Published : 28 Jun 2018, 12:38 PM
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দুঃখ-দুর্দশা স্বচক্ষে দেখতে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ও বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম তিন দিনের সফরে আগামী ৩০ জুন বাংলাদেশে আসছেন। জাতিসংঘ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর বর্বরোচিত নির্যাতনকে ইতিহাসের অমানবিক জাতিগত নিধন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। তাঁরা বাংলাদেশে এসে তাদের নির্যাতনের কথা শুনবেন। ঈদ শেষ হয়েছে। প্রায় ১৪ লক্ষ রোহিঙ্গা মুসলিমদের সামনে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। ঝড়, বর্ষা, ঈদের সুখ-দুঃখ নিয়েই চলছে রোহিঙ্গাদের দিনকাল। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার এখনো জাতিগত নিধন ও সহিংসতা চালিয়ে যাচ্ছে। শুধু নির্যাতনের ধরন পাল্টেছে। রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও সরকারের নিধনযজ্ঞ সুস্পষ্ট গণহত্যা। ২৯ মে, ২০১৮ প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট তুলে ধরেছে যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ সত্ত্বেও রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার জাতিগত নিধন অব্যাহত রেখেছে। নির্যাতন, নিপীড়ন, হত্যা, ধর্ষণের শিকার হয়ে নতুন করে প্রায় আরো সাত লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে গেছে এবং মিয়ানমারের কোচিনে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের বিরুদ্ধে এখনো সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। গত বছর রাখাইনে রক্তপাত, হত্যা ও ধর্ষণযজ্ঞ চলেছিল। আর এখন সেখানে রয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের জোর করে অনাহারে রেখে, ভয়ভীতি দেখিয়ে ও ত্রাস সৃষ্টি করে মিয়ানমার তাদেরকে যা করছে তা বাংলাদেশে পালাতে বাধ্য করার ফন্দি ছাড়া আর কিছুই নয়। সম্প্রতি মিয়ানমার সেনাপ্রধান ধর্ম ও জাতিগত নিধন এবং সহিংসতা হিসাবে বিষয়টি স্বীকার করেননি যা গণহত্যাকে উসকে দেবার শামিল বলে প্রতীয়মান হয়। মিয়ানমার সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে প্রস্তুত বলে জানালেও তাদের সেনারা এখনো ঠিকই রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পালাতে বাধ্য করে যাচ্ছে। মিয়ানমার সরকার একে 'সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অভিযান' বললেও সুস্পষ্ট এটা জাতিগত ও ধর্মগত নিধন, সহিংসতা এবং গণহত্যা। ইউএনএইচসিআর প্রমাণ পেয়েছে যে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও স্থানীয় বৌদ্ধরা রোহিঙ্গা পুরুষদের হত্যা করেছে, শিশুদের জবাই করেছে, নারীদের ধর্ষণ করেছে, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ এবং লুটতরাজ চালিয়েছে। রাখাইন রাজ্যের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমান জনগোষ্ঠীকে নাগরিক বলেই স্বীকার করে না মিয়ানমার সরকার। ১৯৮২ সালের বিতর্কিত এক আইনে তাদের নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার কেড়ে নিয়েছে তারা। তাদের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। কদিন আগেও নিধনযজ্ঞের পর মিয়ানমার সরকার বলেছে, যারা মিয়ানমার ছেড়ে যাচ্ছে তারা নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে না পারলে ফিরতে পারবে না। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন এই ঘটনাকে জাতিগত নিধনযজ্ঞের 'পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ' হিসাবে আখ্যা দিয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, সেনা নির্যাতনের মুখে রোহিঙ্গারা পালিয়ে যাওয়ার পর তাদের ফেলে আসা গ্রাম ও জমিতে মিয়ানমার সেনা ঘাঁটি তৈরি করেছে। রোহিঙ্গা মুসলিমদের জমিগুলো ইজারা দিচ্ছে।
বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাতের ফলে স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহতসহ নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে প্রায় ১৩-১৪ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর। জাতিসংঘ শিশুবিষয়ক তহবিল ইউনিসেফ বলছে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়া প্রায় ৫ লাখ ২০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা শিশু মারাত্মক স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে। তেমনি মারাত্মক স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে সন্তানসম্ভবা নারী। বাংলাদেশে সাধারণত মার্চ থেকে জুলাই এবং সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর এই দুই মৌসুমে গ্রীষ্মকালীন জলোচ্ছ্বাস হয়ে থাকে। তবে সবচেয়ে বেশি ঝড় হয় মে ও অক্টোবর মাসে। মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গারা পাহাড়ের ওপর যেখানে আশ্রয় নিয়েছে সে এলাকা আগে থেকেই বন্যা, সাইক্লোন ও পাহাড়ধস বা ভূমিধসপ্রবণ এলাকা। বর্ষার পানিতে পাহাড়ের মাটি ধসে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। তাছাড়া বিশুদ্ধ পানির অভাব এবং ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়াবাহী মশার প্রকোপ তো আছেই। ইউনিসেফ বলছে, ইতিমধ্যে সৃষ্ট ভয়ানক মানবিক পরিস্থিতি আসন্ন ঘূর্ণিঝড় ও বর্ষা মৌসুমে আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে। কয়েক লাখ শিশু ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। অনিরাপদ খাবার পানি, অপর্যাপ্ত পয়োঃনিষ্কাশনব্যবস্থা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে কলেরা ও হেপাটাইটিস-ই'র প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে। এসব রোগে মৃত্যু হতে পারে গর্ভবতী নারী ও তার সন্তানের। এ ছাড়া যেখানে সেখানে জমে থাকা পানিতে ম্যালেরিয়ার জীবাণুবাহী মশার বিস্তারও ঘটতে পারে। বিবিসি বলছে, কক্সবাজারের ক্যাম্পে বসবাসরত লাখ লাখ রোহিঙ্গা আসন্ন বর্ষা মৌসুমে মারাত্মক বিপর্যয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যারা পাহাড়ের খাঁড়া ঢালে ঘর তুলেছেন, ভারী বৃষ্টিতে তাদের নিয়ে আছে ভূমিধসের ভয়। আর নিম্নাঞ্চলে যারা থাকছেন, তাদের আছে বন্যায় প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকি। অন্তত দেড় থেকে দুই লাখ রোহিঙ্গা এই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বর্ষাকাল যত ঘনিয়ে আসছে কক্সবাজারে বসবাসরত এই রোহিঙ্গাদের নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও তত বাড়ছে। কৃষিজমি, পাহাড় বন উজাড় করে নির্মিত এই বসতি বিপুল সংখ্যক মানুষের জন্যই এখন বিরাট ঝুঁকি তৈরি করেছে।
কক্সবাজার জেলার স্থানীয় আর্থ-সামাজিক অবস্থা এবং বৃহৎ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানবিক বিপর্যয়ের দৃশ্যপট বারবার চোখে ভাসছে। কক্সবাজার জেলায় স্থানীয় আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। বাজারে চাহিদা বৃদ্ধি, কৃষিজমিতে চাপসহ নানা কারণে কক্সবাজারে খাদ্য ঘাটতি, স্থানীয় বাজারে খাদ্যপণ্যের দামে ঘাটতির প্রভাব দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে সংকট মোকাবেলায় প্রণীত জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যানের সূত্র ধরে জাতিসংঘ জানিয়েছে, অল্প সময়ে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা আসায় কক্সবাজারে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রায় অস্বাভাবিক চাপ সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি উদ্যোগে কক্সবাজারে যে সামাজিক, অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছিল তা এখন ঝুঁকিতে রয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা শুরু হয়েছে। রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয় মানুষকে বাজার থেকে পণ্য সংগ্রহে সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। একদিকে স্থানীয় খাদ্য উৎপাদন কমেছে, অন্যদিকে বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এর ফলে স্থানীয় পরিবারগুলোর ক্রয়ক্ষমতা ও আর্থিক সম্ভাবনা কমেছে, অন্ন সংস্থানের ব্যয় বেড়েছে, দারিদ্র্যের চাপ আরো বাড়ছে দিনদিন। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অল্পবয়সী মেয়েদের দেশী-বিদেশীদের যৌন কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে । কক্সবাজার থেকে যৌন ব্যবসার জন্য রোহিঙ্গা মেয়ে ও শিশুদের পাচার করা হচ্ছে। দারিদ্র আর পতিতাবৃত্তির জালে যেন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অল্পবয়সী মেয়েরা আটকে গেছে। ধর্ষণের শিকার বেশ কিছু রোহিঙ্গা নারী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছে। জাতিসংঘ বলছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কারণে বাইরের মানুষের যাতায়াত বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীদের পণ্য পরিবহনের ব্যয় বেড়েছে, মুনাফার পরিমাণ কমতে শুরু করেছে, সড়কে যানজট, ভাড়া বৃদ্ধি এবং যাতায়াত ও পরিবহনে বিলম্ব হচ্ছে। প্রতিনিয়ত রোহিঙ্গার চাপ ও দেশ-বিদেশের মানুষের আগমনে বাজারে ক্রেতা বাড়ছে। এতে করে পণ্যের দামও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমনকি, স্থানীয় বাজারে খাদ্যপণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও খাবার প্রস্তুতের জন্য জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ কঠিন হয়ে পড়েছে। সমুদ্রতীরবর্তী কক্সবাজার, টেকনাফ ও উখিয়ার বেশির ভাগ মানুষ মাছ ধরে, মজুর খেটে, কৃষিকাজ, সুপারি-পানের চাষ, মাছ শুকিয়ে, ক্ষুদ্র ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করে। অদক্ষ শ্রমিকের সংখ্যাই বেশি। কৃষিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত। এই এলাকার মানুষের একটি বড় অংশ মাছ ধরার শ্রমিক, বন্দরের খালাসি, নির্মাণ ও অন্যান্য কাজে মিস্ত্রির সহযোগী হিসাবে কাজ করে থাকে। রোহিঙ্গারা আসার পর থেকে বর্তমানে এসব কাজের মজুরি কমে গেছে। জীবিকার তাগিদে ক্যাম্প থেকে বের হয়ে রোহিঙ্গারাও নির্মাণ, কৃষি, মত্স আহরণ ও হোটেল-রেস্তোরাঁয় মজুর হিসেবে শ্রম দিচ্ছে। শুধুমাত্র আয়ের আশায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিয়মিত মজুরির প্রায় অর্ধেক দামে তারা সস্তা শ্রম বিক্রি করছে। জাতিসংঘ মনে করছে, প্রাকৃতিক ও কৃষিসম্পদ কমে যাওয়া, শ্রমবাজারে প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়া এবং আসন্ন বর্ষা মৌসুমে ঝড় ও ভূমি ধসের ঘটনার জেরে কক্সবাজার জেলায় দারিদ্র্য বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এসব কারণে স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে রোহিঙ্গাদের প্রতি এক ধরনের ক্ষোভ তৈরি হতে শুরু হওয়াটা অমূলক নয়। এসবের একটি সুদূরপ্রসারি প্রভাব পার্বত্য চট্টগ্রাম বা চট্টগ্রামের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় পড়তে সময় লাগবে না। যার তাৎপর্যপূর্ণ একটি প্রভাব দেশের অর্থনীতিতে পড়তে পারে। তবে স্থানীয় জনগণ তাদেরকে যেভাবে আপন করে নিয়েছে অবশ্যই তা চোখে পড়ার মত। তবে এক শ্রেণির সুযোগ সন্ধানী মানুষ বিভিন্নভাবে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মাধ্যমে সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করছে।
বৌদ্ধ ধর্মের মূল মন্ত্র হচ্ছে অহিংসা। হৃদয়কে পবিত্র করাই এর মূল লক্ষ্য। মন পবিত্র ও নিষ্কলুষ হওয়া মানেই হৃদয়ের বুদ্ধত্ব। মিয়ানমারের সেনা এবং স্থানীয় বৌদ্ধরা রাখাইনে গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট চালানোসহ বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দিয়ে মূলত বৌদ্ধ ধর্মের মূলনীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। সম্পৃক্তবাদী বৌদ্ধ ধর্মের চৌদ্দটি মূলনীতি (শীল) বা নৈতিক শিক্ষার মধ্যে বলা হয়েছে: (৩য়) তোমার দৃষ্টিভঙ্গী গ্রহণ করার জন্য কাউকে কোনভাবেই জোরজবরদস্তি করো না, এমনকি সে যদি শিশুও হয়, হতে পারে পদস্থ ক্ষমতা, হুমকি, অর্থ, আক্রমণাত্মক প্রচারণা এমনকি শিক্ষাব্যবস্থার ব্যবহারের মাধ্যমে- কোনভাবেই না। বরং সহানুভূতিশীল ও সহমর্মিতামূলক আলাপ-আলোচনা এবং সহযোগিতার মাধ্যমে অন্যকে সংকীর্ণতা ও মৌলবাদী দৃষ্টিভঙ্গী পরিহার করতে সাহায্য কর। (৪র্থ) দুঃখ উপলব্ধি করার অবস্থা থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন রেখো না, কিংবা অন্যের