করে নিয়েছে। যারা আজ চীনের বিরুদ্ধে দরিদ্র এবং উন্নয়নশীল দেশসমূহকে সতর্ক করছে, তাদের বাণী অত্যন্ত যৌক্তিক। বহু গবেষণা এবং বিবেচনার পরেই তারা সবাইকে সতর্ক করছেন। উত্তরার ঘটনাও বিশেষজ্ঞদের সতর্কতার বাণী অক্ষরে অক্ষরে প্রমাণ করছে। সুতরাং চীন সম্পর্কে সাবধানতা অবলম্বন করা সকলেরই দায়িত্ব।