ঢাকার রাস্তায় আগে কাজ ছাড়া বের হতে ইচ্ছে করত না। এখন বের হলেই ভালো লাগে। যেদিকে তাকাই সেদিকেই দেখি জেন-জিদের কর্মযজ্ঞ।
Published : 12 Aug 2024, 07:09 PM
সেদিন অফিসের গাড়িতে বাসায় ফিরছিলাম। হঠাৎ গাড়ির গতিরোধ করা হলো। সামনে উঁকি দিয়ে দেখলাম, ১৪ বা ১৫ বছর বয়সী এক কিশোর হাতের ইশারায় আমাদের গাড়িকে অন্য লেনে যাবার অনুরোধ করছে। বোঝা গেল, আমাদের গাড়ি সঠিক লেনে নেই। অন্যান্য দিন রাস্তার মাঝ লেনে প্রচুর ব্যাটারিচালিত রিকশা দেখি। সেদিন থেকে আর দেখছিলাম না। কারণ, সব ধরনের রিকশাকে রাস্তার বাঁয়ে লেন করে দিয়েছেন তরুণরা; যারা গত কয়েকদিন শহরে ট্রাফিক পুলিশের অনুপস্থিতি আমাদের বুঝতে দেননি। ১১ অগাস্ট পর্যন্ত ওরাই রাস্তার ঝামেলা সামলিয়েছে। আজ ১২ অগাস্ট পুরো এক সপ্তাহ পরে রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ নেমেছে। তবে তাদের সঙ্গে আছেন তরুণরাও। ৫ অগাস্ট ঘটে যাওয়া গণঅভ্যুত্থানের পর পথে তো দূরের কথা, থানাগুলোতেও পুলিশের দেখা মেলেনি। গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতাকে হত্যা করে এবং ছাত্র-জনতা সম্মিলিত প্রতিরোধের মধ্যে নিজেরা মরে সাহস হারিয়ে ফেলেছে এই বাহিনীটি। আলোচনা হচ্ছে, পুলিশের পোশাক ও লোগো পরিবর্তনের।
রাস্তায় আজও তরুণরা আছেন, তবে যতটা না যানবাহন নিয়ন্ত্রণে, ওদের তারও বেশি দেখা গেছে রাস্তার পাশের দেয়ালগুলোর সামনে। ওরা ছবি আঁকছেন– জুলাই অভ্যুত্থানের, আবহমান বাংলার ইতিহাস-ঐতিহ্যের। কল্পনা চাকমাকে নিয়ে ছবি আঁকতে দেখা গেল গত কয়েকদিন ধরেই। সেই কল্পনা চাকমা– যিনি নিখোঁজ আছেন বহুকাল ধরে, পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়িদের অধিকার আন্দোলনের নেত্রী, তার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে, ঢাকায় বসবাসকারী পাহাড়ের জেন-জিরা। জেন-জিদের কেউ কেউ রাস্তা পরিষ্কার করছেন। পাড়া-মহল্লায় ডাকাত আতঙ্ক শুরু হলে রাত জেগে পাহারা দিয়েছেন।
রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালনরত জেন-জিদের দেখে যেমন মুগ্ধ হয়েছি, তেমনি তাদের ঘটানো দুয়েকটি ঘটনার কথা শুনে হতাশ হয়েছি। ৮ অগাষ্টের রাত ১০টার দিকে সড়কে দায়িত্বপালনরত এক ছাত্রকর্মী উল্টোপথে যাওয়ায় একজন রিকশাচালকের গায়ে হাত তুলতে গিয়েছিলেন বলে জানলাম। ৯ অগাষ্টের রাত আটটার পর পান্থপথ সিগন্যালের কাছে একটি মিষ্টির দোকান থেকে আরেক ছাত্রকর্মীকে ফাও খেতে দেখার কথা শুনেছি। দুটি ঘটনাই শুনেছি এক বড় ভাইয়ের কাছে। প্রথম ঘটনাটির সময় তিনি নিজেই ছিলেন ওই রিকশার আরোহী এবং রিকশাচালককে ইউ-টার্ন নিয়ে গলিতে ঢুকতে বলেছিলেন। কিন্তু দীর্ঘদিনের অভ্যাসে পথ শর্টকার্ট করার জন্য রিকশাচালক উল্টোপথে যেতে শুরু করেন। আমাদের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা বলে ট্রাফিক পুলিশের হাতে সবচেয়ে নিগৃহীত মানুষগুলো হলেন রিকশাচালক। তাদের কাউকে একজন ছাত্রকর্মী মারতে উদ্যত হয়েছিল শুনে মন খারাপ হয়েছে। ওই বড় ভাইটিই পরের দিন পান্থপথে একটি মিষ্টির দোকানে গিয়েছিলেন, তার সঙ্গে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বন্ধুর সঙ্গে। ভাইটি বলছিলেন, বিনেপয়সায় মিষ্টি নিয়ে যাওয়া ওই ছেলেটি যখন নিজেকে ‘ছাত্র-ছাত্র’ বলে পরিচয় দিচ্ছিলেন, তার মনে হচ্ছিল, ‘ও বলছে ছাত্রলীগ, ছাত্রলীগ’। সড়কে ছাত্র-আন্দোলনের কর্মীরা থাকবেন কিনা, সেটা তাদের সিদ্ধান্তের বিষয়। তবে থাকলে এখনই সেটা সুপরিকল্পিত-সুসংহত হতে হবে, যেন আবার ছাত্রলীগের মতো কোনো কিছু জন্মাবার সুযোগ না পায়। তারা স্বেচ্ছাশ্রমে সড়কে কাজ করবেন, নাকি তাদেরকে খণ্ডকালীন কর্মী হিসেবে কাজ দেওয়া হবে, সেই সিদ্ধান্ত নেবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তবে কে কখন কোন সড়কে দায়িত্ব পালন