দুঃখের সময় দেখেও না দেখার ভান করে থেকো না। ভব সংসারের জীবন মানে দুঃখময় এই চেতনাকে মন থেকে হারাতে দিও না। যারা কষ্টের মধ্যে দিন অতিবাহিত করছে তাদের সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগ, দেখা সাক্ষাত, কথাবার্তা বা ভাববিনিময় ইত্যাদি উপায়ে সহমর্মিতাবোধের সঙ্গী হওয়ার চেষ্টা কর। এভাবে নিজেকে এবং অন্যকে ভব সংসারের দুঃখময় বাস্তবতার ব্যাপারে সচেতন কর, জাগরিত কর । (৫ম) যেখানে লক্ষ কোটি মানুষ অনাহারে দিনাতিপাত করছে সেখানে তুমি কেবল নিজের জন্য সম্পদ পুঞ্জিভূত করো না। যশ-খ্যাতি, লাভ, সম্পদ এবং ইন্দ্রিয় সুখভোগকে জীবনের লক্ষ্য হিসেবে বানিও না। সহজ সরল জীবন যাপন কর এবং সময়, সামর্থ্য ও বস্তুগত বিষয়সম্পত্তি অভাবীদের সাথে বিনিময় কর। (৬ষ্ঠ) রাগ এবং ঘৃণা মনে পোষণ কর না। এগুলোকে চেতনে অঙ্কুর অবস্থায় ভেদ কর (ধ্বংস কর) এবং কুশল কর্মে রূপান্তর কর। যখনই এসব মনে উদিত হবে তখনই নাসারন্ধ্রে মনোযোগ নিবদ্ধ কর এবং এদের প্রকৃতি বুঝতে চেষ্টা কর। কে শুনবে কার কথা! উদ্দেশ্য যখন রোহিঙ্গাদের রাখাইন থেকে নির্মূল করা, তখন কে শুনবে তার ধর্মের মর্মকথা।
রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো না গেলে বা অবস্থান ও প্রত্যাবর্তনের টেকসই ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে কক্সবাজারসহ পার্বত্য এলাকায় প্রতি বছর যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয় তাতে পাহাড় ধসে একটি বড় মানবিক বিপর্যয় ঘটে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে। সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের পাশাপাশি রোহিঙ্গারা দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশে অবস্থান করলে পরিবেশগত, অর্থনৈতিক অনেক সমস্যা তৈরি হতে পারে যা ইতিমধ্যে সামনে আসতে শুরু করেছে। লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা এ দেশে আসার ফলে মানব ও মাদক পাচার, উগ্রবাদ, সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ, যৌনব্যবসা, নারী ও শিশু পাচারের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। রোহিঙ্গাদের এ দেশের মূল জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সমন্বিত হয়ে যাওয়ারও একটা প্রবণতা দেখা দিয়েছে । মিয়ানমারের সহিংস আচরণের পরিবর্তন না হওয়ায়, গণহত্যার বিষয়টি আজও স্বীকার না করায় বাকি রোহিঙ্গারাও যে এ দেশে চলে আসবে না, এ নিশ্চয়তা কে দেবে? মুখে বাংলা ভাষা থাকার কারণে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও সরকারের বক্তব্য হলো রোহিঙ্গারা বাঙালি। মুখের ভাষার পাশাপাশি সীমান্তবর্তী মানুষের সংস্কৃতিতে যে মিল থাকে সেটা অস্বীকার করার অপচেষ্টা করছে তারা। রোহিঙ্গা পুরুষদের হত্যা, শিশুদের জবাই, নারীদের ধর্ষণ, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ এবং লুটতরাজ আন্তর্জাতিক আদালতের বিচার্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আসন্ন বর্ষা মৌসুমে হঠাৎ করে বাংলাদেশ সরকার বা কোনো একক সংস্থার পক্ষে বিশাল এই জনগোষ্ঠীর মানবিক বিপর্যয় থেকে সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব নয় বলেই বিশ্ববাসীর এগিয়ে আসাটা দরকার। এগিয়ে আসা এবং সোচ্চার হওয়া দরকার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোরও। এ বিষয়ে বিশেষ করে চীনের সাথে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। মানবতার আদালতে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও সরকার অপরাধ করেছে যার ফল তাদেরকে একদিন ভোগ করতে হবে। সহানুভূতিশীল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সংবেদনশীল বাংলাদেশ সরকার এবং মানবতাবাদী বাঙালি জাতিকে বিশ্ববাসী দেখেছে। বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়ে যে মানবতাবাদী ও উদারতার পরিচয় দিয়েছে তা ইতিহাসে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। বাংলাদেশের মানুষ ধর্মভীরু হয়ে নিজ ধর্মকে যেমন পালন করে, তেমনি অন্যের ধর্মকে সম্মান করে অসাম্প্রদায়িক চেতনায়। বাঙালির কাছে মানবতা বড় ধর্ম ।