করছেন, সেটা জানা থাকতে হবে এবং সেটা জানা থাকলেই ফাও খাওয়ার মতো ঘটনা কে ঘটিয়েছেন, তা জানা সহজ হবে। আমরা জানি, সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে বিকেল পর্যন্ত অনাহারে থেকে যানবাহন সামলানোর কাজ করেছেন শিক্ষার্থীদের অনেকেই। তাদের জন্য সাধারণ মানুষ খাবার নিয়ে গেছেন– এমন অনেক ঘটনাও দেখেছি। কিন্তু দুয়েকটি অঘটনই এই সব ত্যাগের গায়ে কালি ছেটাবার জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে, যে সরকারটি গঠিত হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এবং ওই সরকারে রয়েছেন আন্দোলনের দুই নেতা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ।
নবগঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে যখন সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদকে শপথ নিতে দেখলাম, তখন আনন্দে মনটা ভরে গেল। কেনই বা খুশি হব না? তারা যে আমাদের প্রজন্মরেই প্রতিনিধি! কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হয়ে স্বৈরাচার পতনের আন্দোলন; প্রতিটি ক্ষেত্রেই তারা রেখেছেন সাফল্যের স্বাক্ষর। বিদেশী গণমাধ্যম এ বিপ্লবকে বলছে ‘জেন-জি বিপ্লব’। কারণ, সারা বিশ্বে জেন-জিদের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ও সফল বিপ্লব এটাই।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ও আসিফ
কয়েকদিন যাবৎ এই তারুণ্যকে নিয়েই আলোচনা আসছে ঘুরেফিরে। কারণ, এই জেন-জিরা সর্বশেষ একমাসে যা যা করে দেখিয়েছেন, তা এক কথায় অভূতপূর্ব। জেন-জিরা যেহেতু ইন্টারনেট-পরবর্তী প্রধান জেনারেশন, ওদের নিয়ে আগের জেনারেশনের একটা হতাশা ছিল। সবার ধারণা ছিল এমন– এরা কোনো কাজের না, রাজনীতিবিমুখ ও অসামাজিক। সে প্রজন্মই যে এমন আন্দোলন করে সরকার পতন ঘটাবে, এটা অভাবনীয় ছিল। আমার ওঠাবসা ও কাজ এই জেন-জিকে ঘিরেই। তাই কৌতূহলের জায়গা থেকে তাদের সম্পর্কে একটু জানার চেষ্টা করলাম।
ব্রিটানিকা বলছে, বিগত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে এবং বর্তমান শতাব্দীর প্রথম দশকের প্রথম দিকে যাদের জন্ম তাদের বোঝাতে ‘জেনারেশন জেড’ ব্যবহার করা হয়। অতীতের বুমার্স প্রজন্মের সঙ্গে এ প্রজন্মের ‘জেড’ মিশে গিয়ে নাম ধারণ করেছে ‘জুমার্স’। জুমার্সদের সংজ্ঞা আরও নির্দিষ্ট করে দিয়েছে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস। তাদের মতে, ১৯৯৭ সাল থেকে ২০১২ সালের মধ্যে যাদের জন্ম তারাই জেনারেশন জেড বা জেন-জি হিসেবে গণ্য হবেন। সে অনুযায়ী তাদের বয়স ১২ থেকে ২৭ হবার কথা।
এ বছর বাংলাদেশে জেন-জিদের নিয়ে আলোচনার শুরু বৈষম্যবিরোধী কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের মুখে সরকারি চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে (৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত) কোটাপদ্ধতি বাতিল করে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এই পরিপত্রের বৈধতা নিয়ে রিট করেন চাকরিপ্রত্যাশী ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাত সন্তান। চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাইকোর্ট নির্দেশনাসহ ওই পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে গত ৫ জুন রায় ঘোষণা করেন। জুলাইয়ের প্রথম দিকে গড়ে ওঠা এ আন্দোলনের সূচনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন থেকে ফিরে গত ১৪ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে সাংবাদিকরা তার কাছে কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে মতামত জানতে চাইলে তিনি উত্তরে বলেন, “মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরা চাকরি পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিপুতিরা পাবে?”
শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যে ফুঁসে ওঠে জুমার্স প্রজন্ম। বিক্ষোভ করতে শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর, সিলেটের শাহজালাল ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মিছিলকারীরা আবাসিক হলগুলো থেকে বেরিয়ে এসে ‘তুমি কে আমি কে– রাজাকার রাজাকার’। রাত না যেতেই ‘তুমি কে আমি কে– রাজাকার রাজাকার’ স্লোগানে যুক্ত হয়, ‘কে বলেছে কে বলেছে– স্বৈরাচার স্বৈরাচার’। ২০১৪ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত দুইবার কার্যকর বিরোধীদলবিহীন নির্বাচনে এবং একবার ভোট ডাকাতি করে সরকার গঠন করা হলেও এই প্রথম শেখ হাসিনার সরকার স্বৈরাচার অভিধা পেল। পরের দিন আন্দোলন আরো বেগবান হয়, স্লোগান ওঠে, ‘চাইতে গেলাম অধিকার– হয়ে গেলাম রাজাকার’ এবং ‘কোটা নয় মেধা– মেধা মেধা’, এ ধরনের স্লোগান দিয়ে মিছিল বের করতে থাকে।
শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি কর্ণপাত না করে সরকারের পক্ষ থেকে আসতে থাকে একের পর উস্কানিমূলক বক্তব্য। বন্ধ করে দেওয়া হয় ইন্টারনেট। ইন্টারনেট না থাকায় অচল হয়ে যায় ইলেকট্রনিক মিডিয়া। চেপে ধরা হয় সব গণমাধ্যমের টুঁটি। সারাদেশে জারি হয় অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ। কিন্তু এ প্রজন্মকে দমানো কি এত সহজ! বিক্ষোভে স্কুল, কলেজ, সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একযোগে নেমে আসে রাস্তায়। শিক্ষার্থীদের দমনে রাষ্ট্রযন্ত্রের সর্বোচ্চ ব্যবহার দৃশ্যমান হয়। রাস্তায় সারি সারি এপিসি, ট্যাংক চলতে দেখে বাংলাদেশ। ট্যাংকের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলে ক্ষমতার দম্ভ। আন্দোলন চরম আকার ধারণ করলে শিক্ষার্থীদের উপর নির্বিচারে গুলি চলে। আবু সাঈদ আর মীর মুগ্ধদের মতো শহীদের তালিকা দীর্ঘ হয়।
৩০ থেকে ৭ ভাগে কোটা নামিয়ে এনে রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট; প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। কিন্তু ততদিনে অনেক জল গড়িয়ে গেছে। এ পর্যায়ে এসে শিক্ষার্থী হত্যার বিচার, উস্কানিদাতা ও দায়ী মন্ত্রীদের অপসারণসহ ৯ দফা দাবি নিয়ে রাস্তায় নামে শিক্ষার্থীরা। সরকারের পক্ষ থেকে পাওয়া যায় না কোনো ইতিবাচক সাড়া। চাপের মুখে আবু সাঈদের বুকে গুলি চালানো পুলিশ সদস্যকে প্রায় ১৫ দিন পর প্রত্যাহার করে মুলো ঝোলানো হয় জেন-জিদের সামনে। এর বাইরে কোনো দাবি মানা হয়নি; পদত্যাগ করেননি কোনো মন্ত্রী। ডিবি কার্যালয়ে আন্দোলনের সমন্বয়কদের নিয়ে আটকে রাখা হয়। জোর করে ক্যামেরার সামনে পড়ানো হয় আন্দোলন প্রত্যাহারের স্ক্রিপ্ট। হিতে বিপরীত হয়। প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দ্রোহযাত্রায় জড়ো হয় হাজারো ছাত্র-জনতা।
কোনো দাবি আদায় না হওয়ায় ৯ দফা রূপ নেয় ১ দফায়। ৫ অগাস্টের জন্য ’লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন সমন্বয়করা। শহীদ মিনারে লক্ষাধিক জনতার উপস্থিতি দেখে এবং ১ দফার কথা শুনে কেঁপে ওঠে ক্ষমতার মসনদ। বিক্ষোভ দমনে আবারও জারি হয় কারফিউ। গণভবনের চারপাশে আরোপ করা হয় অন্তত ৫ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। যে শিক্ষার্থীরা বুলেটকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাল, তাদেরকে কাঁটাতার আর কারফিউর চোখ রাঙানি দিয়ে ঘরে রাখার ব্যর্থ চেষ্টা দেখল পুরো জাতি।
জেন-জিদের সরকার পতনের আন্দোলন সফল হবার পর অনেকের সঙ্গেই কথা বলেছি। তারা অনেকে ৫ অগাস্ট লংমার্চের দিন সকালে না খেয়েই বেরিয়ে গিয়েছেন। শপথ নিয়ে বের হয়েছেন এটা বলে যে, স্বৈরাচারের পতন না ঘটিয়ে ঘরে ফিরবেন না এবং দানাপানি মুখে নিবেন না। অবশেষে তারা সফল হলেন।
২০১৮ সালে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী হিসেবে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন, তারাই এবারের আন্দোলন করলেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী হিসেবে। ফলে স্পষ্টতই বাংলাদেশে জেন-জির উত্থান কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়। একটি বিবর্তনের মধ্য দিয়ে আজকের পর্যায়ে পৌঁছেছেন এই জুমার্সরা।
সরকারের পতন ঘটিয়েই তারা ঘরে বসে থাকেননি। যখন দেখলেন রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ নেই, তখন তারাই রাস্তার শৃঙ্খলা ফেরাতে কাজে নেমে পড়লেন। আন্দোলনের সময় ফেসবুক-মেসেঞ্জারে যে গ্রুপগুলো খোলা হয়েছিল, সেগুলো বন্ধ না করে সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবার কাজে লাগানো হলো। বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে কাজ ভাগ করে নিলেন তারা।
কেউ রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব নিলেন; কেউ আন্দোলনের স্মৃতি ধরে রাখতে ও সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য ঢাকার দেয়ালগুলোতে গ্রাফিতি তৈরিতে যোগ দিলেন। রাস্তার ময়লা পরিষ্কার করার কাজে লেগে পড়লেন দল বেঁধে। সাধারণ মানুষও বসে থাকেননি। যেভাবে তারা পেরেছেন, নিজের জায়গা থেকে শিক্ষার্থীদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন। কেউ রং-তুলি কিনে দিয়েছেন; কেউ পলিথিনের মধ্যে অনেকগুলো খাবার পানির বোতল নিয়ে এগিয়ে এসেছেন; ছাতা কিনে দিয়েছেন কেউ; কেউবা আবার ময়লা পরিষ্কার করতে ঝাড়ু কিনে দিয়েছেন।
নিরাপত্তাহীণতার কারণ দেখিয়ে পুলিশ সদস্যরা থানা থেকে সরে পড়লে রাতের বেলা রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে ডাকাতির খবর আসে। জুমার্সরা রাতে এলাকাভিত্তিক দলে দলে ভাগ হয়ে নেমে পড়লেন ডাকাত খুঁজতে। রাত ১টার সময় পাশের গলি থেকে চিৎকার শুনি– ‘আউট!’। ডাকাতের খোঁজে যারা নেমেছেন, তারা ক্রিকেট খেলছেন। দিনের বেলা তারা রাস্তা সামলান, রাতে খোঁজেন ডাকাত।
ঢাকার রাস্তায় আগে কাজ ছাড়া বের হতে ইচ্ছে করত না। এখন বের হলেই ভালো লাগে। যেদিকে তাকাই সেদিকেই দেখি জেন-জিদের কর্মযজ্ঞ। কী চমৎকার এক দৃশ্য! এ দৃশ্য চলতে থাকুক... চলতেই থাকুক।